জুমবাংলা ডেস্ক : মানুষের নানা কর্মকাণ্ডের কারণে অরণ্য ও বন্য প্রাণীরা আছে হুমকিতে। তবে গবেষণায় দেখা গেছে, জায়গা এবং সময় দেওয়া গেলে বিলুপ্তির ঝুঁকিতে থাকা বন্য প্রাণী এবং গাছপালাও হারানো অবস্থা পুনরুদ্ধার করতে পারে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন অবলম্বনে মানুষের ছেড়ে যাওয়া এমন ১০টি জায়গার গল্প বলব আজ; যেগুলোর দখল নিয়ে নিয়েছে বুনো প্রকৃতি।
রিওয়াইল্ডিং ইউরোপ নামের একটি সংগঠনের ২০২২ সালের এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ইউরোপের অনেক জাতের পাখি এবং স্তন্যপায়ী প্রাণীর এভাবে প্রত্যাবর্তনের ঘটনা ঘটেছে বিভিন্ন জায়গায়।
তা প্রোম, কম্বোডিয়া
খেমার রাজ্যের প্রাচীন রাজধানী অ্যাংকরের পূর্বে তা প্রোম মন্দিরের অবস্থান। ১২ শতকের শেষের দিকে একটি বৌদ্ধমন্দির এবং বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে নির্মিত হয় এটি। এ সময় ১২ হাজার ৫০০ জনের বেশি মানুষ মন্দিরের চৌহদ্দিতে বাস করতেন। আশপাশের গ্রামগুলোতে বাস করতেন আরও ৮০ হাজার মানুষ। মোটামুটি ৩০০ বছর পরে রাজধানী অ্যাংকর থেকে সরিয়ে নেওয়া হলে মন্দির এবং আশপাশের অরণ্য এলাকা পরিত্যক্ত হয়।
তারপর থেকে মন্দিরটিতে মানুষের আনাগোনা ছিল না বললেই চলে। ফলে ভবনটিতে নানা ধরনের গাছ বেড়ে ওঠে। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত বিশাল ডুমুর, বট আর কাপক (তুলাজাতীয় গাছ) গাছ। যেগুলোর শিকড় ঢেকে দিয়েছে মন্দিরের বিভিন্ন দেয়াল। সেই সঙ্গে আশপাশের এলাকার দখল নিয়েছে গাছপালা, হাজির হয়েছে নানা প্রজাতির বন্য প্রাণী।
এখানকার অরণ্যে এখন মায়া হরিণ এবং বুনো শূকরের পাশাপাশি দেখা মেলে ভোঁদড়, ধনেশ পাখি এবং সবুজ ময়ূর বা ইন্দোনেশীয় ময়ূরের মতো প্রাণীদেরও
হতোয়ান, চীন
শেংশান দ্বীপের হতোয়ানে একসময় ছিল তিন হাজারের বেশি অধিবাসী। তবে মূলভূমির সঙ্গে দূরত্বের কারণে নানা ধরনের সমস্যায় পড়তে হতো গ্রামবাসীকে। একজন-দুজন করে গ্রাম ছাড়তে ছাড়তে ২০০২ সালে পুরোপুরি পরিত্যক্ত হয় জায়গাটি। তারপর থেকেই ধীরে ধীরে প্রকৃতি নিজের মতো করে একে সাজাতে থাকে।
এখানে মোটামুটি যা কিছু আছে, সবকিছুকেই ঢেকে দিয়েছে সবুজ লতাগাছ। স্বাভাবিকভাবেই বন্য প্রাণীদের বিচরণের প্রিয় জায়গা হয়ে উঠেছে এটি। এখন গ্রামটি দেখতে পর্যটকেরা যাচ্ছেন। স্থানীয় সংবাদপত্রের দেওয়া তথ্য অনুসারে, ২০২১ সালে সেখানে পদধূলি দিয়েছেন ৯০ হাজার পর্যটক।
মানগাপুরুয়া উপত্যকা, নিউ জিল্যান্ড
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর যুদ্ধফেরত সৈনিকদের মানগাপুরুয়া ভ্যালিতে থাকার প্রস্তাব দেওয়া হয়। ১৯১৯ সালে গোড়াপত্তনের পর কোনো এক সময় ৪০ জন সৈনিক এবং তাঁদের পরিবারের বসবাস ছিল জায়গাটিতে। কিন্তু দুর্গমতা এবং জমি চাষাবাদের উপযোগী না হওয়ায় ১৯৪০-র দশকের মাঝামাঝিতে পুরোপুরি পরিত্যক্ত হয় এটি। আর এটাই জায়গাটিতে অরণ্যের পুনর্দখল দেওয়ার এবং বন্য প্রাণীদের ফিরে আসার সুযোগ করে দেয়।
