জুমবাংলা ডেস্ক : তীব্র যানজটের শহরে মেট্রোরেল মানুষের কাছে আস্থার বাহন হলেও কখনো কখনো যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে দুর্ভোগে পড়েন যাত্রীরা। যার মধ্যে অন্যতম মেট্রোরেল ঠিক জায়গায় না থামা। প্রায়ই স্টেশনের করিডরের বাহিরে ভুল জায়গায় থামতে দেখা যায় মেট্রোরেলকে। তখন ট্রেনকে আগে-পিছে নিয়ে স্টেশনের গেট ও মেট্রোরেলের গেটের সামঞ্জ্যতাকে ঠিক করতেই লেগে যায় অনেক সময়। এতে যাত্রীরা বিরক্ত ও মাঝে মাঝে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েন।
মঙ্গলবার (২১ মে) দুপুর ১টা ২৭ মিনিটে এমনই এক দুর্ঘটনা ঘটে। মতিঝিলগামী মেট্রোরেল উত্তরা থেকে ছেড়ে শাহবাগ স্টেশনে এলে স্টেশনের গেট বরাবর না থেমে একটু দূরে গিয়ে থামে।
এতে নির্দিষ্ট স্থানে মেট্রোরেল না থামায় যাত্রীরা স্টেশন থেকে নামতে পারছিলেন না। আতঙ্কিত হয়ে পড়ে অনেক যাত্রী। প্রায় ৫ মিনিট বন্ধ থাকার পর ট্রেনটিকে পিছনে নিয়ে এসে স্টেশনের গেট বরাবর থামানো হয় বলে অভিযোগ করেন ইরফান আহমেদ।
শুধু আজকের ঘটনাই নয়, প্রায়ই মেট্রোরেলে এমন ঘটনা ঘটতে দেখা যায় বলে মন্তব্য করেন মেট্রোরেলের নিয়মিত এ যাত্রী। কারওয়ানবাজারে বেসরকারি এক প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন ইরফান আহমেদ। থাকেন মিরপুরে।
তিনি বলেন, আমি মেট্রোরেলের নিয়মিত যাত্রী। প্রায়ই মেট্রোরেল স্টেশনের নির্দিষ্ট স্থানে না থেমে একটু আগে পরে থামে। শুরুর দিকে কম দেখলেও এখন এমন ঘটনা নিয়মিতই ঘটে। এতে অনেক সময় যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। কেউ কেউ চালকের অদক্ষতাকে দায়ী করেন। কিন্তু আমার কথা দীর্ঘদিন ধরে হওয়া এ সমস্যার সমাধান কেন করা হচ্ছে না।
আসলে কেন এমন হয়? সমস্যার সমাধান কেন এখনও করা হচ্ছে না জানতে যোগাযোগ করেন ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের জিএম (অপারেশন) মোহাম্মদ ইফতিখার হোসেনের সঙ্গে।
বারবার কেন ভুল জায়গায় থামে মেট্রোরেল এমন প্রশ্ন করা হলে ইফতিখার হোসেন বলেন, আসলে এ সমস্যা আমি দেখি না। যারা মেইন্টেনেন্সের দায়িত্বে আছেন তারা বলতে পারবেন কেন সমস্যা হচ্ছে। তবে এটা প্রায়ই হয়। আপনারা এটা লিখে দিতে পারেন। যে জায়গায় থামার কথা সে জায়গায় থামে না। অন্য জায়গায় থামে। আবার
কিছুক্ষণ পর টেনে নিয়ে গিয়ে ঠিক জায়গায় থামাতে হয়। শুরুর দিক থেকেই এ সমস্যা হয়ে আসছে।
এরপর যোগাযোগ করা হয় ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের ইলেকট্রিক্যাল, সিগন্যাল, টেলিকমিউনিকেশন অ্যান্ড ট্র্যাকের অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালক মো. জাকারিয়ার সঙ্গে।
