নিজস্ব প্রতিবেদক: মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগে গত জুলাই থেকে থেমে থেমে সব ধরনের সুদহার বাড়িয়ে চলা বাংলাদেশ ব্যাংক নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে নীতি সুদহার বা ওভারনাইট রেপো সুদহার আরেক দফায় ৫০ বেসিস পয়েন্ট বাড়ালো।
মুদ্রানীতি প্রণয়ন সংক্রান্ত কমিটি পুনর্গঠনের পরে অনুষ্ঠিত প্রথম বৈঠকে নীতিসুদহার ৫০ বেসিস পয়েন্ট ও গ্রাহক পর্যায়ে ঋণ সুদহারের মার্জিন ২৫ শতাংশ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়।
নতুন সিদ্ধান্তে ঋণ নিতে গ্রাহকের চেয়ে ব্যাংকের খরচ বেশি বাড়বে।
এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, ৫০ বেসিস পয়েন্ট বৃদ্ধির পর নীতি সুদহার হিসেবে পরিচিত রেপো রেট হবে ৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ। এতোদিন যা ছিল সাত দশমিক ২৫ শতাংশ।
এর আগে সর্বশেষ গত ২৯ সেপ্টেম্বর রেপো সুদহার শূন্য দশমিক ৭৫ বেসিস পয়েন্ট সাত দশমিক ২৫ শতাংশ করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। একক সিদ্ধান্তে রেপো রেট বাড়ানোর এ হার ছিল গত এক যুগের মধ্যে সর্বোচ্চ।
দুই সংখ্যার ঘরে ছুই ছুই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে গত জুলাই থেকে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির পথে হাঁটছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এর অংশ হিসেবে গত প্রায় পাঁচ মাসে তিন দফায় সুদহার বাড়ানো হলো।
এবার বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, আগামী ডিসেম্বর নাগাদ মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশে নেমে আসবে। মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত সংকোচনমূলক পদক্ষেপ অব্যাহত রাখা হবে।
নতুন সিদ্ধান্ত সোমবার থেকেই কার্যকর হবে জানিয়ে বলা হয়, পুনর্গঠিত মনিটারি পলিসি কমিটি (এমপিসি) এর প্রথম সভায় সিদ্ধান্ত হয় নীতি সুদহার করিডোর পুনঃনির্ধারণ করার।
বিদ্যমান উচ্চ মূল্যস্ফীতি পরিস্থিতি, বিনিময় হার, তারল্য ও সুদহার পরিস্থিতি এবং নীতি সুদহারের গতিবিধি নিয়ে বিশদভাবে পর্যালোচনা করে এমন সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
নীতি সুদহার বা ওভারনাইট রেপো সুদহার বাড়ানোর সঙ্গে বাড়েব সুদহার করিডোরের উর্ধ্বসীমা স্ট্যান্ডিং লেন্ডিং ফ্যাসিলিটি (এসএলএফ) এর হারও।
৫০ বেসিস পয়েন্ট বৃদ্ধির পর এসএলফ হার হবে ৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ, এতোদিন যা ছিল ৯ দশমিক ২৫।
সুদহার করিডোরের নিম্নসীমা স্ট্যান্ডিং ডিপোজিট ফ্যাসিলিটি (এসডিএফ) সুদহার হবে ৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ, এতোদিন যা ছিল ৫ দশমিক ২৫ শতাংশ।
বাড়বে ব্যাংক ঋণের সুদহারও: কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঠিক করে দেয়া ‘স্মার্ট (সিক্স মান্থস মুভিং এভারেজ রেট অব ট্রেজারি বিল- স্মার্ট) সুদহার হার বাড়ানো হয় শূন্য দশমিক ২৫ বেসিস পয়েন্ট।
এখন থেকে ব্যাংকগুলো ‘স্মার্ট সুদ হারের সঙ্গে সর্বোচ্চ ৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ মার্জিন যোগ করতে পারবে, এতোদিন যা ছিল সর্বোচ্চ সাড়ে ৩ শতাংশ।
নতুন সিদ্ধান্তে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ধার নেয়ার খরচ যেমন বাড়বে, তেমনি গ্রাহক পর্যায়ে ঋণ সুদহারও বৃদ্ধি পাবে।
নতুন সুদহার অনুযায়ী, প্রি-শিপমন্টে রপ্তানি ঋণ এবং কৃষি ও পল্লী ঋণরে সুদহার নির্ধারণ করতে হবে স্মার্ট সুদহারের সঙ্গে সর্বোচ্চ দুই দশমিক ২৫ শতাংশ, এতোদিন যা ছিল আড়াই শতাংশ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, মুদ্রানীতি প্রণয়ন সংক্রান্ত কমিটি পুনর্গঠনের পরে অনুষ্ঠিত প্রথম বৈঠকে অনুষ্ঠিত হয় গত ২২ নভেম্বর।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের সভাপতিত্বে ভার্চুয়াল প্লাটফর্মে অনুষ্ঠিত ওই সভায় বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর কাজী ছাইদুর রহমান, প্রধান অর্থনীতিবিদ হাবিবুর রহমান, বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান(বিআইডিএস) এর মহাপরিচালক বিনায়ক সেন, অর্থনীতিবিদ সাদিক আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মাসুদা ইয়াসমিন, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক এজাজুল ইসলাম অংশগ্রহণ করেন।
সভায় নীতি সুদহার বৃদ্ধি, আমানত ও ব্যাংক ঋণের সুদহারের সীমা তুলে দিয়ে তা বাজারমুখীকরণ, টাকা ছাপিয়ে সরকারকে ঋণ প্রদান স্থগিত করা, আমদানি ব্যয় নিয়ন্ত্রণ, রপ্তানি আয় ও রেমিটেন্স বৃদ্ধির কার্যকর ব্যবস্থা, বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারকে বাজারমুখীকরণ, আমদানি মূল্য যাচাই, বৈদেশিক মুদ্রা বাজারে তদারকি বৃদ্ধি, রিজার্ভ হতে অত্যাবশ্যকীয় দ্রব্যের আমদানি ব্যয় মেটানোর ব্যবস্থা নিয়েও আলোচনা হয়।
বাজারভিত্তিক বিনিময় হার ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতকরা, ব্যাংকিং খাতে ক্রমবর্ধমান খেলাপী ঋণ সমস্যা মোকাবেলায় বলিষ্ঠ পদক্ষেপ নেয়ার পক্ষে সভায় গুরুত্বারোপ করা হয়।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের উপর চাপ প্রশমনে চলমান প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে সভায় একমত হন সদস্যরা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।