নিজস্ব প্রতিবেদক, গাজীপুর: গাজীপুরের কালীগঞ্জে বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় জেসমিন আক্তার রিপা (২৩) নামের এক তরুণীকে বেধড়ক মারধর করায় লজ্জা ক্ষোভে বিষপান করেন সেই তরুণী।
দীর্ঘ ৫ মাস চিকিৎসাধীন থাকার পর শেষে শনিবার সকালে তিনি মারা গেছেন।
শনিবার রাতে লাশ পারিবারিক কবরাস্থানে দাফন করা হয়। এর আগে দুপুরে তার মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠায় কালীগঞ্জ থানা পুলিশ।
নিহত জসমিন আক্তার রিপা উপজেলার মোক্তারপুর ইউনিয়নের বড়গাঁও গ্রামের মো. রফিকুল ইসলামের মেয়ে।
নিহতের খালা রুনা বেগম জানান, রিপার বাবা একজন দিনমজুর। দুই মেয়ে এক ছেলের মধ্যে রিপা মেঝো। দীর্ঘ দিন থেকে ওই এলাকার সন্ত্রাসী বিল্লাল ফরাজী বিয়ের জন্য রিপাকে উত্ত্যক্ত করছিল। এদিকে ২০১৯ সালের ১৪ আগস্ট রিপার অন্যত্র বিয়ে ঠিক হয়।
রিপার বিয়ে খবর জানতে পেরে সন্ত্রাসী বিল্লাল ফরাজী ১০ আগস্ট রিপাদের বাড়ির পাশে রাস্তায় পেয়ে তাকে বিয়ের কথা জানায়। রিপা তার প্রস্তাব প্রত্যাখান করলে বিল্লাল ফরাজী রিপাকে বেধড়ক মারধর করেন। পরে রিপা বিষয়টি তার বাবা মাকে জানান।
পরিবারের লোকজন ঘটনাটি স্থানীয় মেম্বার ও বিল্লালের চাচা হেকিম ফরাজী মেম্বারকে জানালে বিল্লাল আরো ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। বিল্লাল ফরাজী রাতে জেসমিনের মায়ের মোবাইলে ফোন দিয়ে অশ্লীল কথাবার্তা বলেন এবং তাদের হত্যাসহ বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখান। তার মা লাউন্ড স্পিকারের মোবাইলে কথা বলায় পাশে থাকা জেসমিন সব কথাগুলো শুনতে পান। পরে এর অপমানের কথা সইতে না পেরে রাগে ও ক্ষোভে রিপা ঘরে গিয়ে লিচু গাছে দেয়ার জন্য এনে রাখা বিষ পান করেন।
পরে পরিবারের লোকজন দ্রুত তাকে করে কালীগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে সেখানকার চিকিৎসক তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর পরামর্শ দেন।
দেড় মাস বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে আর্থিক সংকটে পড়ে রিপার পরিবার। প্রায় ২ মাস আগে তাকে বাড়িতে নিয়ে আসেন তার পরিবারের লোকজন। বাড়িতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার রিপা মারা যান।
নিহত রিপার মা নুরজাহান আক্তার জানান, রিপাকে মারধরের পর স্থানীয়দের কাছে বিচার না পেয়ে তিনি বাদি হয়ে গত বছর ১৭ সেপ্টেম্বর বিল্লাল ফরাজী, তার চাচা হেকিম ফরাজী মেম্বারসহ সাতজনকে আসামি করে কালীগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলার পর সন্ত্রাসী বিল্লাল ফরাজী দেশ ত্যাগ করে মালয়েশিয়ায় চলে যান। অন্যরা উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে বেরিয়ে এসে রিপার পরিবারকে অব্যাহতভাবে হুমকি প্রদান করেছেন।
এ ব্যাপারে কালীগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. সোহেল মোল্লাহ বলেন, জেসমিনের মরদেহ ময়নাতদন্তের পর লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এই বিষয়ে জেসমিনের মা নুরজাহান আক্তার বিল্লাল ফরাজীকে প্রধান আসামি করে সাতজনের নামে গত বছর ১৭ সেপ্টেম্বর থানায় মামলা দায়ের করেছিল।
স্থানীয় মেম্বার আব্দুল হেকিম ফরাজী ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, বিল্লাল ফরাজী খারাপ প্রকৃতির লোক। জেসমিন তার বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় বিল্লাল তাকে মারধর করে। পরে সে ওই পরিবারকে ভয়ভীতি দেখালে জেসমিন বিষপান করে।
উল্লেখ্য যে, গত ৩১ জুলাই সন্ত্রাসী বিল্লাল ফরাজী মোক্তারপুর ইউনিয়নের বড়গাঁও প্রাথমিক সরকারি বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। বিষয়টি বিল্লালের পরিবারকে জানালে নির্যাতনের শিকার ওই শিক্ষার্থীর মা-বাবাকেও তার মারধর করার অভিযোগ রয়েছে।
স্থানীয়ভাবে বিল্লাল ফরাজী প্রভাবশালী হওয়ায় ভয়ে তার বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলে না। এছাড়া বড়গাঁও এলাকার আলোচিত যুবলীগ কর্মী মামুন হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি বিল্লাল ফরাজী।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।