রঞ্জু খন্দকার, গাইবান্ধা থেকে : দুপাশে বিস্তৃত ফসলের মাঠ। এই মুহূর্তে সেখানে হেলেদুলে মাথায় শীষ তুলে দোল খাচ্ছে সবুজ ধানখেত। মাঠের বুক চিরে চলে গেছে মেঠোসড়ক। সেই রাস্তার দুই পাশে লাগানো হচ্ছে সারি সারি সুপারিগাছ।
গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলায় মসজিদ কমিটির উদ্যোগে ওই সড়কের দুপাশে শতাধিক সুপারিগাছের চারা রোপণ করা হচ্ছে। এতে স্বেচ্ছাশ্রম দিচ্ছে শিশুরা।
এলাকার লোকজন আশা করছেন, রাস্তাটির দুপাশ সুপারিশোভিত হলে সৌন্দর্য যেমন বাড়বে, তেমনি নির্মল বায়ুসেবনের পাশাপাশি আর্থিক সুবিধাও পাওয়া যেতে পারে। এ সুবিধা মসজিদের তহবিলে যোগ হবে।
ওই মসজিদের কমিটির যুগ্মসচিব আহসান হাবীব মণ্ডল। তিনি নিজে গর্ত খুঁড়ে চারা রোপণ কর্মসূচির শুরু করেন। তিনি জানান, পুরো রাস্তাটির দুপাশে তাঁরা পর্যায়ক্রমে একটি সুপারি, একটি নারিকেল– এমন বিন্যাসে গাছ লাগাতে চান। আপাতত তাঁরা সুপারি দিয়ে শুরু করেছেন।
মসজিদটি কুমারগাড়ী গ্রামে অবস্থিত। নাম মিয়ারবাড়ি জামে মসজিদ। এখানে যাতায়াতের ‘মিয়ার জাঙাল’ সড়কটির দুপাশে ওই বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি চলছে। গতকাল শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর খতিব মো: শাজাহানের দেওয়া সুপারির চারা রোপণের মধ্য দিয়ে এ কাজের উদবোধন করা হয়েছে।
খতিব শাহজাহান বলেন, গাছপালা লাগানো অশেষ সওয়াবের কাজ। এটি সাদকায়ে জারিয়া হিসেবে কাজ করে। এলাকাবাসী যদি এতে সমর্থন দিয়েও সহযোগিতা করেন, তবে এর সওয়াবের ভাগীদার সবাই হবেন।
স্থানীয় কয়েকজন জানান, মিয়ারবাড়ি জামে মসজিদ একসময় এই এলাকার প্রধান মসজিদ ছিল। তখন আশপাশের কয়েক গ্রামের মুসল্লি এখানে নামাজ আদায় করতে আসতেন। কালক্রমে এদিকটায় লোকজনের সমাগম কমে যায়। এখানে আসা-যাওয়ার রাস্তা সংকটও একটা কারণ। সম্প্রতি মিয়ার জাঙাল নামে পরিচিত সড়কটিতে স্থানীয় সরকারের উদ্যোগে মাটি কাটা হয়। এখন সড়কটির দুপাশে চারা লাগানো হচ্ছে।
ওই মসজিদের মুসল্লিদের একজন বালাবামুনিয়া পাশের গ্রামের স্বপন সরকার। তিনি জানান, দুই সপ্তাহ আগে শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর মসজিদ কমিটির অনুমতি নিয়ে কুমারগাড়ী ১নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলমগীর খন্দকার মিয়ার জাঙালের দুপাশে পর্যায়ক্রমে একটি করে সুপারি ও নারিকেল গাছ রোপণের প্রস্ট্যাব তোলেন। মুসল্লিরাও এতে সায় দেন। এরপরই এ উদ্যোগ বাস্তবায়নের ব্যবস্থা নেওয়া হলো।
মুসল্লিদের কয়েকজন জানান, গতকাল জুম্মার নামাজ শেষে খতিবের দেওয়া চারাগুলো রোপণের সিদ্ধান্ত হয়। তাৎক্ষণিকভাবে সেগুলো লাগানো হয়। এরপর বিকেলে আলমগীর স্যারের উদ্যোগে তাঁরই প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিশুরা আরও চারা নিয়ে এসে রোপণ করে। এসব চারার মধ্যে আলমগীর ও পাশের বাচ্চু ব্যাপারীর দেওয়া গাছ রয়েছে। শিশুরা খুব উৎসাহ নিয়ে কাজ করে।
মসজিদটির মুসল্লিদের একজন পাশের ডুমুরগাছা গ্রামের বাসিন্দা ও আশার আলো মডেল স্কুলের শিক্ষক মজিবর রহমান। তিনি বলেন, সামাজিক কাজে শিশুদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে পারলে ভবিষ্যৎ সমাজ অনেক সুন্দর হবে বলে ধারণা করি। শিশুরা কাদামাটি। ওদের যেভাবে গড়া যাবে, তেমনভাবেই গড়ে উঠবে। শিশুদের স্বেচ্ছাশ্রমে গড়ে ওঠা এই সুপারিবাগান সৌন্দর্য বাড়ানোর পাশাপাশি নির্মল অক্সিজেন দেবে। ফাঁকা মাঠে এসব গাছ বজ্রনিরোধক হিসেবেও কাজ করতে পারে। এ ছাড়া সুপারি বিক্রি করে যদি আয় হয়, তা মসজিদের তহবিলেও কাজে লাগবে।
এই মসজিদ কমিটির সচিব কুমারগাড়ী গ্রামের বাসিন্দা ও গাইবান্ধার আসাদুজ্জামান গার্লস হাইস্কুল এন্ড কলেজের সহকারী প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর কবির। তিনি বলেন, মুসল্লিদের পক্ষ থেকে মাঝেমধ্যে এমন সুন্দর প্রস্তাব আসে। আমরা সেগুলো উৎসাহিত করি। এতে সমাজ আরও সুন্দর ও সার্থক হয় বলে আমাদের ধারণা।
রাজধানীর উত্তরায় বজ্রপাতে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীর মৃত্যু
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।