মেট্রোরেল যেখানে থামার কথা সেখানে কেন থামছে না, এর পেছনে আসলে কারণ কী জানতে চাইলে তিনি বলেন, আসলে এই সমস্যাটাকে আমরা টেকনিক্যাল ভাষায় ওভার শুটিং ও আন্ডার শুটিং বলে থাকি। ওভার শুটিং হলো যেখানে ট্রেন থামার কথা তার সামনে গিয়ে থামে, আর আন্ডার শুটিং হলো যেখানে ট্রেন থামার কথা তার পেছনে গিয়ে থামে। এ সমস্যাটি আমাদের টেকনিক্যাল ইনভেস্টিকেশনে আছে। আমরা এটি নিয়ে কাজ করছি। যারা ট্রেন বানিয়েছে ও যারা সিগন্যালিং সিস্টেম দিয়েছে তারাও চেষ্টা করছে কেন এটা ঘটছে। ইতোমধ্যে আমরা ওভার শুটিং নিয়ে কাজ শুরু করেছি। আশা করি খুব শিগগিরই সমাধান হয়ে যাবে।
অনেক সময় ট্রেনের দরজা প্ল্যাটফর্মের দরজার অল্প কিছু দূরত্বে থামে। তবে এতে দরজা খুলে যায়। যাত্রীরাও ওঠা-নামা করতে পারেন। কিন্তু তারপরও কেনো নির্দিষ্ট স্থানে ট্রেন থামে না জানতে চাইলে মো. জাকারিয়া বলেন, ট্রেনের দরজা ও প্ল্যাটফর্মের দরজার দৈর্ঘ্য সমান না। প্ল্যাটফর্মের দরজা ট্রেনের দরজা থেকে ৮০০ মিটার পার্থক্য। তাই দুইটার এলাইনমেন্ট কখনোই এক হবে না। আগে পরে থাকবেই। এটি কোনো সমস্যা না। যদি না প্ল্যাটফর্মের দরজা অতিক্রম করে না ফেলে। এমনটা ঘটলে দরজা খুলবে না। তাই এটি নিয়ে আমরা কাজ করছি। তবে যদি কিছুটা গ্যাপে থেকে দরজা খুলে তাহলে সেটি সমস্যা না।
তিনি বলেন, ট্রেনের দরজা হলো ১ মিটার আর প্ল্যাটফর্মের দরজা ১.৮ মিটার। তাই সেন্টার থেকে ট্রেনের দরজা ৩৭০ মিটার ডানে কিংবা বামে থাকলে দরজা খুলবে। এভাবেই ডিজাইন করা আছে। তবে যদি সেন্টারে খোলে তাহলে সেটি অবশ্যই ভালো। কিন্তু না থামলে সমস্যা নেই।
এ সমস্যাটিকে চালকের অদক্ষতা হিসেবে ধরা হয়, এটি ঠিক কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ সমস্যার সাথে চালকের অদক্ষতা বলা যাবে না। তবে যদি ম্যানুয়াল মুডে চলে তাহলে চালকের অদক্ষতা বলতে পারেন। কারণ এক্ষেত্রে চালক থামায়। কিন্তু সাধারণত ট্রেন অটো মুডেই চলে থাকে। সিস্টেমই বলে দেয় কখন থামতে হবে। ট্রেন সেই অনুযায়ী নিজে নিজে থামে। তখন এটিকে আমরা যান্ত্রিক ত্রুটি বলছি।
মো. জাকারিয়া বলেন, কিন্তু সব সময় অটো মুডে ট্রেন চালানো যায় না। এতে চালকরা অপারেট কীভাবে করতে হয় সেটি ভুলে যেতে পারে। আপনি যদি অনেকদিন কম্পিউটারে টাইপ না করেন তাহলে কোথায় অ,আ সেটি ভুলে যাবেন। মনে করতে পারবেন না। তাই মাঝে মাঝে চর্চার মধ্যে থাকতে হয়। ঠিক তেমনি মাঝে মাঝে চালকরাও দীর্ঘদিন অটো মুডে চালানোর পর ম্যানুয়াল মুডে চালালে এমন ভুল হয়ে থাকে। চালকদেরও সে দক্ষতা তৈরিতে আমরা সতর্ক করছি। সূত্র : সময় সংবাদ
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।