জুমবাংলা ডেস্ক : এক যুগ আগে মারা যাওয়া স্বামীর অবসর ভাতায় সংসার চলছিল দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার সহিদা বেগমের (৮৪)। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের তালিকায় তাকে মৃত দেখানো হয়েছে। তাই গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে (১৪ মাস) স্বামীর অবসর ভাতা উত্তোলন করতে পারছেন না তিনি, পাচ্ছেন না নাগরিক অন্যান্য সুবিধাও। তাই ১৪ মাস আগে মৃত সহিদা বেগম এখন ঘুরছেন জীবিত হওয়ার আশায়।
সহিদা বেগম উপজেলার আব্দুলপুর ইউনিয়নের নান্দেড়াই গ্রামের ভূমি অফিসের ৪র্থ শ্রেণির অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী মৃত ফজির উদ্দিন ইসাহাকের স্ত্রী। তবে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানও ‘জীবিত’ থাকার বিষয়ে প্রত্যয়নপত্র দিয়েছেন।
সহিদা বেগমের একমাত্র ছেলে সহিদুল ইসলাম ভ্যান চালিয়ে সংসার চালান। সহিদুল ইসলামের স্ত্রী, ছেলে ও মাকে নিয়ে চার সদস্যের পরিবার। তার স্বল্প আয়ে পরিবার পরিচালনা করা কষ্টকর হয়ে পড়েছে। যদিও বাবার অবসর ভাতায় চলছিল সংসার, এখন সেটিও বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চোখে অন্ধকার দেখছেন তারা।
সহিদুল ইসলাম বলেন, ছোটবেলায় বাবা মারা যান। প্রথমে আমাদের অবসর ভাতা প্রদান করা হতো ৩৩৫ টাকা। ধীরে ধীরে তা বাড়ে। হঠাৎ করেই গত বছর করোনা আসার পর পাস বই জমা নেয়। পরে নির্দেশনা মোতাবেক ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খোলা হয়। কিন্তু ব্যাংকে গিয়ে জানা যায়, আমার মাকে মৃত হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।
ব্যাংক থেকে জানানো হয়, মায়ের আইডি কার্ড অনলাইনে সাপোর্ট নিচ্ছে না এবং মৃত দেখাচ্ছে। ফলে আমরা অবসর ভাতা গ্রহণ থেকে বঞ্চিত হই। পরে নির্বাচন অফিসে গেলে চেয়ারম্যানের প্রত্যয়নপত্র, ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি, পাস বই, ব্যাংকের চেকবইসহ যাবতীয় কাগজপত্র জমা দিতে বলে। কিন্তু এখন পর্যন্ত আমার মায়ের ভোটার আইডি কার্ড সেই অবস্থাতেই আছে।
সহিদা বেগম বলেন, আমার স্বামী মারা গেছেন প্রায় একযুগ আগে। তিনি ভূমি অফিসে চাকরি করতেন। তার মৃত্যুর পর আমি অবসর ভাতা গ্রহণ করে কোনোভাবে সংসার পরিচালনা করতাম। আগে পাস বইয়ের মাধ্যমে টাকা তুলতাম। গত বছরে পাস বইয়ের স্থলে ব্যাংকে গিয়ে টাকা উত্তোলনের নিয়ম শুরু হয়। কিন্তু ব্যাংকে গিয়ে টাকা গ্রহণের সময় আমাকে জানানো হয় আমি টাকা পাবো না। কারণ, নির্বাচন কমিশন থেকে আমাকে মৃত দেখানো হয়েছে। আমি জীবিত আছি অথচ কমিশনের এমন গাফেলতির কারণে গত ১৪ মাস ধরে আমি কোনও টাকা তুলতে পারছি না। নির্বাচন অফিস থেকে বিষয়টি সংশোধন করে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত সেটি সংশোধন হয়নি।
আব্দুলপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ ময়েন উদ্দিন শাহ বলেন, আমার কাছে প্রত্যয়নপত্র গ্রহণ করতে এলে আমি প্রত্যয়নপত্র দিয়েছি। এখনও বিষয়টির সুরাহা হয়নি, এটি আমার জানা ছিল না। আমি জানলাম এবং অবশ্যই এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবো।
চিরিরবন্দর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আব্দুল মালেক জানান, চলতি বছরের ২০ জানুয়ারি ওই নারীর নাম ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার জন্য ঢাকার আগারগাঁও নির্বাচন কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। তবে এখনও উত্তর আসেনি। শিগগিরই যাতে সমস্যার সমাধান হয়, সেই চেষ্টা করছি। দ্রুতই বিষয়টির সুরাহা হবে বলে আশ্বাস দেন তিনি। সূত্র : বাংলা ট্রিবিউন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।