মেটাভার্স
খুব দ্রুত প্রযুক্তি জগতের বহুল ব্যবহৃত একটি শব্দে পরিণত হচ্ছে,মেটাভার্স। সম্প্রতি ফেসবুক জানিয়েছে,ইউরোপে মেটাভার্স তৈরি চেষ্টার অংশ হিসেবে দশ হাজার কর্মী নিয়োগ করবে তারা।
অন্যদিকে,মাইক্রোসফট, রোব্লক্স ও এবং ফোর্টনাইট নির্মাতা এপিক গেমস-ও ব্যস্ত নিজেদের ভার্শনের মেটাভার্স তৈরির পরিকল্পনা নিয়ে।কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, মেটাভার্স আদতে কী?অনেক কল্পবিজ্ঞান বই ও চলচ্চিত্রেই দেখানো হয় মানুষ পুরোপুরি নিজেদের তৈরি এক দুনিয়ায় ডুবে রয়েছেন।সেখানে আরও দেখা যায়,বাস্তব দুনিয়া ও মেটাভার্সের মধ্যে দৃশ্যত কোনো পার্থক্য নেই। আলাদা করারও তেমন কোনো উপায় নেই।এরকম বই ও চলচ্চিত্রের উদাহরণ রয়েছে অসংখ্য।কিন্তু মেটাভার্সের বর্তমান বাস্তবতা সে অবস্থা থেকে এখনও অনেকটাই দূরে।ইন্টারনেটে ভার্চুয়াল জগতগুলো দেখলে বাস্তব জগতের বদলে সম্ভবত ভিডিও গেমের কথাই মনে আসবে প্রথমে।মেটাভার্স মূলত ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত একটি পরিভাষা।সাদামাটা অর্থে, ইন্টারনেটের মাধ্যমে প্রবেশ করা যাবে এমন ,শেয়ার্ড ভার্চুয়াল পরিবেশ বলা যেতে পারে একে।ভার্চুয়াল রিয়ালিটি,ভিআর বা অগমেন্টেড রিয়ালিটি ,এআর ব্যবহার করে প্রাণবন্ত করে তোলা হয়েছে এমন কোনো ডিজিটাল স্থান বুঝাতেও অহরহ ব্যবহার করা হয়ে থাকে,মেটাভার্স শব্দটি।অনেকে আবার মেটাভার্স বলতে সুনির্দিষ্টভাবে গেমিং জগতকে বুঝিয়ে থাকেন, যেখানে প্রত্যেক ইউজারের একটি চরিত্র থাকবে যা ঘুরে-ফিরে বেড়াতে পারবে এবং অন্য খেলোয়াড়দের সঙ্গে কথা বলতে ও নানা কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে পারে।এদিকে, পুরোপুরি ব্লকচেন প্রযুক্তি নির্ভর সুনির্দিষ্ট ঘরানার আলাদা মেটাভার্সই রয়েছে। এ ধরনের মেটাভার্সে ক্রিপ্টোকারেন্সি খরচ করে ভার্চুয়াল জমি এবং অন্যান্য ডিজিটাল সম্পদ কিনতে পারেন ইউজাররা। এখন মানুষ যোগাযোগের ক্ষেত্রে অনলাইনের বিভিন্ন ওয়েবসাইট ব্যবহার করেন। যেমন,সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা মেসেজিং অ্যাপ্লিকেশন ইত্যাদি।কিন্তু মেটাভার্সের ধারণাটিই হলো এমন একটি অনলাইন স্থানের যেখানে মানুষের যোগাযোগ হবে বহুমাত্রিক।ইউজাররা এ ধরনের স্থানে কন্টেন্ট শুধু দেখা নয়, তাতে পুরোপুরি নিজেকে নিমজ্জিত করে ফেলতে পারবেন।মেটাভার্সের প্রতি মানুষের বাড়তি আগ্রহকে কোভিড-১৯ মহামারীর একটি ফল-ও বলা যেতে পারে।
Table of Contents
মেটাভার্স কী?
ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ ‘মেটাভার্স কোম্পানি’ নামে সম্প্রতি একটি প্রতিষ্ঠান চালু করার ঘোষণা দিয়ে আলোচনায় এসেছেন। বৃহস্পতিবার তিনি জানান, প্রতিষ্ঠানটির প্রথম উদ্যোগ হবে একটি ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ওয়ার্কস্পেস।
জাকারবার্গের ঘোষণার পর থেকেই ‘মেটাভার্স’ শব্দটি মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু শব্দটির অর্থ বলতে গেলে কেউই জানে না। জানে না, শব্দটির স্রষ্টা কে। মেটাভার্সের ধারণাটি অবশ্য বেশ অনেকদিন ধরেই গেমিং ও কল্পবিজ্ঞান জগতে ব্যবহৃত হচ্ছে।
মেটাভার্সের জন্ম-ইতিহাস
‘মেটাভার্স’ শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন লেখক নিল স্টিফেনস। ২০১৭ সালে ভ্যানিটি ফেয়ারকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে স্টিফেনসন জানান, নিজের একটি বিজ্ঞান-কল্পকাহিনিতে তিনি মেটাভার্স শব্দ এবং এর ধারণা প্রথম ব্যবহার করেন। এরপর প্রযুক্তি দুনিয়ায় শব্দটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ১৯৯২ সালে প্রকাশিত স্নো ক্রাশ উপন্যাসে নিল স্টিফেনসন এমন একটি জগতের কথা বলেন, যেখানে সশরীরে না থেকেও উপস্থিত থাকবেন। সেটাই মেটাভার্স।
গুগল আর্থের স্রষ্টা জানিয়েছেন, স্টিফেনসনের মেটাভার্সের দুনিয়া তাকে গুগল আর্থ তৈরিতে অনুপ্রাণিত করেছে। এ ছাড়া ভার্চুয়াল-রিয়েলিটির পথিকৃৎ ম্যাজিক লিপ ২০১৪ সালে স্টিফেনসনকে চিফ ফিউচারিস্ট হিসেবে নিয়োগ দেন।
মেটাভার্স আসলে কী?
বিবর্তনের পরিক্রমায় ইন্টারনেটের পরের ধাপই হচ্ছে মেটাভার্স। মেটাভার্স হলো ভার্চুয়াল জগৎ। সহজ ভাষায় বোঝাতে বলা যায়, এটি হলো বাস্তবতার সঙ্গে ডিজিটাল সংমিশ্রণ। এ জগতে ব্যবহারকারীরা যার যার চেহারার সঙ্গে মিল রেখে অ্যাভাটার বানাতে পারবেন। অ্যাভাটারগুলোকে ব্যবহারকারীরাই নিয়ন্ত্রণ করবেন।
ব্যবহারকারীরা নিজের ঘরে হাঁটলে, কথা বললে ভার্চুয়াল জগতের অ্যাভাটারও হাঁটবে, কথা বলবে। অর্থাৎ মেটাভার্স হচ্ছে এমন এক অনলাইন জগৎ, যেখানে ভার্চুয়াল দুনিয়ার মধ্যেই গেমিং, অফিসের কাজ এবং যোগাযোগের সবই করা যাবে। এ কাজ করা হবে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি হেডসেট ব্যবহার করে।
মেটাভার্স নিয়ে জাকারবার্গের পরিকল্পনা
সম্প্রতি প্রযুক্তিবিষয়ক দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জাকারবার্গ জানান, তিনি এমন এক ইন্টারনেট ব্যবস্থা তৈরি করবেন, যেখানে ব্যবহারকারী কনটেন্ট দেখার সঙ্গে সঙ্গে তিনি যেন নিজেও এর ভেতরে থাকবেন। ব্যবহারকারী অন্যদের সঙ্গে উপস্থিত থাকার অনুভূতি পাবেন। এ অনুভূতি দ্বিমাত্রিক অ্যাপ বা ওয়েবপেজে সম্ভব নয়।
ভিআর প্রযুক্তি ব্যবহার করে ইনফিনিট অফিস তৈরির কাজে হাত দিয়েছে ফেসবুক। সেখানে ব্যবহারকারী নিজের পছন্দমতো কাজের পরিবেশ তৈরি করে নিতে পারবেন।
