আন্তর্জাতিক ডেস্ক : সন্ত্রাসবাদে আর্থিক সহায়তা করার দায়ে মুম্বাই হামলার সন্দেজভাজন মূলহোতা এবং লস্কর-ই-তৈয়্যবার অপারেশন কমান্ডার জাকির-উর-রহমান লাখভিকে ১৫ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে পাকিস্তান। শুক্রবার (০৮ জানুয়ারি) দেশটির সন্ত্রাসবিরোধী আদালত (এসটিসি) এ রায় ঘোষণা করেন।
৬১ বছর বয়সী জাতিসংঘের সন্ত্রাসী তালিকাভুক্ত লাখভি ২০১৫ সাল থেকে মুম্বাই হামলা মামলায় জামিনে ছিলেন। শনিবার (২ জানুয়ারি) পাঞ্জাব প্রদেশের কাউন্টার টেরোরিজম ডিপার্টমেন্ট (সিটিডি) তাকে গ্রেফতার করে।
শুনানির পর আদালতের এক কর্মকর্তা ভারতীয় বার্তা সংস্থা প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়াকে (পিটিআই) বলেন, সন্ত্রাসবাদে অর্থায়নের অভিযোগে ১৯৯৭ সালের সন্ত্রাসবিরোধী আইনের বিভিন্ন ধারায় লাখভিকে ১৫ বছরের কারাদণ্ড দেওয়ার জন্য সিটিডি আবেদন জানায়। অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় লাহোরের সন্ত্রাসবিরোধী আদালত তাকে দোষী সাব্যস্ত করেন।
বিচারক এজাজ আহমাদ বাট্টার তিনটি অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় লাখভিকে প্রত্যেক অপরাধের জন্য ৫ বছর করে ১৫ বছরের সাজা ঘোষণা করেন। কারাদণ্ডের পাশাপাশি অপরাধের জন্য ৬২০ মার্কিন ডলার করে জরিমানাও করেন তিনি।
কর্মকর্তা আরও জানান, জরিমানার অর্থ দিতে ব্যর্থ হলে প্রতিটি অপরাধের জন্য তাকে ৬ মাস করে কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে। সাজা ভোগের জন্য তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলেও জানানো হয়।
আদালতে লাখভি দাবি করেন, ওই মামলায় ষড়যন্ত্র করে তাকে জড়ানো হয়েছে।
লস্কর-ই-তৈয়্যবার এ নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি ডাক্তারখানা চালাতেন এবং সন্ত্রাসবাদে অর্থায়নের জন্য তহবিল সংগ্রহ করতেন।
সিটিডি জানায়, লাখভিসহ অন্যরাও তার ডাক্তারখানা থেকে অর্থ নিতো এবং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য তহবিল জোগাতো। সে অর্থ ব্যক্তিগত কাছে খরচ করারও অভিযোগ রয়েছে লাখভির বিরুদ্ধে।
শুক্রবার লাখভিকে আদালতে হাজির করা হয়। ওইদিন তাকে দোষী এবং তার সাজা ঘোষণা করা হয়। এর কিছু সময় আগে তার বিরেুদ্ধে সন্ত্রাসবাদে অর্থায়নের অভিযোগ দায়ের করা হয়।
আদালত জানায়, লাখভি পাঞ্জাবের রেনাল খুরদ ওকরা জেলার বাসিন্দা। গ্রেফতারের আগে তিনি ইসলামাবাদে বসবাস করতেন।
লস্কর ই তৈয়্যবা এবং আল কায়েদার সঙ্গে সম্পর্ক, তাদের জন্য অর্থ সংগ্রহ, হামলার পরিকল্পনা, সহায়তা এবং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার কারণে ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে জাতিসংঘ লাখভিকে বিশ্বসন্ত্রাসীর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে।
গেল সপ্তাহে লাখভির গ্রেফতারকে স্বাগত জানায় যুক্তরাষ্ট্র। সন্ত্রাসবাদে সহায়তা এবং অর্থায়নের জন্য এ গ্রেফতারকে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলেও আখ্যা দেয় ওয়াশিংটন।
মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় টুইট বার্তায় জানায়, আমরা বিচার প্রক্রিয়া এবং সাজার বিষয়টি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। মুম্বাই হামলার জন্য তাকে বিচারের মুখোমুখি করার আহ্বান জানাচ্ছি।
২০০৮ সালে ১০ বন্দুকধারী মুম্বাইয়ের দুটি অভিজাত হোটেল, একটি রেল স্টেশন, একটি হাসপাতাল, একটি ইহুদি সংস্কৃতি কেন্দ্রে এবং শহরের আরও কয়েকটি জায়গায় হামলা চালায়।
সন্দেহভাজন হামলাকারী হিসেবে তাৎক্ষণিকভাবে লাখভিকে দোষারোপ করে ভারত। ভারতীয় কর্মকর্তারা জানান, হামলা চলাকালে লাখভি হামলাকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। লাখভি সরাসরি অংশ নিয়ে থাকতে পারেন বলেও তাদের ধারণা।
ওই হামলায় বেঁচে যাওয়া একমাত্র হামলাকারীর মাধ্যমে লাখভিকে শনাক্ত করে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। বেঁচে যাওয়া হামলাকারী জানায়, হামলাকারীকে একত্রিত করার কাজটি করেছেন লাখভি।
লস্কর ই তৈয়্যবার প্রশিক্ষণ শিবির থেকে ২০০৮ সালে ৭ ডিসেম্বর তাকে গ্রেফতার করে পাকিস্তান।
ছয় বছর পর লাখভি আবারও গণমাধ্যমের শিরোনাম হন। ২০১৫ সালে মুম্বাই হত্যা হামলা মামলায় তার জামিন মঞ্জুর করেন আদালত। ওই বছরের এপ্রিলে তিনি কারাগার থেকে ছাড়া পান।
কারাগারে থাকাকালীন ৫ বছর লাখভিকে বিশেষ ব্যবস্থায় রাখা হয়। সেখানে অতিথিদের অবাধ আগমণ, মোবাইল ফোনের ব্যবহার, ইন্টারনেট সুবিধা দেয়া হয়। যার মাধ্যমে তিনি লস্কর ই তৈয়্যবার শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতেন।
গেল বছর লস্কর ই তৈয়্যবার প্রতিষ্ঠাতা হাফিজ সাইদকে কারাদণ্ড দেন পাকিস্তানের আদালত।
ভারতীয় কর্মকর্তাদের অভিযোগ, পাকিস্তান গোপনে সন্ত্রাসীদের সমর্থন দিচ্ছে। এ রায়ের সঙ্গে আন্তর্জাতিক অর্থযোগনদাতা সংস্থা এফএটিএফ ইসলামাবাদের ওপর যে চাপ দিচ্ছে তার সম্পর্ক রয়েছে।
ফেব্রুয়ারিতে এফএটিএফ’র সম্মেলন রয়েছে। পাকিস্তান আশাবাদী ওই সম্মেলনে সংস্থাটির ধূসর তালিকা থেকে মুক্ত হতে পারবে ইসলামাবাদ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।