জুমবাংলা ডেস্ক : স্বাধীনতার সূতিকাগার ঐতিহাসিক মুজিবনগর কমপ্লেক্সে এখন সুনসান নীরবতা। একসময় পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত হওয়া মুজিবনগরের আম্রকানন এখন জনমানবহীন।
গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের দিন বিকালে এই ঐতিহাসিক স্থানটিতে শুরু হয় হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট।
কয়েক হাজার বিক্ষুব্ধ লোকজন হামলা চালিয়ে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালসহ ৬০০টি ছোট-বড় ভাস্কর্য ভেঙে ফেলে। জন আক্রোশের মুখে প্রাণভয়ে পালিয়ে যান নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত আনসার সদস্যরা। ছাত্র-জনতার তোপের মুখে তারা পালিয়ে আশ্রয় নেন তাদের ব্যারাকে।
প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনায় জানা যায়, দুর্বৃত্তরা দেশীয় অস্ত্র, বাঁশ, রড, হাতুড়ি নিয়ে স্মৃতি কমপ্লেক্সের এসব ভাস্কর্যের ওপর হামলা চালায়।
১৯৭১ সালের ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে তর্জনী উঁচিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণের ভাস্কর্যটির মাথা ও হাত ভেঙে ফেলে দুর্বৃত্তরা। এছাড়াও ১৯৭১ সালে নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বর্বর গণহত্যার ভাস্কর্য ভেঙে ফেলে তারা।
এরপর দ্বিতীয় দফায় রাতে এসে কমপ্লেক্সের মধ্যে দেশের মানচিত্রের আদলে তৈরি করা মুক্তিযুদ্ধের ১১টি সেক্টরে যুদ্ধের বর্ণনা সংবলিত ছোট ভাস্কর্যগুলো ভেঙে আশপাশে ছুড়ে ফেলে দুর্বৃত্তরা। কমপ্লেক্সের পেছনে জয় বাংলা তোরণের ‘জয় বাংলা’ লেখাটিও খুলে নিয়ে যায় তারা।
এছাড়াও ১৭ এপ্রিলের গার্ড অব অনার, ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানের আত্মসমর্পণের ভাস্কর্যগুলোতেও ভেঙে ফেলা হয়।
এসময় শহীদ স্মৃতিসৌধের প্রধান ফটকটি ভেঙে নিয়ে যায় তারা।
সোমবার দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মুজিবনগর কমপ্লেক্সের ‘ম্যাপ অব বাংলাদেশ’-এর সামনে কয়েকজন আনসার সদস্য পাহারা দিচ্ছেন কিন্তু মূল ফটক এখনও অরক্ষিত।
দায়িত্বরত ব্যাটালিয়ন আনসার সদস্য ল্যান্স করপোরাল আজিম উদ্দিন ও আনসার সদস্য সোলাইমান বলেন, এখানে ছোট-বড় ৬০০টি ভাস্কর্য ভেঙে ফেলা হয়েছে। পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণ ছিল এই ভাস্কর্যগুলো।
ব্যাটালিয়ন আনসার কমান্ডার সুবেদার রবিউল ইসলাম বলেন, ৫ আগস্ট বিকালের দিকে হামলাকারীরা কমপ্লেক্সে ঢুকে শুধু বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুর করে চলে যায়। পরে আবার রাতে এসে মধ্যরাত পর্যন্ত ভাঙচুর চালায়।
তিনি আরও জানান, হামলাকারীরা আনসার ক্যাম্পেও আক্রমণ করে। অফিস ভাঙচুর করে কন্ট্রোল রুম থেকে সিসিটিভি ক্যামেরার হার্ডডিস্কটি খুলে নিয়ে যায় তারা।
রবিউল ইসলাম বলেন, ‘দুর্বৃত্তদের হামলার সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মুঠোফোনে নির্দেশনা চাওয়া হয়েছিল। তিনি কোনো নির্দেশনা দিতে পারেননি। এ কারণে আনসার সদস্যরা নিজেদের জীবন ও অস্ত্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যারাকে অবস্থান নেন।’
তিনি আরও বলেন, এই ঘটনার পর মুজিবনগর স্মৃতি কমপ্লেক্সে দর্শনার্থী আসছেন না। আনসার সদস্যরাও ডিউটি করতে ভয় পাচ্ছেন। তাই আগের চারজনের স্থলে তিনজন করে ডিউটি করানো হচ্ছে। – ইউ এন বি
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।