জুমবাংলা ডেস্ক : এমন দেশ আছে যেখানে দাবা খেলা স্কুল থেকেই বাধ্যতামূলক, যেখানে দাবাড়ুরাই দেশের সবচেয়ে বড় তারকা। ইউরোপের আর্মেনিয়া এমনই এক দেশ যেখানে ছয় বছরের ওপর সব শিশুকেই দাবা খেলা শেখানো হয়।
কর্তৃপক্ষ মনে করে থাকেন ছোটবেলা থেকে দাবা খেললে শিশুরা একটা ‘বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশের’ মধ্য দিয়ে যাবে যা ভবিষ্যতে চিন্তাভাবনার ক্ষেত্রে কাজে দেবে।
যেকোনো বিষয়ে বিশ্লেষণ করতে শিশুটি একটা ভাবনার স্তর পার হবে, যা তাকে স্পষ্ট ধারণা পেতে সাহায্য করবে বলেই মনে করেন আর্মেনিয়ানরা।
আর্মেনিয়ায় এখন তিন হাজারেরও বেশি প্রশিক্ষিত দাবা শিক্ষক আছেন।
আর্মেনিয়ায় দাবা রীতিমতো উদযাপন করে খেলা হয়, এই দেশের দাবাড়ুরা আক্ষরিক অর্থেই বড় তারকা, গ্র্যান্ডমাস্টারদের জন্য বাড়তি সম্মান এবং শহরের বড় বড় স্ক্রিনে চ্যাম্পিয়নশিপের ম্যাচগুলো দেখানো হয়, সাধারণ মানুষ ট্রাফিকে বসে বা কেবল দাবা খেলা দেখার উদ্দেশ্যেই সেসব স্ক্রিনে হা হয়ে তাকিয়ে থাকেন, উত্তেজিত হন, প্রতিপক্ষকে হারাতে পারলে আনন্দ প্রকাশ করেন, বড় করে উদযাপন করেন সব জয়- যেটা সাধারণত দেখা যায় ফুটবল খেলা নিয়ে, তা দাবার ক্ষেত্রেও হয় আর্মেনিয়ায়।
মাত্র ৩০ লাখের মতো জনসংখ্যা আর্মেনিয়ায়। কিন্তু এই দেশ থেকে যেসব দাবাড়ু উঠে আসছেন তারা হারাচ্ছেন রাশিয়া, চীন, যুক্তরাষ্ট্রর মতো দেশের দাবাড়ুদের।
এমনকি আর্মেনিয়ার জাতীয় দাবাড়ু দল ইন্টারন্যাশনাল চেস অলিম্পিয়াডে তিনবার বিজয়ী- ২০০৬, ২০০৮, ২০১২ সালে।
দাবা কৌশলী হতে শেখায়
দাবার পিছনে আর্মেনিয়া বছরে ১৫ লাখ ডলার খরচ করে থাকে।
শিশুদের শিক্ষা ও মানসিক বিকাশের অংশ হিসেবেও দাবায় অর্থ বিনিয়োগ করে দেশটি।
কিন্তু এটা কি আদতেই কাজে দেয়? দাবা খেলে শিশুদের বিকাশ ঘটে? গবেষণা বলছে কিছুটা হলেও ঘটে।
যুক্তরাষ্ট্রের ড. স্টুয়ার্ট মারগুলিস দুই বছর ধরে একটি গবেষণা করেছেন। তাতে দেখেছেন, দাবা খেলা যারা শেখেন তাদের রিডিং টেস্টের স্কোর ভালো আসে, স্কুলে রিডিংয়ের পারফরম্যান্সও ভালো হয়।
অধ্যাপক পিটার ডওভার্ন যিনি একজন দাবাড়ুও বটে, তার গবেষণাতেও উঠে এসেছে দাবা খেললে আইকিউ স্কোর বাড়ে। আইকিউ হলো বুদ্ধিবৃত্তিক পর্যায় পরিমাপ করার একটা মাপকাঠি।
ডওভার্নের গবেষণায় পাওয়া গেছে, দাবাড়ুরা সমস্যার সমাধান করতে পারেন, তাদের স্মৃতিশক্তি তুলনামূলক ভালো এবং সৃজনশীল চিন্তার দিক থেকেও এগিয়ে থাকেন দাবাড়ুদের অনেকেই।
দাবা সামাজিকতা শেখায়
ব্রিটেনের চেজ ইন স্কুল অ্যান্ড কমিউনিটিজের সাবেক প্রধান নির্বাহী ম্যালকম পেইন ২০১১ সালে দেখেছিলেন স্কুল পর্যায়ে বাচ্চাদের মধ্যে দাবার ইতিবাচক প্রভাব আছে।
