ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বই “A World of Three Zeros: The New Economics of Zero Poverty, Zero Unemployment, and Zero Net Carbon Emissions” বিশ্বজুড়ে এক নতুন অর্থনৈতিক ও সামাজিক মডেলের ধারণা দিয়েছে। এই বইয়ে ড. ইউনূস আধুনিক অর্থনীতির কিছু চ্যালেঞ্জের একটি টেকসই সমাধান উপস্থাপন করেছেন। বইটির মূল লক্ষ্য হলো একটি সমতাপূর্ণ এবং পরিবেশবান্ধব পৃথিবী গড়া, যেখানে কেউ দরিদ্র থাকবে না, কেউ বেকার থাকবে না, এবং কার্বন নিঃসরণও থাকবে না।
বইটির তিনটি মূল লক্ষ্য:
“A World of Three Zeros” বইটিতে তিনটি প্রধান স্তম্ভকে কেন্দ্র করে ভবিষ্যতের পৃথিবী গড়ার কথা বলা হয়েছে:
- Zero Poverty (শূন্য দারিদ্র্য): পৃথিবী থেকে দারিদ্র্য সম্পূর্ণরূপে দূর করা। এটি অর্জনের জন্য, তিনি ক্ষুদ্রঋণ এবং সামাজিক ব্যবসার ব্যবহারকে উৎসাহিত করেছেন, যা দরিদ্র মানুষকে আর্থিকভাবে আত্মনির্ভরশীল করতে সহায়ক।
- Zero Unemployment (শূন্য বেকারত্ব): বেকারত্বকে শূন্যের কোঠায় নিয়ে আসা, যাতে প্রত্যেকের কাছে কর্মসংস্থানের সুযোগ থাকে। তার মতে, তরুণদের উদ্যোক্তা হয়ে উঠতে এবং নতুন ব্যবসা সৃষ্টি করতে উৎসাহিত করা উচিত, যাতে সমাজে নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হয়।
- Zero Net Carbon Emissions (শূন্য কার্বন নিঃসরণ): পরিবেশ রক্ষা এবং কার্বন নিঃসরণ হ্রাসের মাধ্যমে পৃথিবীকে টেকসই করে তোলা। ড. ইউনূসের মতে, সমাজের উন্নয়ন এমনভাবে হওয়া উচিত যাতে পরিবেশকে ধ্বংস না করে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এটি একটি বাসযোগ্য স্থানে পরিণত হয়।
কেন বইটি বিশেষ এবং নোবেল পুরস্কারের যোগ্য
১. টেকসই উন্নয়নের মডেল:
“A World of Three Zeros” বইটি আধুনিক অর্থনীতিতে প্রথাগত উন্নয়নের পরিবর্তে টেকসই উন্নয়নের ধারণা নিয়ে এসেছে। এটি এমন একটি মডেলকে সমর্থন করে, যেখানে ব্যবসাগুলি শুধু মুনাফা অর্জনের জন্য নয় বরং সমাজের জন্য কাজ করতে পারে। এই বইটি বোঝায় কিভাবে সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে আর্থিক ও সামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত করা যায়।
২. মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি:
বইটির প্রতিটি অধ্যায় মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে লেখা হয়েছে এবং সমাজের প্রান্তিক মানুষদের সমস্যার সমাধান খোঁজার উপর জোর দেওয়া হয়েছে। ড. ইউনূস দেখিয়েছেন, কীভাবে সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে দরিদ্র মানুষকে অর্থনৈতিক মুক্তি দিতে পারে এবং সমাজের মূলধারায় তাদের জায়গা করে দিতে পারে। এই মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং সমাজের প্রতি তার নিবেদনই তাকে বিশেষ করে তুলেছে।
৩. ব্যাপক প্রভাব এবং গ্লোবাল রূপান্তরের সম্ভাবনা:
বইটি যে লক্ষ্যমাত্রা এবং প্রস্তাবনা তুলে ধরেছে, তা পৃথিবীজুড়ে বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে পারে। “A World of Three Zeros” বইটি একটি বিশ্বব্যাপী পরিবর্তনের সম্ভাবনা নিয়ে এসেছে, যা বিশ্বজুড়ে লাখ লাখ মানুষকে আর্থিক স্বাধীনতা এবং পরিবেশ রক্ষায় অবদান রাখতে উদ্বুদ্ধ করবে। এই ধরনের প্রভাব এবং দৃষ্টিভঙ্গির জন্য, বইটি নোবেল পুরস্কারের যোগ্য হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
৪. নতুন প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণা:
ড. ইউনূসের তত্ত্ব এবং তার সমর্থিত মডেলগুলো আগামী প্রজন্মের জন্য একটি দিকনির্দেশনা এবং অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে। তরুণ উদ্যোক্তাদের দারিদ্র্য এবং পরিবেশগত সমস্যার সমাধানে আত্মনির্ভরশীল এবং সৃজনশীল হতে এই বইটি সাহায্য করবে। সামাজিক সমস্যা সমাধানের নতুন ধারণা এবং পরিবেশ সুরক্ষার গুরুত্ব বুঝিয়ে দিয়ে, এটি বিশ্বকে আরও সুস্থ এবং সমৃদ্ধ করার জন্য একটি অবদান রাখে।
নোবেল পুরস্কার পাওয়ার যোগ্যতা:
ড. ইউনূসের “A World of Three Zeros” বইটি কেবল একটি অর্থনৈতিক বই নয়, এটি একটি দার্শনিক এবং সামাজিক বিপ্লবের সূচনা। এই বইয়ের তত্ত্ব এবং চিন্তাগুলি টেকসই উন্নয়ন, মানবাধিকার, এবং পৃথিবীর দীর্ঘমেয়াদি পরিবেশগত সমাধানে অবদান রাখতে পারে।
এই বইয়ের তত্ত্ব যদি বিশ্বজুড়ে গৃহীত হয়, তাহলে এটি শত শত কোটি মানুষকে দারিদ্র্যমুক্ত করতে পারে, বেকারত্ব দূর করতে পারে এবং পৃথিবীকে কার্বন নিঃসরণ মুক্ত করতে সহায়ক হবে। এসব লক্ষ্যের জন্যই ড. ইউনূস আরও একটি নোবেল পুরস্কার পাওয়ার যোগ্য বলে অনেকের মত।
শেষকথা:
“A World of Three Zeros” বইটি ড. ইউনূসের সামাজিক ও অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং মানবিকতার প্রতি তার গভীর বিশ্বাসকে প্রকাশ করে। পৃথিবীর অর্থনীতিকে নতুনভাবে ভাবতে এবং সামাজিক ব্যবসাকে প্রচলিত ব্যবসার পরিবর্তে কাজে লাগাতে এই বইটি আমাদেরকে উদ্দীপনা যোগায়। ড. মুহাম্মদ ইউনূস তার উদ্ভাবনী ধারণা এবং মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে পৃথিবীকে আরও উন্নততর করতে আমাদের সবাইকে নতুনভাবে ভাবতে শিখিয়েছেন।
লেখক: ইউসুফ চৌধুরী
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।