এখন এটি হুয়ানগানুই জাতীয় উদ্যানের অংশ। এই উদ্যান কিউই পাখিসহ নানা জাতের পাখির জন্য বিখ্যাত।
এস এস ইয়নগালা, অস্ট্রেলিয়া
টাইটানিক ডুবির ঘটনার ঠিক এক বছর আগে ১৯১১ সালে সাগরে আরেক বড় ট্র্যাজেডির জন্ম হয়। গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ এলাকায় ঘূর্ণিঝড়ে ডুবে যায় এস এস ইয়ানগালা নামের একটি জাহাজ। এর ১২২ জন যাত্রী এবং নাবিক নিখোঁজ হন এর সঙ্গে। ১৯৫৮ সালে সাগরতলে খোঁজ মেলে সাগরটির।
বর্তমানে ১০৯ মিটার ৩৫৭ ফুট দৈর্ঘ্যের জাহাজটির ধ্বংসাবশেষের দখল নিয়েছে উজ্জ্বল রঙের প্রবাল। এখানে বাস বুল শার্ক, মার্বল রেসহ কয়েক শ প্রজাতির সামুদ্রিক প্রাণীর।
ইলহা দ্য কুয়েইমাদা গ্র্যান্ডে, ব্রাজিল
সাও পাওলোর উপকূল থেকে ৯০ মাইল দূরে অবস্থিত ইলহা দ্য কুয়েইমাদা গ্র্যান্ডে দ্বীপটিকে প্রথম দেখায় অসাধারণ সুন্দর একটি জায়গা বলেই মনে হবে আপনার। তবে বেশির ভাগ ব্রাজিলিয়ান এ দ্বীপের কথা জানলেও সেখানে যাওয়ার কথা কল্পনাও করতে পারেন না। কারণ, জঙ্গলে ঢাকা দ্বীপে ২০০০-৪০০০টি সোনালি ল্যাঞ্চহেড ভাইপার সাপের আস্তানা। গোটা পৃথিবীর সবচেয়ে বিষধর সাপগুলোর একটি হিসেবে বিবেচনা করা হয় একে। আর এই সাপগুলোকে পাবেন কেবল এ দ্বীপেই। এই দ্বীপের পরিচিতিই হয়ে গেছে স্নেক আইল্যান্ড বা সাপের দ্বীপ নামে। এর পাশাপাশি দ্বীপে আছে বাদুড়, নানা ধরনের সরীসৃপ এবং সামুদ্রিক পাখি।
ইউনিভার্সিটি অব সাও পাওলোর অধ্যাপক মার্সিয়ো মার্তিনস সিএনএনকে বলেন, দ্বীপটি একসময় মূল ভূমির অংশ ছিল। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ওঠানামার কারণে ইলহা দ্য কুয়েইমাদা গ্র্যান্ডে আনুমানিক ১১ হাজার বছর আগে পুরোপুরি সাগরের পানিবেষ্টিত হয়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে মূলভুমি থেকে। স্বাভাবিকভাবেই এখান থেকে অন্য কোথাও যেতে না পারা সোনালি ল্যাঞ্চহেড ভাইপাররা এই পরিবেশে মানিয়ে নেয়।
বিশ শতকের গোড়ার দিকে দ্বীপটিতে ৩-৪ জন বাতিঘর রক্ষক এবং নাবিক বাস করতেন। ১৯২০-র দশক থেকে পুরোপুরি পরিত্যক্ত হয়। এখানকার বিষধর সাপের উপস্থিতি এবং জীববৈচিত্র্য রক্ষার জন্য জায়গাটিতে অনুমতি ছাড়া প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আছে।
ডিমিলিটারাইজড জোন, কোরিয়া
কোরীয় যুদ্ধের সমাপ্তির পর সত্তর বছর ধরে, উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়াকে বিভক্তকারী ১৬০ মাইলের ডিমিলিটারাইজড জোন (ডিএমজি) নো-ম্যানস ল্যান্ড হিসেবেই আছে। আর তাই ৬ হাজারের বেশি উদ্ভিদ এবং প্রাণী প্রজাতির বাস এখন সেখানে। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ইকোলজির দেওয়া তথ্য অনুসারে কোরিয়ার বিপন্ন বন্য প্রাণীদের মধ্যে শতকরা ৩৮ শতাংশ পাওয়া যায় এই এলাকায়।
আল মাদাম, সংযুক্ত আরব আমিরাত
যখন প্রকৃতি কর্তৃত্ব ফলাচ্ছে, এমন কোনো জায়গার চিন্তা মাথায় আসবে সবুজের আধিপত্যের কথাই ভাববেন। তবে আল মাদাম গ্রামে প্রকৃতি সেজেছে ভিন্নভাবে।
