জুমবাংলা ডেস্ক : আওয়ামী লীগের সাবেক এক এমপির প্রভাবে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের পরিচালকদের অব্যাহতি এবং ব্যাংক কর্মকর্তাদের ফাঁসিয়ে মিথ্যা মামলা দায়েরের অভিযোগ উঠেছে দুদকের বিরুদ্ধে। এ ছাড়া পরিচালকদের বাঁচাতে বারবার অভিযোগ পাল্টানোর ঘটনাও ঘটেছে। প্রায় ২০ বছর আগে ব্যাংক ছেড়ে যাওয়া কর্মীদের আসামি করে চলতি বছরের শুরুতে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করেছেন দুদকের দায়িত্বপ্রাপ্ত তদন্ত কর্মকর্তা।
৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ওই মামলায় অভিযুক্ত এক ব্যাংক এমডিকে ছাড় দেওয়া হলেও আরেক এমডির নিয়োগ আটকে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
জানা গেছে, যে ঋণের জন্য দুদক থেকে মামলাটি করা হয়েছে সেই ঋণের অনুমোদন করে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের তৎকালীন পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান, নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান ও অন্য পরিচালকরা। অথচ তাদেরকে বাদ দিয়ে আসামি করা হয় তৎকালীন এসএভিপি নবী-উস-সেলিম এবং এভিপি হাবিবুর রহমান, কাজী জাহিদ হাসান ও মো. রবিউল ইসলামকে।
অভিযোগ রয়েছে, আওয়ামী লীগের তৎকালীন এমপি মোরশেদ আলম দলীয় প্রভাব খাটিয়ে তদন্ত কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজোশের মাধ্যমে পরিচালকদের দায়মুক্তি করিয়ে নেন। আর ফাঁসিয়ে দেন ২০ বছর আগে ব্যাংক ছেড়ে আসা সাবেক কর্মকর্তাদের।
এই ঘটনার পর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ও স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের চেয়ারম্যান কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ তাদের ব্যাংকের এমডি হাবিবুর রহমানকে জোরপূর্বক পদত্যাগ করতে বাধ্য করেন। তবে ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ওই মামলায় অভিযুক্ত হাবিবুর রহমানকে ছাড় দিয়ে স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের এমডির দায়িত্বে পুনর্বহাল করে বাংলাদেশ ব্যাংক। অথচ একই মামলায় নাম আসায় এনআরবিসি ব্যাংকের ডিএমডি মো. রবিউল ইসলামকে ব্যাংকটির এমডি হিসেবে নিয়োগের প্রস্তাব আটকে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
গত মে মাসে মো. রবিউল ইসলামকে এমডি পদে নিয়োগের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রস্তাব পাঠায় এনআরবিসি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ। সেটি অনুমোদন দেয়নি বাংলাদেশ ব্যাংক। এ বিষয়ে বক্তব্যের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক হুসনে আরা শিখাকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।
ভুক্তভোগী কর্মকর্তাদের অভিযোগ, যে ঋণের বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) থেকে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে, সেই ঋণের অনুমোদনকারী কর্তৃপক্ষ তথা পরিচালদের বাদ দিয়ে অসত্য ও মিথ্যা তথ্য দিয়ে উদ্দেশ্যমূলকভাবে তাদের আসামি করা হয়েছে। সরকারি জমি বন্ধক রেখে ঋণ প্রদান করা হয়েছে। এই মূল অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় পরবর্তীতে আরেক মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছে। তদন্তকারী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম ব্যাংকের পরিচালকদের সঙ্গে যোগসাজশ করে পুরনো ফাইল থেকে বিভিন্ন ডকুমেন্ট সরিয়ে ফেলেছেন। মার্কেন্টাইল ব্যাংকে থেকে চাকরি ছেড়ে অন্য ব্যাংকে চাকরি করায় বিষয়টি তারা জানতেও পারেননি।
মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়, অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গ, প্রতারণা, ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে ঋণ সুবিধা প্রদান ও গ্রহণের মাধ্যমে ৭ কোটি ৩৭ লাখ টাকা আত্মসাৎ এবং ঋণের সুদ বাবদ ৩ কোটি ৭১ লাখ টাকা পরিশোধ না করে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করায় পাঁচজনকে আসামি করে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। এ ছাড়া ঋণ অনুমোদনকারী কর্তৃপক্ষ এবং বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাসহ ৯ জনকে মামলা থেকে অব্যাহতি প্রদানের সুপারিশ করা হয়েছে। এর আগে এই ঘটনায় তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের সহকারী পরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম ২০১৮ সালের ৫ ডিসেম্বর ১২ জনকে আসামি করে মতিঝিল থানায় এফআইআর দায়ের করেন।
এতে বলা হয়, আসামিগণ পরস্পর যোগসাজশে অন্যায়ভাবে লাভবান হওয়ার অভিপ্রায়ে অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গ ও প্রতারণার মাধ্যমে ভুয়া রেকর্ডপত্র সৃষ্টি করত : সরকারি সম্পত্তি বন্ধক দেখিয়ে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের প্রধান শাখা থেকে ৮ কোটি টাকা উত্তোলন ও সুদসহ ১০ কোটি ৮৩ লাখ টাকা পরিশোধ না করে আত্মসাৎ করত ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। ওই সময় এফআইআরে প্যাট্রিক ফ্যাশনের এমডি কাজী ফরহাদ হোসেন, সিনিয়র অফিসার তনুশ্রী মিত্র, অফিসার মোহাম্মদ মাহতাব উদ্দিন, এভিপি হাবিবুর রহমান ও মো. রবিউল ইসলাম, এসএভিপি নবী-উস-সেলিম, মার্কেন্টাইল ব্যাংকের তৎকালীন পরিচালনা পর্ষদ ও এক্সিকিউটিভ কমিটির চেয়ারম্যান এবং অন্য সদস্যদের আসামি করা হয়।
এফআইয়ের দায়েরের পর বিভিন্ন সময়ে তদন্ত করেন দুদকের সাবেক সহকারী পরিচালক মো. আবদুল ওয়াদুদ, মো. হুমায়ন কবির এবং উপসহাকরী পরিচালক মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম। সর্বশেষ তদন্তকারী কর্মকর্তা উপসহাকারী পরিচালক মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারি অভিযোগপত্র দাখিল করেছেন।
সূত্রগুলো বলেছে, এফআইআরে উল্লেখিত সরকারি জমি বন্ধক রাখার অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় মামলাটি নথিভুক্ত করার প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। পরে অজানা উদ্দেশ্যে ঋণের নামে অর্থ আত্মসাতের নতুন অভিযোগ আনা হয়। কিন্তু চূড়ান্ত অভিযোগপত্রে ঋণ অনুমোদনকারী প্রধান কর্তৃপক্ষ ব্যাংকের পরিচালক এবং নির্বাহী কমিটির সদস্যদের অব্যাহতি দেওয়া হয়। ২০০০ সালের ২২ অক্টোবর নির্বাহী কমিটির ২৬তম সভায় প্যাট্রিক ফ্যাশনের ঋণ অনুমোদন করেন মার্কেন্টাইল ব্যাংকের পরিচালকরা। অনুমোদনের পর প্যাট্রিক ফ্যাশনের সঙ্গে ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করেন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা।
কিন্তু একপর্যায়ে ওই গ্রাহক ব্যাংকের টাকা ফেরত দিতে ব্যর্থ হন। ২০০৯ সালে ব্যাংকের ৯৩ বোর্ড সভায় ওই গ্রাহকের ঋণ অবলোপন করে গ্রাহকের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করা হয়। এর বিপরীতে গ্রাহকের বন্ধককৃত জমি বিক্রি করে অর্থ আদায়ের জন্য ২০১৭ সালের ৭ সেপ্টেম্বর রায় দিয়েছেন আদালত।
রাঙ্গামাটিতে সেনাবাহিনীর বিশেষ অভিযান, ইউপিডিএফ (মূল) সদস্য নিহত
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।