জাকারবার্গ জানান, ভবিষ্যতে কেবল ফোনকলে যোগাযোগ করার বদলে এক ব্যবহারকারী অন্য ব্যবহারকারীর পাশে গিয়ে বসতে পারবেন। এ খাতে বিপুল বিনিয়োগ করেছে ফেসবুক। ২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠানটি ভিআর পণ্য নির্মাতা অকুলাস কিনে নিয়েছে। ২০১৯ সালে চালু হয় ফেসবুক হরাইজন সেবা। এই ভার্চুয়াল জগতে অকুলাস হেডসেট ব্যবহার করে কার্টুন অ্যাভাটারের মাধ্যমে কথা বলার বা মেলামেশার সুযোগ পাওয়া যায়।
মেটাভার্সের উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দেহ
অনেকের সন্দেহ, মেটাভার্সের মূল্য উদ্দেশ্য ব্যবহারকারীদের তথ্য সংগ্রহ করা। ভিআর বিশেষজ্ঞ ভেরিটি ম্যাকিনটশের ধারণা, ভিআর বা এআর প্রযুক্তিতে ফেসবুকের বড় বিনিয়োগের একটা বড় কারণ হলো ‘গ্রাহক ডাটা’। এসব প্ল্যাটফর্ম থেকে বিপুল পরিমাণ তথ্য পাওয়া যায়। যেকোনো ডাটা ব্যবসায়ীর এটি রীতিমতো সোনার খনি। এ ছাড়া ফেসবুকের মতো প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো ভার্চুয়াল জগৎকে নিজেদের উপনিবেশ বানিয়ে ফেলতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন ম্যাকিনটশ।
মেটাভার্স এবং ফেসবুক
খুব দ্রুত প্রযুক্তি জগতের বহুল ব্যবহৃত একটি শব্দে পরিণত হচ্ছে ‘মেটাভার্স’। সম্প্রতি ফেইসবুক জানিয়েছে, ইউরোপে মেটাভার্স তৈরি প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে দশ হাজার কর্মী নিয়োগ দেবে তারা। অন্যদিকে, মাইক্রোসফট, রোব্লক্স ও এবং ফোর্টনাইট নির্মাতা এপিক গেইমস-ও ব্যস্ত নিজ নিজ সংস্করণের মেটাভার্স তৈরির পরিকল্পনা নিয়ে।
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, মেটাভার্স আদতে কী?
অনেক কল্পবিজ্ঞান বই ও চলচ্চিত্রেই দেখানো হয় মানুষ পুরোপুরি নিজেদের তৈরি এক দুনিয়ায় ডুবে রয়েছেন। সেখানে আরও দেখা যায়, বাস্তব দুনিয়া ও মেটাভার্সের মধ্যে দৃশ্যত কোনো পার্থক্য নেই। আলাদা করারও তেমন কোনো উপায় নেই। এরকম বই ও চলচ্চিত্রের উদাহরণ রয়েছে অসংখ্য।
কিন্তু মেটাভার্সের বর্তমান বাস্তবতা সে অবস্থা থেকে এখনও অনেকটাই দূরে। ইন্টারনেটে বিদ্যমান ভার্চুয়াল জগতগুলো দেখলে বাস্তব জগতের বদলে সম্ভবত ভিডিও গেইমের কথাই মনে আসবে প্রথমে।
‘মেটাভার্স’ মূলত ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত একটি পরিভাষা। সাদামাটা অর্থে, ইন্টারনেটের মাধ্যমে প্রবেশ করা যাবে এমন ‘শেয়ার্ড ভার্চুয়াল পরিবেশ’ বলা যেতে পারে একে।
ভার্চুয়াল রিয়ালিটি (ভিআর) বা অগমেন্টেড রিয়ালিটি (এআর) ব্যবহার করে প্রাণবন্ত করে তোলা হয়েছে এমন কোনো ডিজিটাল স্থান বুঝাতেও অহরহ ব্যবহার করা হয়ে থাকে ‘মেটাভার্স’ শব্দটি।
অনেকে আবার মেটাভার্স বলতে সুনির্দিষ্টভাবে গেইমিং জগতকে বুঝিয়ে থাকেন, যেখানে প্রত্যেক ব্যবহারকারীর একটি চরিত্র থাকবে যা ঘুরে-ফিরে বেড়াতে পারবে এবং অন্য খেলোয়াড়দের সঙ্গে কথা বলতে ও নানা কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে পারে।
এদিকে, পুরোপুরি ব্লকচেইন প্রযুক্তি নির্ভর সুনির্দিষ্ট ঘরানার আলাদা মেটাভার্সই রয়েছে। এ ধরনের মেটাভার্সে ক্রিপ্টোকারেন্সি খরচ করে ভার্চুয়াল জমি এবং অন্যান্য ডিজিটাল সম্পদ কিনতে পারেন ব্যবহারকারীরা।
মেটাভার্সে কেন?
