আন্তর্জাতিক ডেস্ক : চলমান করোনা প্রাদুর্ভাবের মধ্যে মালয়েশিয়ায় থাকা অবৈধ অভিবাসীদের বৈধতা প্রদানের ঘোষণা দিয়েছে দেশটির সরকার।
বৃহস্পতিবার দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হামজা বিন জয়নুদ্দিন শর্তসাপেক্ষে অবৈধদের এই বৈধতা দেয়ার ঘোষণা দেন। এর আগে তিনি দেশটির মানবসম্পদমন্ত্রী এম সারাভানানের সঙ্গে আলোচনা করেন।
আলোচনা শেষে কুয়ালালামপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হামজা বিন জয়নুদ্দিন জানান, অনিবন্ধিত অভিবাসীদের বৈধতার বিষয়ে মালয়েশিয়ার সরকারের নেয়া একটি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। যা আগামী বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। আর আগামী সোমবার থেকে অবৈধ অভিবাসীদের বৈধকরণ প্রক্রিয়া শুরু হবে। এ প্রক্রিয়া ইমিগ্রেশন বিভাগ, মালয়েশিয়ার শ্রম বিভাগ এবং অন্যান্য সরকারি সংস্থা বাস্তবায়ন করবে।
এই সময়ের মধ্যে শর্তসাপেক্ষে দেশটিতে অবস্থান করা অবৈধ অভিবাসীরা বৈধ হতে পারবেন। কন্সট্রাকশন, ফ্যাক্টরি, পাম অয়েল ও কৃষি-এই চার সেক্টরে অবৈধরা বৈধতার সুযোগ পাবেন।
মূলত থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, নেপাল, মিয়ানমার ও বাংলাদেশসহ ১৫টি দেশের অবৈধ অভিবাসী শ্রমিকরা এর আওতাভুক্ত। এক্ষেত্রে কোনো এজেন্ট গ্রহণযোগ্য হবে না বলেও জানান দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
করোনা মহামারির কারণে মালয়েশিয়ায় অসংখ্য অভিবাসী শ্রমিক কাজ হারিয়ে বেকার হয়ে পড়েছেন। সম্প্রতি তাদের কাজের সুযোগ করে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছিল দেশটির মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়। সম্প্রতি দেশটির মানবসম্পদ মন্ত্রণালয় জানায়, করোনাকালীন যারা চাকরি হারিয়েছেন তারা ‘মাই ফিউচার জবস’ অনলাইনে নিয়োগ কর্তার মাধ্যমে আবেদন করতে পারবেন। বিদেশি কর্মীদের ক্ষেত্রেও এ প্রক্রিয়া প্রযোজ্য।
অভিবাসন খাত নিয়ে কাজ করা এশিয়ার ২০টি দেশের আঞ্চলিক সংগঠন ‘ক্যারাম এশিয়া’ ধারণা করছে এই ঘোষণার ফলে মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত বিভিন্ন দেশের ২০ থেকে ৩০ লাখ অবৈধ অভিবাসীর মধ্যে স্বস্তি ফিরে আসবে।
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজ-‘বায়রা’ বলছে, বাংলাদেশের কর্মীদের দ্বিতীয় প্রধান গন্তব্য মালয়েশিয়া। মালয়েশিয়ায় থাকা অবৈধ বাংলাদেশির সংখ্যা দেড় লাখ থেকে ২ লাখের কম হবে না। তারাও এই সুযোগ পাবেন।
এদিকে, অবৈধ অভিবাসীদের যারা নিজ দেশে ফিরতে চান তাদের সেই সুযোগ দেয়া হবে। এই মুহূর্তে অবৈধ অভিবাসীদের আটকে বড় কোনো অভিযান পরিচালনা না করার আহ্বান জানিয়েছে মালয়েশিয়ার মানবাধিকার কমিশন সুহাকাম। সরকারি-বেসরকারি হিসেবে মালয়েশিয়ায় ২০ লাখেরও বেশি বিদেশি কর্মী বৈধ কাগজপত্র ছাড়াই বিভিন্ন শিল্প-কারখানায় কাজ করছেন।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশের একটি সংঘবদ্ধ চক্রের অনৈতিক ব্যবসা পরিচালনার কারণে ২০১৮ সালের পহেলা সেপ্টেম্বর থেকে দেশটিতে নতুন কর্মী নিয়োগ বন্ধ রয়েছে। অবশ্য তখন সব দেশ থেকেই শ্রমিক নেওয়া বন্ধ করে দেয় দেশটির সরকার। কর্মী নিয়োগ বন্ধ হওয়ার পূর্বাবধি মালয়েশিয়ার একটি প্রভাবশালী রাজনৈতিক ও ব্যবসায়ী মহলকে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশের ১০টি রিক্রুটিং এজেন্সির একটি চক্র সেখানকার শ্রমবাজার নিয়ন্ত্রণ করছিল।
কুয়ালালামপুরে বাংলাদেশি প্রবাসী ব্যবসায়ী আবদুল কাদেরের সাথে মোবাইল ফোনে আলাপ করে জানা যায়, মালয়েশিয়ায় অবৈধ অভিবাসীদের দিন কাটছে অনাহারে-অর্ধাহারে। অনেকে চাকরি করলেও পাচ্ছেন না ন্যায্য মজুরি।
রাজধানী কুয়ালালামপুর ছাড়াও কোতাবারু, পেনাং, জহুরবারু, ক্যামেরুন হাইল্যান্ড, ইপো, পেটালিং জায়া, শাহালম, মালাক্কা সিটিতে অসংখ্য বাংলাদেশি অবৈধ রয়েছে। পুলিশের ভয়ে অনেকে আশ্রয় নিয়েছেন পাহাড় ও জঙ্গলে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।