স্পোর্টস ডেস্ক : দলের দরকার ছিল চার বলে ২ রান, মুশফিকুর রহিমের চার। টি২০ ক্যারিয়ারে প্রথম সেঞ্চুরি যখন হাতের নাগালে, তখন রবি বোপারার নিরীহ দর্শন এক ফুলটস অফস্টাম্পের বাইরে থেকে টানলেন লং অনের দিকে। বল বাতাসে ভেসে গিয়ে জমা পড়ল শোয়েব মালিকের হাতে। মাথা নাড়াতে নাড়াতে চোখেমুখে একরাশ বিরক্তি আর আক্ষেপ নিয়ে মাঠ ছাড়লেন তিনি; খুব কাছাকাছি গিয়েও দেখা মিলল না তিন অঙ্কের!
তবে ৯৬ রানে আটকে যাওয়া ইনিংসটির পর খুলনা টাইগার্স কোচ জেমস ফস্টারের কাছ থেকে দারুণ এক খেতাবই পেয়েছেন মুশফিক- ৩৬০ ডিগ্রি ব্যাটসম্যান! বিশ্ব ক্রিকেটে যে স্বীকৃতিটা কেবল দক্ষিণ আফ্রিকার এবি ডি ভিলিয়ার্স আর ক্ষেত্রবিশেষে ইংল্যান্ডের জশ বাটলারের। একই স্বীকৃতিতে ভূষিত হওয়ার দিন মুশফিক হেসেছেন দলের জয়েও। রাজশাহী রয়্যালসের ১৮৯ রান টপকে খুলনা টাইগার্স পেয়েছে ৫ উইকেটের জয়।
আধুনিক ক্রিকেটে সব ধরনের ডেলিভারিতে মাঠের চারপাশে খেলে রান বের করার সক্ষমতাকে বলা হয় ৩৬০ ডিগ্রি ব্যাটিং। চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার সেটিরই মঞ্চায়ন করেন মুশফিক। ৫১ বলে ৯৬ রান করা ইনিংসটিতে উইকেটের চারপাশেই শটস খেলেছেন তিনি, যখন যেমন দরকার পড়েছে। মুশফিক যখন ব্যাটিংয়ে নামেন, দল তখন ২৫ রানের মধ্যে দুই ওপেনারকে হারিয়ে খানিকটা ব্যাকফুটে।
ওই পরিস্থিতি থেকে দলকে টেনে তুলেছেন দারুণ সব শট খেলে। প্রথাগত কভার ড্রাইভ, ফ্লিক, কাট শট তো খেলেছেনই, ধীরে ধীরে সুইপ থেকে রিভার্স সুইপ, পুল শট থেকে স্কুপও আর বাদ দেননি। প্রায় দুইশ’ ছোঁয়া লক্ষ্য তাড়া করতে রান দরকার ছিল প্রতি বলে। পরিস্থিতির দাবি মিটিয়ে কিছুটা রাইলি রুশো আর কিছুটা শামসুর রহমান শুভর সহযোগিতায় প্রধানত মুশফিকই মিটিয়ে গেছেন। ৯ চার আর ৪ ছয়ের ইনিংসটির মাধ্যমে পেরিয়ে গেছেন ২০১৩ বিপিএলে ঢাকার পক্ষে করা ব্যক্তিগত ৮৬ রানের সর্বোচ্চ। ম্যাচশেষে মুশফিকের ইনিংসটি নিয়ে মুগ্ধতা ঝরে পড়ল ইংলিশ কোচ ফস্টারের মুখে, ‘খুবই দক্ষতাসম্পন্ন একজন ব্যাটসম্যান সে। কন্ডিশন আর ম্যাচ পরিস্থিতি মাথায় রেখে নির্দিষ্ট বোলারের বিপক্ষে যেভাবে খেলা দরকার, সেভাবেই খেলে গেছে গোটা ইনিংসে। তার একটা সুবিধা আছে, সে ৩৬০ ডিগ্রি প্লেয়ার। বোলারদের জন্য ওকে বোলিং করা কঠিন। হাতে খুব জোরও আছে। সে আসলে পূর্ণাঙ্গ প্যাকেজ।’
ব্যাটিংয়ে জোরের সঙ্গে শটস খেলা বা দ্রুত রান তোলায় দক্ষতা মুশফিক অনেক দিন ধরেই দেখিয়ে চলেছেন। কিন্তু ৩৬০ ডিগ্রি? বর্তমানে যে ব্যাটিং এক-দু’জন ছাড়া আর কারও কাছ থেকে পাওয়া যায় না, ৩৬০ ডিগ্রি বললেই যেখানে ডি ভিলিয়ার্সের নাম চলে আসে, সেখানে মুশফিকের মধ্যেও তা কীভাবে খুঁজে পাচ্ছেন খুলনার কোচ? সঙ্গত কারণে প্রশ্নটা ধেয়ে যেতে উত্তর দিলেন ফস্টার, ‘মুশফিক মাঠের চারপাশেই মারতে পারে। আমরা সবাই জানি, কোনো ক্রিকেটার ডিপ মিড উইকেটের দিকে শক্তিশালী, কেউ মিড অফের দিকে। কিন্তু মুশি হচ্ছে এমন ব্যাটসম্যান, যে উইকেটের সামনে-পেছনে সব দিকেই খেলতে পারে, কোনো ভাগ্যের ছোঁয়া ছাড়াই। এটা একমাত্র কঠোর পরিশ্রম আর প্রচুর অনুশীলনের মাধ্যমে আয়ত্ত করা যায়।’ মুশফিকের ইনিংসটিকে নিজের দেখা অন্যতম সেরা টি২০ ইনিংসের মর্যাদাও দেন ফস্টার।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
রাজশাহী রয়্যালস :২০ ওভারে ১৮৯/৪ (মালিক ৮৭, বোপারা ৪০*, লিটন ১৯, আফিফ ১৯; আমির ২/৩৬, ফ্রাইলিঙ্ক ১/২৯)।
খুলনা টাইগার্স :১৯.৪ ওভারে ১৯২/৫ (মুশফিক ৯৬, রুশো ৪২, শামসুর ২৯, ফ্রাইলিঙ্ক ১৪*; রাসেল ২/৪১, রাব্বি ১/১৮)।
ফল :খুলনা টাইগার্স ৫ উইকেটে জয়ী। ম্যাচসেরা :মুশফিকুর রহিম।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।