জুমবাংলা ডেস্ক : ভালো মুনাফা করতে পারেনি জুনে হিসাব বছর শেষ হওয়া কোম্পানিগুলো। গত সোমবার পর্যন্ত ৪৬ কোম্পানি ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাব বছরের মুনাফার তথ্য এবং লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে ২৫টির নিট মুনাফা আগের বছরের তুলনায় কমেছে, বেড়েছে ২১টির। কোম্পানিগুলোর নিট মুনাফা গড়ে ২৯ শতাংশ কমে ৫ হাজার ৩৯১ কোটি টাকায় নেমেছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য বিশ্লেষণে এমন চিত্র মিলেছে।
বর্তমানে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ডিএসইতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ৩৫৫টি। এর মধ্যে ২৪১টির হিসাব বছর শেষ হয় জুনে। একটি বাদে বাকি সবই উৎপাদন ও সেবা খাতসংশ্লিষ্ট। যেসব কোম্পানি মুনাফা ও লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে, তার কয়েকটি ভালো মুনাফা করেছে। তবে তা সংখ্যায় কম বলে জানান শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টরা।
তারা বলেন, বেশির ভাগ কোম্পানির মুনাফা ও লভ্যাংশ আশাব্যঞ্জক নয়। ব্রোকারেজ হাউস লংকাবাংলা সিকিউরিটিজের সিইও সাফফাত রেজা বলেন, এখন অর্থনীতির প্রধান সমস্যা ডলার সংকট এবং বিনিময় মূল্য। এর কারণে কাঁচামাল আমদানিতে বেশি খরচ হচ্ছে। এতে একদিকে উৎপাদন খরচ বেড়েছে, অন্যদিকে বিক্রি মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় বিক্রিও কমছে। যার প্রভাব পড়েছে নিট মুনাফায়। ওষুধ খাতের কোম্পানি রেনেটার আগের বছরের ইপিএস যেখানে ৪৪ টাকা ৫৬ পয়সা ছিল, সর্বশেষ হিসাব বছরে তা ২০ টাকা ৪০ পয়সায় নেমেছে। একই অবস্থা ওয়ালটনের। কোম্পানিটির ইপিএস ৪০ টাকা ১৬ পয়সা থেকে নেমেছে ২৬ টাকার নিচে। এর কারণ, কাঁচামালের আমদানি খরচ। অবশ্য ইবনে সিনার ইপিএস অপরিবর্তিত আছে। স্কয়ার ফার্মার সামান্য বেড়েছে। রানার অটোমোবাইলস কোম্পানির শেয়ারপ্রতি লোকসান পৌনে ৮ টাকা। এ বছর তারা কোনো লভ্যাংশ দিচ্ছে না। নামমাত্র লভ্যাংশ দেবে বিবিএস কেবলস, নাহী অ্যালুমিনিয়াম। অথচ এসব কোম্পানি প্রিমিয়ামে শেয়ার বিক্রি করেছিল।
সাফফাত রেজা বলেন, কিছু কোম্পানি অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পরিচালন খরচ কমিয়ে মুনাফা ধরে রাখার চেষ্টা করেছে। যারা পারছে না, তাদের মুনাফা কমছে। ডলারের দাম বাড়ায় পণ্য মূল্য বেড়েছে, ফলে বিক্রি কমেছে। সিমেন্ট ও স্টিল খাতে এর প্রভাব বেশি।
তবে এ প্রসঙ্গে শেয়ারবাজার বিশেষজ্ঞ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, ডলার সংকট আছে, এটা ঠিক। তবে কিছু কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন বিশ্বাস করার মতো নয়। যখন সুদের হার বাড়ছে, তখন অনেক কোম্পানির লভ্যাংশ কমছে। যেন অনেকে লভ্যাংশ কম দেওয়ার প্রতিযোগিতায় নেমেছে। এমনটা হলে কেন মানুষ শেয়ারে বিনিয়োগ করবেন। কিছু উদ্যোক্তা কোম্পানি থেকে নানা সুযোগ-সুবিধা নেন, সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের কিছু দিতে চান না। এদের বিষয়ে তদন্ত হওয়া দরকার।
গত হিসাব বছরে শেয়ারপ্রতি ১৩ টাকা ৬১ পয়সা বা টাকার অঙ্কে মোট ৫৪১ কোটি টাকা লোকসান করার তথ্য দিয়েছে রাষ্ট্র মালিকানাধীন ডেসকো। আগের বছর শেয়ারপ্রতি ১ টাকা ৫৯ পয়সা মুনাফা করেছিল তারা। এমন লোকসানের জন্য ডলারের বিনিময় মূল্য বৃদ্ধিকে দায়ী করেছে ডেসকো। সংশ্লিষ্টরা জানান, ডেসকোর উন্নয়ন প্রকল্পে সরকারের ঋণের অর্থ ডলারে বিনিময় মূল্য ধরে পরিশোধ করে কোম্পানিটি। এ কারণে খরচ ও লোকসান বেড়েছে।
শেয়ারপ্রতি ৮ টাকা ১৭ পয়সা হারে লোকসানের তথ্য দিয়েছে অ্যাপেক্স ট্যানারি। রানার অটোমোবাইলস শেয়ারপ্রতি ৭ টাকা ৭৫ পয়সা, মিরাকল ইন্ডাস্ট্রিজ ২ টাকা ৪৯ পয়সা, ফার কেমিক্যাল ১ টাকা ১২ পয়সা ও বাংলাদেশ বিল্ডিং সিস্টেমস ১ টাকা ১ পয়সা হারে লোকসান করেছে।
বিবিএস কেবলসের ইপিএস আগের বছরের ৩ টাকা ৮১ পয়সা থেকে গেল হিসাব বছরে মাত্র ৪৬ পয়সায় নেমেছে। কোম্পানিটি শেয়ারহোল্ডারদের মাত্র ২ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেবে। একই অবস্থান নাহী অ্যালুমিনিয়াম, বিডি ল্যাম্পস, বিকন ফার্মা, ডরিন পাওয়ার, মতিন স্পিনিং, বেক্সিমকো লিমিটেড, জেএমআই হসপিটাল অ্যান্ড রিক্যুইজিটের।
ভালো মুনাফা করেছে অ্যাপেক্স ফুড, যার ইপিএস ৫ টাকা ১৪ পয়সা থেকে বেড়ে ৮ টাকা ৯১ পয়সা হয়েছে। তবে গত বছরের মতো এবারও ২০ শতাংশ লভ্যাংশের ঘোষণা দিয়েছে। আমরা নেটওয়ার্কের ইপিএস ১ টাকা ৭৬ পয়সা থেকে ৩ টাকা ৬৪ পয়সা হয়েছে। তবে লভ্যাংশ মাত্র ১ শতাংশ বেড়ে ১১ শতাংশ হয়েছে। স্কয়ার ফার্মার ইপিএস সাড়ে ৪ শতাংশ বেড়ে ২১ টাকা ৪১ পয়সা হয়েছে। কোম্পানিটি শেয়ারহোল্ডারদের ১০৫ শতাংশ হারে নগদ লভ্যাংশ দেবে, যা এ যাবৎকালের রেকর্ড নগদ লভ্যাংশ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।