লাইফস্টাইল ডেস্ক : সাম্প্রতিক সময়ে মহা ধুমধামে ছেলেকে বিয়ে দিয়ে সারা বিশ্বে নজর কেড়েছেন ভারতীয় ধনকুবের মুকেশ আম্বানি। তিনি একজন ভারতীয় শতকোটিপতি ব্যবসায়ী। রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক। ফোর্বস ম্যাগাজিনের সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী তিনি প্রায় ১১৫ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার সম্পত্তির মালিক। এ ছাড়া তিনি এশিয়ার সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি এবং বিশ্বের নবমতম ধনী ব্যক্তি। লিখেছেন তানজিল ফুয়াদ।
কিন্তু আম্বানির এ সাফল্য একদিনে আসেনি। এর পেছনে রয়েছে তীব্র অধ্যবসায় ও পরিশ্রমের করুণ কাহিনি। সম্প্রতি ভারতীয় পত্রিকা টাইমস অব ইন্ডিয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি তাঁর সফলতার পেছনে বিভিন্ন কাহিনি শেয়ার করেন। তাঁর সাক্ষাৎকার থেকে সফলতার কিছু টিপস এখানে তুলে ধরা হলো।
অভিজ্ঞতা ও অধ্যবসায় থেকে শিক্ষাগ্রহণ: মুকেশ আম্বানি তাঁর শিক্ষাজীবনের অন্যতম সর্বোচ্চ ধাপ এমবিএ সম্পন্ন করার জন্য স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হলেও তাঁর বাবা ধীরুভাই আম্বানির জোরাজুরিতে তাঁর ব্যবসায় সাহায্য করার জন্য লেখাপড়ার মাঝপথেই ভারতে ফিরে আসেন এবং বাবার ব্যবসায় সাহায্য করা শুরু করেন। আম্বানি সরাসরি মাঠে কাজ শুরু করেন। যেখান থেকে তিনি ব্যবসার বাস্তব অভিজ্ঞতা গ্রহণ করেন। যেখান থেকে তিনি অনেক বেশি ব্যবসায়িক দক্ষতা অর্জন করেন। মুকেশ আম্বানি মনে করেন ডিগ্রি মানুষের পেশাদার জীবনে সাফল্যের গ্যারান্টি দেয় না। সফল হতে হলে ডিগ্রির পাশাপাশি বাস্তব অভিজ্ঞতারও প্রয়োজন রয়েছে।
সফলতাকে সীমাবদ্ধ না রাখা ও ইতিবাচক মানসিকতা বজায় রাখা: বিজনেস টুডেকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আম্বানি উল্লেখ করেছিলেন মানুষের সফলতাকে গণ্ডিবদ্ধ করে রাখা উচিত নয়। বরং নতুন নতুন আইডিয়া সৃষ্টি এবং নতুন চ্যালেঞ্জ গ্রহণের মানসিকতা রাখতে হবে। এ ক্ষেত্রে তিনি উল্লেখ করেন রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ পেট্রোকেমিক্যাল কোম্পানি থেকে এখন খুচরা এবং ডিজিটাল পরিষেবায় রূপান্তরিত হয়েছে। আম্বানি তাঁর জিও ডিজিটাল সার্ভিসটি শিশুদের জন্য শুরু করলেও পরবর্তী সময় তা পুরো ভারতে ছড়িয়ে দেন।
কর্মচারীদের সঠিক মূল্যায়ন করা: মাইক্রোসফটের সিইও স্টেয়া নাদেলার সঙ্গে এক আলাপচারিতায় আম্বানি তাঁর ব্যবসায়িক শিক্ষা সম্পর্কে আলোচনা করেন। তাঁর ব্যবসায়িক পরামর্শ সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে মুকেশ আম্বানি উল্লেখ করেছিলেন উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের সর্বদা তাঁদের কর্মীদের ফোকাস ও অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত। তিনি বছরের পর বছর তাঁর কর্মচারীদের সুস্থতাকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন এবং কর্মক্ষেত্রে ইতিবাচক সংস্কৃতি তৈরি করেছেন, যা তাকে একটি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ কর্মিবাহিনী তৈরি করতে সাহায্য করেছে। আজ রিলায়েন্সের সাফল্যের মেরুদণ্ডও এই বিষয়। এ সাক্ষাৎকারে তিনি আরও উল্লেখ করেন, তাঁর কলেজের বন্ধু মানোজ মোদী যুগের পর যুগ ধরে তাঁর ডানহাত হিসেবে কাজ করে আসছেন।
সামাজিক দায়িত্ব পূর্ণ করা: মুকেশ আম্বানি একবার বলেছিলেন, তিনি তাঁর প্রয়াত বাবা ধীরুভাই আম্বানির পরামর্শ অনুসরণ করেন। কাজ শুধু অর্থ উপার্জনের জন্য নয়; বরং জীবনে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের জন্য করা উচিত। কারণ, এটি অনিবার্যভাবে একজনের আর্থিক সাফল্যের দিকেও নিয়ে যায়। আম্বানির এ কথা তাঁর সামাজিক কর্মকাণ্ডেই প্রতিফলিত হয়। তিনি তাঁর সংগঠন রিলায়েন্স ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে থাকেন।
জীবনে সব সময় উচ্চ স্বপ্ন দেখতে হবে: আম্বানিকে একবার প্রশ্ন করা হয়েছিল, কোন উপদেশটি রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিকে ব্যবসায়িক জগতে সফলতা পেতে সহায়তা করেছে। জবাবে তিনি বলেছিলেন, সব সময় উচ্চ স্বপ্ন দেখা। তিনি আরও বলেন, ‘যুবক বয়স থেকেই বড় স্বপ্ন দেখতে হবে, জীবনের উদ্দেশ্যকে একটি লক্ষ্যের সঙ্গে মিলিয়ে চলতে হবে। আপনি যদি লক্ষ্যে মনোনিবেশ করেন, তবে আপনি সব বাধা অতিক্রম করবেন। আপনি যদি বাধার দিকে মনোনিবেশ করেন, তবে আপনি কখনোই আপনার লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবেন না।’
কখনো হাল ছাড়বেন না: আম্বানির মতে, অধ্যবসায় সাফল্যের চাবিকাঠি। তিনি একবার বলেছিলেন, ‘আমরা সবাই ক্রমাগত সংগ্রাম করি। কারণ, আমরা যা চাই, তা কখনোই পাই না। আমি সবচেয়ে বড় যে বিষয়ে শিক্ষা পেয়েছিলাম তা হলো, কখনো হাল ছাড়া যাবে না। কারণ, সফলতা কখনো প্রথম পদক্ষেপে আসে না। এই হাল না ছাড়ার মানসিকতা রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের সাফল্যে প্রতিফলিত।’
সূত্র: টাইম এন্টারটেইনমেন্ট
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।