জুমবাংলা ডেস্ক : হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি আশরাফ হোসেন ওরফে কামাল সাংবাদিক সেজে ১৭ বছর ধরে পলাতক ছিলেন। এ সময় তিনি আশুলিয়ার কয়েকটি স্থানীয় সংবাদপত্রেও কাজ করেন, সদস্য হন আশুলিয়া প্রেসক্লাবের। বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকার সাভার এলাকায় অভিযান চালিয়ে থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
শুক্রবার ( ১৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব তথ্য জানান।
র্যাব জানায়, ২০০৫ সালের ১ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ১০টার দিকে পারিবারিক কলহের জেরে শিশুপুত্রের সামনেই স্ত্রী সানজিদা আক্তারকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন আশরাফ হোসেন। ঘটনা গোপন করার উদ্দেশ্যে সানজিদার গলায় ওড়না পেঁচিয়ে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলিয়ে সেটা আত্মহত্যা নামে প্রচার করে। এ ঘটনায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়।ঘটনাটির বিষয়ে সন্দেহ হলে আসামিকে ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার করা হয়। ১২ দিন পর সে তার শ্বশুরের সহায়তায় জামিন পায়। জামিন পাওয়ার পরপরই হঠাৎ করে এক দিন সে আত্মগোপনে চলে যায়। এরপর সে আর কখনো তার স্থায়ী ঠিকানা নোয়াখালী ও কর্মস্থল, নিজ সন্তান ও আত্মীয়দের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি।
আশরাফের কথা তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন বিশ্বাস করলেও এপ্রিল মাসে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এলে ঘটনার মোড় পুরোপুরি ঘুরে যায়। তত দিনে আত্মগোপনে চলে যান স্বামী আশরাফ হোসেন।
এদিকে ময়নাতদন্ত রিপোর্টে উঠে আসে, শ্বাসরোধ করে সানজিদা আক্তারকে হত্যা করা হয়েছে। এরপর সোনারগাঁও থানা পুলিশ বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা করে। মামলার তদন্তে জানা যায়, সিলিং ফ্যানের নিচে খাট ছিল এবং ওই খাটের ওপর থেকে সিলিং ফ্যানের উচ্চতা খুবই কম ছিল। ওই অবস্থায় সিলিং ফ্যানের সঙ্গে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করা সম্ভব নয়। পুলিশ নিশ্চিত হয় যে, আশরাফ হোসেন তার স্ত্রীকে হত্যা করেছে।
তার বিরুদ্ধে অপরাধ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় সোনারগাঁও থানা পুলিশ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। আদালত তার মৃত্যুদণ্ডের রায় প্রদান করেন।
র্যাব জানায়, আশরাফ হিসাব বিজ্ঞান বিষয়ে ১৯৯৮ সালে বি.কম (পাস) করে ২০০১ সালে সোনারগাঁওয়ের একটি প্রতিষ্ঠিত সিমেন্ট কোম্পানিতে চাকরি শুরু করে। পরে সে ২০০৩ সালে বিয়ে করে কোম্পানি স্টাফ কোয়ার্টারে থাকতে শুরু করে। প্রথম স্ত্রীর কথা গোপন করে ২০০৬ সালে আশুলিয়ায় দ্বিতীয় বিয়ে করে ছদ্মবেশ হিসেবে সাংবাদিকতাকে বেছে নেন আশরাফ। দীর্ঘ ১৭ বছর পলাতক অবস্থায় সাংবাদিকতার পাশাপাশি বিভিন্ন গার্মেন্টস ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। এ সময় কমপ্লায়েন্স সলুশন নামে একটি কনসালটেন্সি ফার্মও খোলেন তিনি।
র্যাব জানায়, আশরাফ ২০০৬ সালে আশুলিয়ায় সাপ্তাহিক মহানগর বার্তার সহকারী সম্পাদক হিসেবে কাজ শুরু করে। ২০০৯ সালে সে আশুলিয়া প্রেসক্লাবের সদস্য হয়। পরে সংবাদ প্রতিক্ষণ পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত হয়। ২০১৩-১৪ মেয়াদে আশুলিয়া প্রেসক্লাবের সাংগঠনিক সম্পাদক পদে নির্বাচন করে জয়লাভ করে আশরাফ। ২০১৫-১৬ মেয়াদে ক্লাবের সহসম্পাদক পদে নির্বাচন করে পরাজিত হয়। আবার ২০১৬-১৭ মেয়াদে সে নির্বাহী সদস্য নির্বাচিত হয়। ২০২০ সালে দৈনিক সময়ের বাংলা পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে কাজ করে। সে ২০২১-২২ মেয়াদে আশুলিয়া প্রেসক্লাবে পুনরায় সাংগঠনিক সম্পাদক পদে নির্বাচন করে হেরে যায়। বর্তমানে সে আশুলিয়া প্রেসক্লাবের সদস্য এবং স্বদেশ বিচিত্রা পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে কাজ করছে।
র্যাব জানায়, গত বছেরর ২১ ডিসেম্বর আসামি আশরাফকে গ্রেপ্তারের জন্য র্যাবের সহায়তা চায় সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ। এর পরিপ্রেক্ষিতে তাকে গ্রেপ্তারের উদ্দেশ্যে র্যাব গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে। বৃহস্পতিবার রাতে র্যাব-১১ এর একটি দল ঢাকার সাভার থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।