দুবাই থেকে ৭০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত গ্রামটির গোড়াপত্তন হয় ১৯৭০-র দশকে, বেদুইনদের আবাস হিসেবে। দুই দশক পরেই এটি পরিত্যক্ত হয়। আর এখন সেখানকার দালানকোঠা থেকে শুরু করে সবকিছুর দখল নিচ্ছে মরুভূমি আর তার বালু। এখানে এখন ঘুরে বেড়ায় মরুভূমিতে বিচরণ করা বিভিন্ন বন্য প্রাণী।
ফুকুশিমা, জাপান
২০১১ সালের ভূমিকম্প এবং সুনামিতে উত্তর জাপানের ফুকুশিমা পাওয়ার প্ল্যান্টে বড় ধরনের পারমাণবিক বিপর্যয় হয়। তারপর জাপান সরকার গড়ে তোলে ১২.৫ মাইলের ফুকুশিমা এক্সক্লুসন জোন। এখানকার দেড় লাখের বেশি মানুষকে বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য করা হয়। তবে পরে ধীরে ধীরে এখানকার কোনো কোনো শহর বা গ্রামে মানুষকে ফিরে আসতে উৎসাহিত করা হয়। কিন্তু কিছু এলাকায় মানুষের বসবাসের নিষেধাজ্ঞা রয়েই গেছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বনবিদ্যা ও প্রাকৃতিক সম্পদ বিভাগের অধ্যাপক জেমস বিসলে ২০১৬ সালে এই এলাকার বিপুল প্রাণবৈচিত্র্যের কথা বলেন। শুধু তা-ই নয়, তিনি মন্তব্য করেন, বন্য শূকরের সংখ্যা এত বেশি যে কিছু এলাকায় এদের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ জরুরি হয়ে পড়েছে। এই অঞ্চলে বসত গাড়া অন্যান্য প্রাণীর মধ্যে রয়েছে বন ছাগল, লাল শিয়াল প্রভৃতি।
সেন্ট কিলডা, স্কটল্যান্ড
উঁচু সব পাথুরে পাহাড়, পরিষ্কার জল এবং পানির তলের গুহা—সবকিছু মিলিয়ে সেন্ট কিল্ডা দ্বীপ দেখার মতো এক জায়গা। ১৯৩০ সালে খাদ্যঘাটতি, চিকিৎসাসেবা পৌঁছানো কঠিন হওয়া এবং জনসংখ্যা হ্রাসের কারণে, অবশিষ্ট ৩৬ জন দ্বীপবাসীকে মূল ভূখণ্ডে পুনর্বাসনের জন্য অনুরোধ করা হয়। তারপর থেকে মানুষের বসতি না থাকায় সেন্ট কিলডা দ্বীপ নানা ধরনের বন্য প্রাণীর চমৎকার আশ্রয়ে পরিণত হয়েছে। এই এলাকা প্রায় ১০ লাখ সামুদ্রিক পাখির আবাসস্থল। এদের মধ্যে আছে যুক্তরাজ্যের আটলান্টিক পাফিনদের সবচেয়ে বড় কলোনিও। জায়গাটি ইউনেসকো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ।
স্টেক রক ফোর্ট, ওয়েলশ
পশ্চিম ওয়েলসের পেমব্রোকেশায়ার উপকূলে অবস্থিত স্টেক রক ফোর্ট দুর্গটি সমুদ্রপথে আক্রমণ থেকে রক্ষা করার জন্য ১৮৫০-র দশকে নির্মিত হয়। তখন এখানে বেশ কিছু সৈনিকের পাশাপাশি যথেষ্ট গোলাবারুদ ছিল। কিন্তু ধীরে ধীরে এর প্রয়োজনীয়তা কমে যায়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় অল্প কিছু সৈন্য দ্বারা এটি পরিচালিত হয়। অবশেষে ১৯২৯ সালে এখান থেকে সব সৈনিক ও অস্ত্র সরিয়ে নেওয়া হয়।
প্রায় ১০০ বছর ধরে মানুষের স্পর্শ না থাকায় দুর্গটির দখল ধীরে ধীরে নিয়ে নেয় নানা প্রজাতির উদ্ভিদ ও বন্য প্রাণীরা। দুর্গের বর্তমান রক্ষক নিকোলাস মুয়েলার সিএনএনকে জানান, বাদামগাছ জন্মায় এখানে, নানা ধরনের সা
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।