আন্তর্জাতিক ডেস্ক : দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ মালয়েশিয়ার পাম তেলের আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। বন উজাড়, কার্বন নির্গমনের ঝুঁকি এবং পরিবেশের ভারসাম্য নষ্টগত কারণ দেখিয়ে দেশটির উপর নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে।
এরপর ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেয়া নিষেধাজ্ঞার উপর মালয়শিয়া মামলা করেছে। কিন্তু তারপরও নিষেধাজ্ঞা থেকে রেহাই পায়নি। বিশ্ববাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও) এর একটি প্যানেল কর্তৃক চলতি মাসের শুরুতে দেয়া মামলার রায়ে পরাজিত হয়েছে মালয়েশিয়া।
ইন্দোনেশিয়ার পরে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পাম তেল উৎপাদনকারী দেশ মালয়েশিয়া। ইন্দোনেশিয়াও ইইউ’র বিরুদ্ধে ডব্লিউটিওতে একটি মামলা করেছে। কিন্তু মালয়েশিয়ার এই মামলার ফলাফল ঘোষণার একদিন আগে তা স্থগিত করার ঘোষণা দিয়েছে বিশ্ববাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও)। ফলে সকল আশা নিমেষেই নিভে গেছে মালয়েশিয়ার।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ মালয়শিয়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের দ্বিতীয় পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি নির্দেশিকা (আরইডি-২) এর অধীনে বন উজাড় এবং কার্বন নির্গমনের ঝুঁকির কারণে জৈব জ্বালানি হিসেবে পাম তেলের আমদানি ফেজ-আউট করার জন্য ইইউ’র নীতিতে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নিয়ম লঙ্ঘন করার অভিযোগ তুলেছে।
তবে কুয়ালালামপুর বলেছে বিশ্ববাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও) মালয়েশিয়ার পাম অয়েল জৈব জ্বালানির বিরুদ্ধে ইইউ’র পদক্ষেপ প্রকৃতপক্ষে বৈষম্যমূলক নিষেধাজ্ঞা।
মালয়েশিয়ার প্লান্টেশন এবং কমোডিটি বিষয়ক মন্ত্রী আব্দুল গনি মঙ্গলবার ডব্লিউটিও’র এই রায়কে তাদের বায়োডিজেল ব্যবসায়ী, কোম্পানি এবং কর্মচারীদের জন্য পক্ষপাতদুষ্ট বলে অভিহিত করেছেন।
দেশটির অনলাইন দ্য স্টার অনলাইন মন্ত্রী আব্দুল গনি’র উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন যে, এই নিষেধাজ্ঞা পক্ষপাতদুষ্ট নিষেধাজ্ঞা এবং এটি অযৌক্তিক বিধিনিষেধ ও মুক্ত বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টিকারী নিষেধাজ্ঞা।
তিনি জানিয়েছেন, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নও ১৯৯৪ সালের সাধারণ শুল্ক এবং বাণিজ্য চুক্তির অধীনে থাকা বাণিজ্যের প্রযুক্তিগত বাধা দিয়ে থাকে যা বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) নীতিকে লঙ্ঘন করে।
২০২৩ সালে অয়েল ওয়ার্ল্ড কর্তৃক প্রকাশিত পরিসংখ্যান বলছে, ইন্দোনেশিয়ার ৪৮.৪ মিলিয়ন টন অপরিশোধিত পাম তেল থেকে ১২.২ মিলিয়ন টন বায়োডিজেল উৎপাদন করেছিল।
একই সময়ে, মালয়েশিয়া মাত্র ১.৪ মিলিয়ন টন অপরিশোধিত পাম তেল থেকে ১৩৪,০০০ টন বায়োডিজেল উৎপাদন করেছিল। যা ছিল, উৎপাদনের ক্ষেত্রে বড় রেকর্ড।
এদিকে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসের স্টাটিস্টা রিসার্চ ডিপার্টমেন্ট তাদের প্রকাশিত রিপোর্টে বলছে, ২০২১-২০২২ সালে মালয়েশিয়ায় পাম অয়েল বাগানে শ্রমিকের সংখ্যা ছিল প্রায় ৩ লাখ ৮২ হাজার। যা তার আগের বছরের প্রায় ৩ লাখ ৯১ হাজার শ্রমিকের তুলনায় কম।
তবে কো ভি ড-১৯ কালীন সময় ও তৎকালীন চলাচলের উপর বিধিনিষেধের পরে দেশটির পামঅয়েল সেক্টরে উৎপাদনে ঘাটতি ছিল, যার কারণে বিদেশি শ্রমিকের সংখ্যা হ্রাস পায়।
দেশটি চলতি বছর বহির্বিশ্ব থেকে যেভাবে শ্রমিক টানছিল, সে হিসাবে শ্রমিক ঘাটতি কমবে বলে আশা করলেও পাম তেলে ইউ’র নিষেধাজ্ঞায় সে আশায় গুড়েবালি মনে হচ্ছে।
এছাড়া গত কয়েক মাসে মালয়েশিয়ায় চলমান বাংলাদেশিদের চিত্র বলছে, কর্মহীন, বেতনবিহীন, পাসপোর্ট আটকে রাখা, কোম্পানির বিরুদ্ধে শ্রমিকের মামলা, আবার কোম্পানি কর্তৃক শ্রমিকের বিরুদ্ধে মানহানির মামলায় বাংলাদেশিদের রিমান্ডসহ নানা অভিযোগে জর্জরিত মালয়েশিয়ার শ্রম বাজার।
এদিকে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি শ্রমিক নিয়োগ বন্ধে সিন্ডিকেট প্রথা বাতিলের বিবৃতিতে বাংলাদেশের শ্রমবাজারে যেন ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ পড়ার অবস্থা। এই নিয়ে চলছে চরম আশঙ্কা, তবে কি আবারো বন্ধ হতে যাচ্ছে, স্বপ্নের দেশ মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশে দক্ষ-অদক্ষ শ্রমিক প্রেরণের পথ?
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।