আকবর হোসেন, বিবিসি বাংলা: বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মুক্তিযোদ্ধাদের সাহস জোগানো এবং অনুপ্রাণিত করার জন্য খেতাব দিতে ১৯৭১ সালের মে মাসে মুজিবনগর সরকারের কাছে প্রস্তাব আনেন মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল এমএজি ওসমানী। তখন সেটি অনুমোদন করা হয়।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে সাহসী ভূমিকার জন্য চারটি খেতাব নির্ধারণ করে বাংলাদেশ সরকার। ১৯৭২ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রীপরিষদের এক বৈঠকে ৬৭৬ জন মুক্তিযোদ্ধার জন্য খেতাব অনুমোদন করা হয়।
সেগুলো হচ্ছে- বীরশ্রেষ্ঠ, বীরউত্তম, বীর বিক্রম এবং বীর প্রতীক। কিন্তু পরিসংখ্যান বিবেচনা করলে দেখা যায় সামরিক, আধা-সামরিক বাহিনীর সদস্যদের আধিক্য এখানে বেশি।
বিষয়টি নিয়ে তেমন কোন উচ্চবাচ্য না হলেও সাধারণ অনেক মুক্তিযোদ্ধাদের মনে মাঝে-মধ্যে এ প্রশ্নের উদয় হয়েছে। প্রশ্নটি হচ্ছে, খেতাব প্রাপ্তির ক্ষেত্রে কেন সামরিক-বেসামরিক বাহিনীর সদস্যদের প্রাধান্য বেশি?
অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম ১৯৭২ সালে খুব কাছ থেকে দেখেছেন কোন প্রক্রিয়ায় খেতাবের জন্য তখন বাছাই করা হয়েছিল। মি: ইব্রাহিম নিজেও বীর বিক্রম খেতাব পেয়েছেন।
তিনি বলেন যুদ্ধের পরে বাংলাদেশে সরকারের আদেশে কমিটি গঠন করা হয়।
মি: ইব্রাহিম বলেন, ” সে কমিটির দায়িত্ব ছিল কে, কোথায় কেমন যুদ্ধ করেছে সেটা উপর নির্ভর করে তাদেরকে সাহসিকতার জন্য পুরস্কার দেবার জন্য সুপারিশ করা, সুপারিশের উপর ভিত্তি করে যাচাই-বাছাই করা এবং এরপর সরকার কর্তৃক অনুমোদন করা ”
বাংলাদেশর মুক্তিযুদ্ধে সামরিক বাহিনীর পাশাপাশি বেসামরিক মুক্তিযোদ্ধাদের অবদান ছিল সমান-সমান।
সর্বোচ্চ খেতাব ‘বীর শ্রেষ্ঠ’ সামরিক এবং আধা-সামরিক বাহিনীর সাতজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধাকে প্রদান করা হয়। বীর উত্তম খেতাব দেয়া হয় ৬৮ জন মুক্তিযোদ্ধাকে, যার মধ্যে ৫ জন ছিলেন বেসামরিক।
মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক আফসান চৌধুরীর মতে, যুদ্ধের ধরণ এখানে কিছুটা ভূমিকা রেখেছে।
মি: চৌধুরী বলেন, যুদ্ধের তিনটি বড় অংশ ছিল। একটি হচ্ছে ২৫শে মার্চ থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত। তখন পাকিস্তান আর্মির সাথে সম্মুখ যুদ্ধ হয়েছিল।
মাঝের সময়টুকুতে গেরিলা যুদ্ধ বেশি হয়েছে বলে উল্লেখ করেন মি: চৌধুরী। এছাড়া ডিসেম্বর মাসে আবার সম্মুখ যুদ্ধ হয়েছে। “খেয়াল করে দেখবেন যে এই দুইটা অংশে যারা যুদ্ধ করেছে, সম্মুখ যুদ্ধের মানুষরাই বেশি খেতাব পেয়েছে,” বলেন মি: চৌধুরী।
কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া মুক্তিযুদ্ধে নারীদের অবদানের বিষয়টিও সেভাবে উঠে আসেনি বলে মনে করেন গবেষকরা।
সম্মুখ যুদ্ধে অংশ না নিলেও সুলতানা কামাল নয় মাস ধরেই মুক্তিযুদ্ধের সাথে গভীরভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন। আহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসার জন্য ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে একটি হাসপাতালের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন তিনি।
তিনি বলছেন সর্বোচ্চ চারটি খেতাব নিয়ে গেরিলা মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে তেমন কোন আগ্রহ ছিলনা প্রথম দিকে। কিন্তু বিভিন্ন সময়ে অনেকের মনে বিষয়টি নিয়ে নানা প্রশ্ন জেগেছে। তবে বিষয়টা সেখানেই সীমাবদ্ধ ছিল।
সুলতানা কামাল বলেন, “সত্যি কথা বলতে কি আমরা যখন যুদ্ধ থেকে ফেরত এসেছি, সেসময় বিষয়গুলো নিয়ে আমরা কোনরকম চিন্তা-ভাবনা করিনি।”
খেতাবের বিষয়টি নিয়ে গেরিলা মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে কোন আক্ষেপ কিংবা আলোচনা ছিলনা বলে সুলতানা কামাল উল্লেখ করেন।
অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল মুহাম্মদ ইব্রাহিম মনে করেন, প্রায় ৪৭ বছর আগে যে প্রক্রিয়ায় খেতাবের জন্য মুক্তিযোদ্ধাদের চিহ্নিত করা হয়েছিল সেখানে সীমাবদ্ধতা ছিল। সেজন্যই বহু গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা খেতাব বঞ্চিত হয়েছেন।
মি: ইব্রাহিম বলেন, ” যারা পোশাকধারী নিয়মিত বাহিনীর লোক তাদের জন্য তল্লাশি করা, রিপোর্ট করা এবং সুপারিশ করার প্রক্রিয়াটা সহজ ছিল। গেরিলাদের জন্য এই প্রক্রিয়াটা সহজ ছিলনা”
তিনি মনে করেন, প্রক্রিয়ায় সীমাবদ্ধতা থাকলেও সেখানে কারো প্রতি পক্ষপাতিত্ব করা হয়নি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।