জুমবাংলা ডেস্ক : বিলুপ্তির পথে হাঁটতে থাকা মিঠাপানির দেশীয় পাঙাস মাছ বাঁচিয়ে রাখার কৌশল উদ্ভাবনে সফলতা পেয়েছেন ভোলা মনোসেক্স তেলাপিয়া হ্যাচারির মালিক এস এম মাহবুবুর রহমান। কৃত্রিম প্রজননে পোনা উৎপাদনের মাধ্যমে এখন দেশীয় পাঙাস বেঁচে থাকবে বদ্ধ জলাশয়ে। ওই গবেষণা দলের প্রধান ছিলেন পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিসারিজ অ্যান্ড জেনেটিক্স বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. আরিফুর রহমান আরিফীন ও তার গবেষণা সহকারী মো. রহমত উল্লাহ, মো. আলমগীর কবীর এবং হ্যাচারি টেকনিশিয়ান মো. ফারুক হোসেন। এই গবেষণার কাজে সহযোগিতা করেছে ওয়াল্ড ফিস এর এফটিএফ বানা প্রকল্প এবং মৎস্য বিভাগ।
সংশ্লিষ্ট গবেষকরা জানান, দেশীয় পাঙাস মাছের বৈজ্ঞানিক নাম Pangasius pangasius। মিঠাপানি এবং আধালোনা পানির জলাশয়ে বিশেষ করে নদী এবং মোহনায় মাছটি পাওয়া যায়। এরা প্রাণিকণা ও ছোট ছোট শুককিটজাতীয় খাবার এবং ছোট ছোট শামুক খেয়ে বেঁচে থাকে। মাছটি খুবই সুস্বাদু, মানবদেহের জন্য উপকারী অনুপুষ্টি উপাদানসমৃদ্ধ এবং কাঁটা কম থাকায় খেতেও সহজ। একসময় মাছটি সারা বাংলাদেশেই পাওয়া যেত কিন্ত জমিতে কীটনাশক প্রয়োগ, অপরিকল্পিত বাঁধ নির্মাণসহ নানা কারণে বাসস্থান ও প্রজননক্ষেত্র বিনষ্ট হওয়ায় এ মাছের প্রাচুর্যতা অনেকটাই কমে গেছে। ২০১৫ সালে আইইউসিএন মাছটিকে বিপন্নপ্রায় প্রজাতি হিসেবে তালিকাভুক্ত করে। এরপর দেশীয় পাঙাসকে বিলুপ্তির হাত থেকে বাঁচাতে গবেষণা কাজ শুরু করেন একদল গবেষক। দীর্ঘ গবেষণার পর গবেষকরা দেশে প্রথমবারের মতো মাছটির কৃত্রিম প্রজনন ও পোনা উৎপাদনের কলাকৌশল উদ্ভাবনে সফলতা পেলেন।
গবেষণা ফলাফলে জানা যায়, একটা পরিপক্ক (৪.৫-৫ কেজি) দেশীয় স্ত্রী পাঙাস মাছের ডিম ধারণক্ষমতা এক লাখ ২০ হাজার থেকে সাড়ে তিন লাখ এবং জুলাই থেকে আগস্ট পর্যন্ত মাছটির প্রজননকাল।
ভোলা মনোসেক্স তেলাপিয়া হ্যাচারির মালিক এস এম মাহবুবুর রহমান বলেন, ভোলার মেঘনা নদীর মোহনা থেকে ভাটার সময় দেশীয় পাঙাস মাছের পোনা সংগ্রহ করা হয়। তখন এদের ওজন ছিল ১৫-১৮ গ্রাম। পোনা সংগ্রহের পর ছোট পুকুরে মজুদ করে নির্দিষ্ট মাত্রায় খাবার প্রয়োগের মাধ্যমে প্রায় পাঁচ বছর প্রতিপালন করে প্রজনন উপযোগী ব্রুড মাছ তৈরি করা হয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, একই বয়সের পুরুষ মাছের চেয়ে তুলনামূলকভাবে স্ত্রী মাছ আকারে বড় এবং ওজনে বেশি। প্রজনন মৌসুমে পরিপক্ক পুরুষ ও স্ত্রী মাছ পুকুর থেকে সংগ্রহ করে হ্যাচারির ট্যাংকে আট থেকে দশ ঘণ্টা পানির ঝরনা দিয়ে রাখা হয়। পরবর্তী সময়ে পুরুষ এবং স্ত্রী মাছকে যথাক্রমে ১ : ১ অনুপাতে একক মাত্রার হরমোন ইনজেকশন প্রয়োগ করে হাউজের মধ্যে রাখা হয়। প্রয়োজনীয় অক্সিজেন নিশ্চিত করার জন্য ঝরনার মাধ্যমে পানিপ্রবাহ অব্যাহত রাখা হয়। হরমোন ইনজেকশন প্রয়োগের ১৬-১৮ ঘণ্টা পর স্ত্রী মাছ ডিম ছাড়ে। সাধারণত ডিম ছাড়ার ২৪-৩০ ঘণ্টা পর ডিম ফুটে রেণু বের হয়। রেণু বের হওয়ার ১-২ দিন পর রেণুকে নার্সারি পুকুরে স্থাপন করা হয়। রেণুগুলোকে তিন দিন পর হতে খাবার হিসেবে ডিমের কুসুম দেওয়া হয়।
এ সফলতা সম্পর্কে গবেষণা দলের প্রধান মো. আরিফুর রহমান আরিফীন কালের কণ্ঠকে বলেন, দেশীয় পাঙাস মাছ পুষ্টিগুণ সম্পন্ন হওয়ায় মানবদেহের জন্য খুবই উপকারী। বিপন্নপ্রায় মাছের কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে পোনা উৎপাদন কৌশল উদ্ভাবন করা সম্ভব হয়েছে যা এর আগে বাংলাদেশে কোথাও সম্ভব হইনি। গবেষণালব্ধ কৌশল সম্প্রসারণ করা গেলে চাষের মাধ্যমে দেশে প্রজাতিটির উৎপাদন বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে এবং বিপন্নপ্রায় অবস্থা থেকে এ প্রজাতিকে সুরক্ষা করা যাবে। আমরা চাই বিপন্নপ্রায় দেশীয় পাঙাস মাছ অধিক উৎপাদনের মাধ্যমে সারা বাংলাদেশের মাঝে ছড়িয়ে দিতে। দেশীয় বিপন্নপ্রায় মাছকে খাবার টেবিলে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।