প্রশ্ন উঠতেই পারে এতোকিছু থাকতে মেটাভার্সের দিকে কেন ঝুঁকছেন মানুষ? এর উত্তরে রয়টার্সের প্রতিবেদনের আলোকে বলা যেতে পারে– মেটাভার্স ভক্তরা এটিকে ইন্টারনেট উন্নয়নের পরবর্তী ধাপ হিসেবে দেখছেন।
বর্তমানে মানুষ যোগাযোগের ক্ষেত্রে অনলাইনের বিভিন্ন ওয়েবসাইট ব্যবহার করেন। যেমন- সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা মেসেজিং অ্যাপ্লিকেশন ইত্যাদি। কিন্তু মেটাভার্সের ধারণাটিই হলো এমন একটি অনলাইন স্থানের যেখানে মানুষের যোগাযোগ হবে বহুমাত্রিক। ব্যবহারকারীরা এ ধরনের স্থানে কন্টেন্ট শুধু দেখা নয়, তাতে পুরোপুরি নিজেকে নিমজ্জিত করে ফেলতে পারবেন।
স্বভাবতই মানুষের আগ্রহ তৈরি হয়েছে একে ঘিরে। মেটাভার্সের প্রতি মানুষের বাড়তি আগ্রহকে কোভিড-১৯ মহামারীর একটি ফল-ও বলা যেতে পারে। বহু মানুষ এই সময়টিতে দূর থেকেই দাপ্তরিক কাজ সেরেছেন। বিশ্বের বহু শিক্ষার্থীও পড়ালেখা চালিয়ে গেছেন এ প্রক্রিয়াতেই।
এ পরিস্থিতিতে অনলাইন যোগাযোগকে আরও প্রাণবন্ত করার চাহিদাও দেখা দিয়েছে মানুষের মধ্যে।
কারা যুক্ত হচ্ছেন মেটাভার্সের সঙ্গে?
বহু বিনিয়োগকারী এবং প্রতিষ্ঠানের নজর কেড়েছে মেটাভার্স ধারণাটি। অনেক ক্ষেত্রেই আগ্রহীরা পরবর্তী বড় উদ্যোগের অংশ হতে চাইছে।
ফেইসবুক প্রধান মার্ক জাকারবার্গ জুলাইয়ে জানান, আগামী পাঁচ বছরের মতো সময়ের মধ্যেই তার প্রতিষ্ঠান সামাজিক মাধ্যম প্রতিষ্ঠান থেকে মেটাভার্স প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত হবে।
এদিক, সিলিকন ভ্যালিতেও মেটাভার্স বেশ জনপ্রিয় একটি পরিভাষা। এ ধরনের একটি পরিকল্পনার ব্যাপারে জানিয়েছে মাইক্রোসফটও। ডিজিটাল ও বাস্তব বিশ্বকে মিলিয়ে দেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করেছে মার্কিন এ সফটওয়্যার জায়ান্ট।
জনপ্রিয় শিশুবান্ধব গেইম রোব্লক্স নিজেদেরকে মেটাভার্স প্রতিষ্ঠান হিসেবেই দাবি করে থাকে। অন্যদিকে, ফোর্টনাইট নির্মাতা এপিক গেইমসেরও দাবি, তারা মেটাভার্সের একটি অংশ।
সঙ্গীতশিল্পীরা এ ধরনের প্ল্যাটফর্মে ভার্চুয়াল কনসার্ট করার সুযোগ পাচ্ছেন। উদাহরণ হিসেবে সেপ্টেম্বরের এক আয়োজনের কথা বলা যেতে পারে। ভার্চুয়াল ওই আয়োজনে ফোর্টনাইটে ভার্চুয়ালি হাজির হয়েছিলেন সঙ্গীতশিল্পী আরিয়ানা গ্রান্ডে। এপিক গেইমস জানিয়েছে, লাখো মানুষ অংশ নিয়েছিলেন ওই কনসার্টে।
বিশ্বের বড় বড় ফ্যাশন প্রতিষ্ঠানগুলোও ‘ভার্চুয়াল ক্লোথিং’ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছে। এতে মেটাভার্স পরিবেশে মানুষের অ্যাভাটারকে বিভিন্ন কাপড় পরিয়ে দেখা যাবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।