‘এটা শুধু চিন্তার গভীরতা, স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি, হিসাবনিকাশ ও মনোযোগ আনতেই সাহায্য করে না, এটা বাচ্চাদের নিজের দায়িত্ব নিতেও শেখায়।’
‘শিশুদের সামাজিক আচরণেও বেশ ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে সাহায্য করে দাবা। বাচ্চারা খেলা শুরুর আগে হাত মেলায়, যদিও ক্লাসের দাবা খেলায় পিনপতন নীরবতা থাকে না। তবু একটা শৃঙ্খলা বজায় রাখতে শেখে বাচ্চারা।’
সিএসসি- এর সাবেক প্রধান নির্বাহী বলেন, ‘এটা শুধু অ্যাকাডেমিকদের খেলা নয় এটাও প্রমাণ হচ্ছে ধীরে ধীরে। দাবা একটা বৈশ্বিক খেলা। সব পর্যায়েই এটা খেলা সম্ভব।’
দাবা সামাজিক ভেদাভেদ মেটাতে সাহায্য করে
মাত্র চার বছর বয়সী কেউ ১০৪ বছর বয়সীদের বিপক্ষে খেলতে পারে। কেউ একজন যিনি হাঁটতে পারেন না, তিনি শারীরিকভাবে শক্তিশালী কাউকে হারাতে পারেন।
ম্যালকম পেইনের মতে, একটা বাচ্চা যাকে তেমন গুরুত্ব দেয়া হয় না শারীরিক নানা কারণে, সেই হয়তো দাবায় তাক লাগিয়ে দিতে পারে।
এটাকে দাবার সৌন্দর্য মনে করছেন তিনি।
এমনকি দাবা খেলাটা আর্থিকভাবেও অনেক সস্তা, যেকোনো আয়ের মানুষ দাবা খেলতে পারেন।
দাবা খেলাটাকে অনেকে প্রতিপত্তির প্রতীক হিসেবে দেখলেও এটা আসলে উল্টোটাও প্রমাণ করে এসেছে।
অলিম্পিক্সের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটের একটি প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, দাবা কীভাবে নাইজেরিয়ার একটি বস্তিতে স্বস্তি নিয়ে এসেছিল।
নাইজেরিয়ান বাবাটুন্ডে অনাকোয়া চেজ ইন স্লামস আফ্রিকা নামে একটি উদ্যোগ নিয়েছিলেন ২০১৮ সালে।
তিনি নিজেও ছোটবেলায় ছিলেন মৌলিক অধিকার বঞ্চিত শিশুদের একজন।
দাবা খেলা তাকে স্বাবলম্বী হতে সাহায্য করেছে এখন তিনি চেষ্টা করছেন নাইজেরিয়ায় তো বটেই আফ্রিকার অনেক সুবিধাবঞ্চিত জায়গায় দাবা খেলাটিকে জনপ্রিয় করে তুলতে।
অনাকোয়া বলেন, ‘দাবা, এটা একটা সাম্যবাদী খেলা। এটা যেকোনো জায়গায় খেলা যায়। আপনি সাদা না কালো, আপনি গরীব না ধনী ব্যাপার না। এখানে কোনো বৈষম্য নেই, কোনো প্রথা নেই।’
দাবাকে তিনি বলছেন মনের ব্যায়ামাগার, ‘জিমনেসিয়াম অফ দ্য মাইন্ড’।
দাবায় অনেক দ্রুত সাফল্য পাওয়া সম্ভব বলে মনে করেন টাইম ম্যাগাজিনের দাবা বিষয়ক লেখক ও ইংলিশ গ্র্যান্ডমাসটার রেমন্ড কিন, ‘দেখেন আপনি এখানে মহাকাব্য রচনা করছেন না। আপনি যদি ছয় বছর বয়সে দাবা ভালো খেলেন, ১২ বছর বয়সের মধ্যে আপনার গ্র্যান্ডমাস্টার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’
সূত্র : বিবিসি
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।