জুমবাংলা ডেস্ক : দুই সপ্তাহের ব্যবধানে রাজধানীতে ফার্মের মুরগির ডিমের দাম ডজন প্রতি ৪০ টাকা বেড়ে ১৬০ টাকায় উঠেছে। এর আগে ডিমের দামের এতটা বৃদ্ধি দেখা যায়নি, দামও এতটা ওঠেনি। ডিমের সঙ্গে ব্রয়লার মুরগিও কেজিতে ৪০ টাকা বেড়ে ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে মুরগির খাদ্যের উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়া, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি এবং ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
তবে ডিমের দাম যতটা বেড়েছে, ততটা বাড়ার কথা নয় বলেও তারা স্বীকার করেছেন।
নরসিংদীর ডাঙ্গা বাজারের ডিম ব্যবসায়ী আলামিন খান বলেন, “আমরা নির্ধারিত একজন আড়তদারের কাছ থেকে ডিম কিনি। প্রতিদিন তারা ডিম দিয়ে যায়। গত কয়েকদিন ধরে তারা প্রতিদিন দাম বাড়াচ্ছে।
“মাত্র দুই সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি ডিমের দাম প্রায় ৩ টাকা বাড়িয়ে দিয়েছে। এর ফলে আগের সপ্তাহের ১২০ টাকার ডিম এখন ১৬০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে।”
একই বাজারের মুরগি ব্যবসায়ী সোহেল জানালেন, গত দুই দিন ধরে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ২০০ টাকা করে বিক্রি করছেন। আগের সপ্তাহে প্রতিকেজি ১৬০ থেকে ১৭০ টাকায় বিক্রি করেছেন।
গাজীপুরের কালিগঞ্জ বাজারের ডিমের পাইকার ব্যবসায়ী আফসার আলী বলেন, “তেজগাঁও এবং ময়মনসিংহের ভালুকা থেকে আমরা ডিম সংগ্রহ করি। গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে ডিমের প্রধান আড়তগুলোতে প্রতিটি ডিমে প্রায় ৩ টাকা বেশি হারে দাম নিচ্ছে। আমরাও সেই দামের সঙ্গে মিলিয়ে খুচরা বাজারে বিক্রি করছি।”
তিনি বলেন, “রোববার পাইকারি হিসাবে আমরা একটি ডিম ১১ টাকা ৯০ পয়সায় বিক্রি করেছি। তবে আড়তে আজ (সোমবার) আগের দিনের তুলনায় একশ ডিমে প্রায় ২০ টাকা কমিয়েছে। আমরাও প্রতিটি ডিম ১১ টাকা ৭০ পয়সায় বিক্রি করছি।”
তবে ডজন হিসেবে ১৫০ টাকা দামে বিক্রি করছেন বলে জানান তিনি।
মোহাম্মদপুর টাউনহল কাঁচা বাজারের ডিমের পাইকার ব্যবসায়ী সিদ্দিকুর রহমান বলেন, “প্রায় সময় আমার সহকারী সেলিম তেজগাঁও থেকে ডিম নিয়ে আসে। কিন্তু গত কয়েক দিন ধরে ডিমের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমি নিজে যাচ্ছি।
“আমি আড়তদারের কাছে হঠাৎ করে ডিমের দাম বাড়ার কারণ জানতে চেয়েছিলাম। তারা আমাকে জানিয়েছেন যে, বেশ কয়েক মাস ধরে মুরগির খাদ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় ডিমের দাম বাড়ছিল। কিন্তু গত সপ্তাহে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি পেয়ে পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়ায় ডিমের দাম আরও বাড়াতে হয়েছে।”
এই বাজারের মুরগি ব্যবসায়ী আবুল হাশেম বলেন, প্রতিকেজি ফার্মের মুরগি ২০০ টাকা, সোনালী মুরগি ৩১০ টাকায় বিক্রি করছেন। এই মূল্য আগের সপ্তাহের তুলনায় প্রায় ৪০ টাকা বেশি।
পোল্ট্রি ফার্ম অ্যাসোসিয়েশনের দাবি, এই শিল্পের প্রায় ৭০ শতাংশই আমদানিনির্ভর। মুরগির খাদ্য, পরিবহন ব্যয় ও ডলারের দর বেড়ে যাওয়ায় মুরগি ও ডিমের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। একইসঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে মুরগির বাচ্চার দাম না পাওয়ায় দেশে এখন মুরগি ও ডিমের উৎপাদন সঙ্কটে পড়েছে। সবমিলিয়ে দাম বাড়ছে।
বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম বলেন, “গত কয়েক মাস ধরে আন্তর্জাতিক বাজারে মুরগির খাদ্য তৈরির সামগ্রী যেমন ভুট্টা ও সয়ামিলের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। একইসঙ্গে ডলারের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় আমদানি খরচ আরও বেড়ে গেছে। এসব কারণে মুরগির খাদ্য উৎপাদন ব্যয় বেড়ে গেছে।”
জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিকেও পোল্ট্রি ও ডিমের দাম বৃদ্ধির অন্যতম কারণ দেখিয়ে তিনি বলেন, “পোল্ট্রির খাদ্য যখন আবার খামারিদের কাছে পৌঁছে দিতে হচ্ছে, তখন জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে ব্যয় বেড়েছে।
“ফার্মের মুরগির খাদ্য তৈরি করা হয় ভুট্টা থেকে। এই খাদ্য তৈরি করতে প্রয়োজন হয় সয়ামিলের। সম্প্রতি বিশ্ববাজারে এসব পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। সব মিলে গত দুই মাসের মধ্যেই ফার্মের মুরগি ও ডিম উৎপাদন খরচ প্রায় ২৫ শতাংশ বেড়ে গেছে।”
“দীর্ঘদিন এভাবে ক্ষতির মুখে পড়ে অনেক হ্যাচারি বন্ধ হয়ে গেছে। আর হ্যাচারি বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে মুরগির উৎপাদন কমে গেছে। যেমন দুই মাস আগে যেখানে সপ্তাহে প্রায় ২ কোটি ১৭ লাখ বাচ্চার উৎপাদন ছিল, সেখানে বর্তমানে উৎপাদন নেমে এসেছে প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখে।”
বাজারের চাহিদার তুলনায় মুরগির বাচ্চা উৎপাদন কমে যাওয়ায় মুরগি ও ডিমের দাম বেড়ে গেছে বলে দাবি করেন তিনি।
তবে বর্তমানে উৎপাদন খরচ হিসাবে খামারি পর্যায়ে একটি ডিমের দাম সাড়ে ৯ টাকা থেকে ৯ টাকা ৮০ পয়সা হওয়া উচিৎ বলে মনে করেন পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক নজরুল।
সেই হিসাব ধরলে ভোক্তাদের কাছে একটি ডিম পৌঁছাতে বাড়তি দাম নেওয়া হচ্ছে। কারণ ভোক্তার কাছে প্রতিটি ডিম পৌঁছাচ্ছে ১৩ টাকা ৩৩ পয়সা দরে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।