আন্তর্জাতিক ডেস্ক: একদিন পথ হারিয়ে একটি মৌমাছি এসে পড়ে বাস্তুবিজ্ঞানী স্টিফেন বুচম্যানের জানালায়। পথভোলা বিধ্বস্ত মৌমাছিটির ওপর মায়া হয় বুচম্যানের। তিনি মৌমাছিটিকে নিরাপদে ঘরে ফেরানোর উদ্যোগ নেন। কিন্তু ওই মৌমাছিটিকে দেখেই বুচম্যানের প্রথমবারের মতো মনে হয়, মৌমাছিদেরও সূক্ষ্ম অনুভূতি রয়েছে, আছে জটিল চিন্তার জাল। এই ধারণা প্রমাণ করতে উঠেপড়ে লাগেন বুচম্যান।
দ্য গার্ডিয়ানে প্রকাশিত এক ফিচারে বলা হয়েছে, এই মার্চে, ‘হোয়াট এ বি নোস : এক্সপ্লোরিং দ্য থটস, মেমোরিস অ্যান্ড পার্সোনালিটিস অব বিস’ নামে একটি বই প্রকাশ করেছেন বুচম্যান। সেখানে তিনি দেখানোর চেষ্টা করেছেন মৌমাছিদের মন আসলে কত বিচিত্র হতে পারে। মৌমাছির আচরণ ও তাদের মনস্তত্ত্ব নিয়ে লেখা বইটিতে বলা হয়েছে, মৌমাছিদেরও প্রত্যাশা রয়েছে, রয়েছে হতাশা। মান-অভিমান, ভীতি ও আনন্দের মতো সূক্ষ্ম অনুভূতিরও বাইরে নয় তারা। মৌমাছিদের এসব বৈশিষ্ট্য স্তন্যপায়ী প্রাণীদের সঙ্গে মিলে যায়। এমনকি মৌমাছিরা চিনে রাখতে পারে মানুষের চেহারা, ঘুমের মধ্যে দেখতে পারে স্বপ্নও।
বুচম্যানের এ গবেষণা পতঙ্গদের প্রতি মানুষের প্রতিক্রিয়ায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে চলেছে। লেখক স্বয়ং বলেছেন, এখন শুধু যে আমরা পতঙ্গের প্রতি আরো সহানুভূতিশীল, তাই নয়। আমরা এখন এ ধরনের পতঙ্গের জন্য চিকিৎসাব্যবস্থা নিয়েও চিন্তা করতে শুরু করেছি। আমি হয়তো দুই দশক আগেও মৌমাছিদের প্রতি এতোটা সংবেদনশীল ছিলাম না। কিন্তু যতই বুঝতে পারছি, মৌমাছিদেরও অনুভূতি রয়েছে, ততই আমি তাদের প্রতি অনুভূতিশীল হয়ে পড়ছি।
গবেষণাটি কৃষি খাতেও রাখবে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্যশস্যের এক তৃতীয়াংশই পরাগায়নের জন্য মৌমাছির ওপর নির্ভরশীল। এর মধ্যে রয়েছে বেশ কয়েক ধরনের ফল, সবজি এবং বাদাম।
অবশ্য আগেও পরাগায়ন এবং মৌমাছি নিয়ে গবেষণা হয়েছে, তবে তা কেবল পরিবেশে তাদের ভূমিকাকেন্দ্রিক। তবে বুচম্যানের বর্তমান গবেষণাটি মৌমাছিদের প্রতি মানুষের নৈতিক আচরণ কেমন হওয়া উচিত সেই ধারণায়ও বৈপ্লবিক পরিবর্তন নিয়ে আসবে।
বুচম্যান তার বইয়ে লিখেছেন, মৌমাছিরা আত্মসচেতন পতঙ্গ। তাদের মধ্যে একটি সূক্ষ্ম চেতনা রয়েছে। তারা চিন্তা করতে পারে, সমস্যা সমাধানে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এমনকি সিদ্ধান্ত কার্যকর করার পদক্ষেপও নিতে পারে। এমনকি তাদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা এবং স্মৃতি রোমন্থনের সক্ষমতাও থাকতে পারে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মৌমাছির সংখ্যা কমে গিয়েছে। পরিবেশবিদরা এর পেছনে কীটনাশক ব্যবহার, জলবায়ু সংকট এবং অন্যান্য পরিবেশ বিপর্যয়কে দায়ী করেছেন। তবে বুচম্যান বলছেন, বর্তমানে মানসিক চাপের কারণেও অনেক মৌমাছি মারা যাচ্ছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।