বিয়ের ৩৪ দিনের মাথায় মারা যাওয়া টাঙ্গাইলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী নুর নাহার (১৪) মৃত্যুর আগমূহুর্তে তার নানাকে জড়িয়ে ধরে বলেছিল, নানা ও (স্বামী) মানুষ না জানোয়ার, আমি (ছাত্রী) কত হাতে পায়ে ধরেছি, সহ্য করতে পারছিনা তাও ও (স্বামী) আমারে ছাড়ে নাই। র.ক্ত পড়তাছে, যন্ত্রণায় কুকাইতাছি, দম বন্ধ হয়ে আসছে, আমারে বাঁচতে দেন, তাও ও (স্বামী) আমারে ছাড়ে নাই। ও (স্বামী রাজিব) বলে প্রথম দিকে এরকম সমস্যা হয়ই, কয়েকদিন পর ঠিক সয়ে যাবে, এমনটাই বলতে বলতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে বলে জানান নানা লাল খান।
বিলাপের স্বরে কথাগুলো বলতে বলতে অজ্ঞান হয়ে পড়েন ছাত্রীটির নানা।
তিনি বলেন, আমার মেয়ের জামাইর অভাবের কারণে নুর নাহারকে ছোটবেলাতেই আমার বাড়িতে নিয়ে আসি। দিনমজুরি করেই তাকে লেখাপড়া করাচ্ছিলাম। ছেলে প্রবাসী ও ধনী হওয়ায় আমরা নুর নাহারকে বিয়ে দেই। বিয়ের কয়েকদিন পর থেকে তার র.ক্তক্ষরণ শুরু হয়।
এ জন্য নুর নাহারের শাশুড়ি তাকে গ্রাম্য কবিরাজের ওষুধ খাওয়াচ্ছিল। পরে র.ক্তক্ষরণ বেশি হলে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ডাক্তাররা বলেছেন, অপ্রাপ্ত বয়সে বিয়ের কারণে নুর নাহারের গো.পনাঙ্গ দিয়ে র.ক্তক্ষরণ হচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত আমরা তাকে আর বাঁচাতে পারলাম না। নুর নাহারের স্বামী রাজিব তার লাশ পর্যন্ত দেখতে আসেনি। মূলত স্বামীর কারণেই আমার নাতনির মৃত্যু হয়েছে।
নুর নাহারের স্বামী রাজিব বলেন, আমার বিয়ের পর তার সাথে পাঁচ ছয়দিন মেলামেশা হয়েছে। সে (ছাত্রী) বলছে তার কষ্ট হয়, ব্যথার কথা জানান এবং র.ক্তক্ষরণ দেখা দেয়। বিষয়টি দু’পক্ষের গার্জেনদের জানানো হয়। গার্জিয়ানরা চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন।
নুর নাহারের শাশুড়ি বিলকিস বেগম বলেন, আমি মনে করছি ভুতপেতের আছর করতে পারে, তাই কবিরাজ দিয়ে তাবিজ এনে পরিয়েছি। তাতেও কোন উন্নতি না হওয়ায় তাকে টাঙ্গাইলে ক্লিনিকে নিছি।
নুর নাহারের বাবা বলেন, রাজিবের বাবাকে কয়েকদফা ফোন দিয়েছি। তিনি বলছেন, আপনারা চিকিৎসা করান, আমি গিয়ে কি করব। আর ক্লিনিকে নুর নাহারকে তার পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দিয়ে স্বামী রাজিব কৌশলে সেখান থেকে কেটে পড়ে।
এদিকে নিহত নুর নাহারের স্বামীর বাড়ির পক্ষ থেকে গ্রাম্য সালিশে বিষয়টি মীমাংসার প্রস্তাব অব্যাহত রয়েছে। আইনি প্রক্রিয়ায় এর বিচার না হলে বাল্যবিয়ের বলী অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী নুর নাহারের পরিবার ন্যায়বিচার পাবে না বলে দাবি এলাকার সচেতন মহলের।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামছুন নাহার স্বপ্না বলেন, বাল্যবিয়ের শিকার হয়ে অষ্টম শ্রেণির একজন ছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। শুধু আইন দিয়ে নয়, সামাজিক সচেতনতাই পারে বাল্য বিয়ে নির্মূল করতে। সমাজের সকলকে একযোগে এর মোকাবেলা করতে হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।