সকালে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে যখন চুল আঁচড়াতে গেলেন, দেখলেন ঝরে যাওয়া চুলের গুচ্ছ হাতে? নাকি রোদ-ধুলোবালির কড়ালে চুল হয়ে গেছে রুক্ষ, প্রাণহীন, ডগা ফাটা? বাংলাদেশের আর্দ্র আবহাওয়া, দূষণ, রোদের তীব্রতা আর ব্যস্ত জীবনের চাপে আমাদের চুলের যত্ন নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। কিন্তু জানেন কি? অল্প কিছু সহজ টিপস আর নিয়মিত যত্নেই ফিরে পেতে পারেন সেই কোমল, ঘন আর স্বাস্থ্যোজ্জ্বল চুলের মোহনায়তা, যা আপনার ব্যক্তিত্বে যোগ করে এক অনন্য মাত্রা। চুল শুধু সৌন্দর্যের প্রতীক নয়, এটি আত্মবিশ্বাসেরও প্রতীক। এই লেখায় আমরা শিখবো কীভাবে ঘরোয়া উপাদান, সঠিক পদ্ধতি আর একটু সচেতনতায় নিতে পারি মেয়েদের চুলের যত্ন, আরও সহজভাবে।
চুলের প্রকারভেদ বুঝে নিন: আপনার চুলের ভাষা শোনা জরুরি
- সঠিক যত্নের প্রথম সূত্র: আপনার চুল আসলে কী চায়? শুষ্ক, তৈলাক্ত না সংমিশ্রিত? সোজা, কোঁকড়ানো না ঢেউ খেলানো? নাকি রং করা বা কেমিক্যাল ট্রিটমেন্ট নেওয়া? প্রতিটি চুলের ধরনের চাহিদা ভিন্ন।
- শুষ্ক চুল: রুক্ষতা, ফাটা ডগা, চুল আঁচড়াতে কষ্ট, নিস্তেজ ভাব। বাংলাদেশের শীতকাল বা এসি-র ঘর শুষ্কতা বাড়ায়। দরকার গভীর ময়েশ্চারাইজিং। নারকেল তেল, ডিপ কন্ডিশনিং মাস্ক (সপ্তাহে ১-২ বার)।
- তৈলাক্ত চুল: চুল দ্রুত আঠালো হয়ে যাওয়া, শিকড়ে তেল জমা, ভিজে ভাব। আর্দ্র গ্রীষ্মে সমস্যা বাড়ে। দরকার মৃদু ক্লিনজিং শ্যাম্পু (SLS/SLES মুক্ত), শিকড়ে শ্যাম্পু, ডগায় কন্ডিশনার। অতিরিক্ত শ্যাম্পু করা এড়িয়ে চলুন।
- সংমিশ্রিত চুল: শিকড়ে তৈলাক্ত, ডগায় শুষ্ক। সবচেয়ে কমন টাইপ। দরকার ব্যালেন্সড কেয়ার। শিকড় পরিষ্কার রাখুন, ডগায় এক্সট্রা ময়েশ্চার।
- কোঁকড়ানো/কর্লি চুল: প্রাকৃতিকভাবে শুষ্কতার প্রবণতা বেশি। দরকার প্রচুর ময়েশ্চার, লিভ-ইন কন্ডিশনার, ডিট্যাংলিং, স্যাটিন বোনেট/স্কার্ফ। কোকোনাট অয়েল বা শিয়া বাটার ভালো কাজ করে।
- রং করা/কেমিক্যাল ট্রিটেড চুল: দুর্বল, শুষ্ক, ভঙ্গুর। দরকার বিশেষায়িত কেয়ার (কোলাজেন, কেরাটিন সমৃদ্ধ প্রোডাক্ট), অতিরিক্ত ময়েশ্চারাইজিং, গরম সরঞ্জাম থেকে দূরে থাকা, নিয়মিত ট্রিমিং।
দৈনিক ও সাপ্তাহিক যত্নের রুটিন: সহজ টিপস গুলো মেনে চলুন
শ্যাম্পুইংয়ের সঠিক কলাকৌশল (হেডিং: H3 – শ্যাম্পু করছেন ঠিকঠাক?):
- পানি: খুব গরম পানি চুলের প্রাকৃতিক তেল ধুয়ে নেয়, শুষ্কতা বাড়ায়। হালকা কুসুম গরম বা ঠাণ্ডা পানি ব্যবহার করুন।
- শ্যাম্পু: মাথার তালু ও শিকড়ে শ্যাম্পু লাগান, হালকা ম্যাসাজ করুন নখ নয়, আঙুলের ডগা দিয়ে। দীর্ঘ চুল হলে শ্যাম্পু ফেনা ডগায় আনা যেতে পারে, কিন্তু শ্যাম্পু সরাসরি ডগায় লাগাবেন না।
- পরিমাণ: এক মুঠোর বেশি নয়। প্রয়োজনে দুইবার শ্যাম্পু করুন (প্রথমবার ময়লা সরায়, দ্বিতীয়বার পুষ্টি দেয়)।
- ধোয়া: খুব ভালো করে ধুয়ে ফেলুন। শ্যাম্পুর অবশেষ চুল শুষ্ক ও ভারী করে।
কন্ডিশনিং: আর্দ্রতার চাবিকাঠি (হেডিং: H3 – কন্ডিশনার ছাড়া যাবে না!):
- কোথায় লাগাবেন: কান থেকে নিচে, বিশেষ করে ডগায়। শিকড়ে লাগালে চুল আঠালো হয়ে যেতে পারে।
- কীভাবে: চুল থেকে অতিরিক্ত পানি চিপে নিন। তারপর কন্ডিশনার লাগিয়ে কংবা দিয়ে আচড়ান। ২-৩ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন (লিভ-ইন কন্ডিশনার বাদে)।
- কোল্ড রিন্স: শেষ ধোয়ায় হালকা ঠাণ্ডা পানি চুলের কিউটিকল বন্ধ করে দেয়, চুলে চকচকে ভাব আনে।
চুল শুকানো: নরম হাতের স্পর্শ (হেডিং: H3 – ভেজা চুলের সাথে সাবধান!):
- রগড়ানো নয়: ভেজা চুল খুব নাজুক। তোয়ালে দিয়ে জোরে রগড়ানো বা ঘষলে চুল ভেঙে যায়, ফাটে। তোয়ালে দিয়ে চেপে চেপে পানি শুষে নিন বা মাইক্রোফাইবার তোয়ালে ব্যবহার করুন।
- কম্বিং: ভেজা চুল আঁচড়াবেন না। চুল প্রায় ৮০% শুকনো হলে চওড়া দাঁতের কংবা দিয়ে ডগা থেকে শুরু করে উপরে উঠে আসুন ধীরে ধীরে।
- ব্লো ড্রাই: খুব দরকার না হলে এড়িয়ে চলুন। দরকার হলে লো হিট সেটিং ব্যবহার করুন এবং চুল থেকে অন্তত ৬ ইঞ্চি দূরে রাখুন। হিট প্রটেক্ট্যান্ট স্প্রে ব্যবহার করলে ভালো।
- সাপ্তাহিক গভীর যত্ন (হেডিং: H3 – সপ্তাহে একবার বিশেষ ট্রিটমেন্ট):
- তেল মালিশ (হেয়ার ওয়েলিং): সপ্তাহে অন্তত একবার (শুষ্ক চুলের জন্য ২ বার) তেল মালিশ করুন। নারকেল তেল (বিজ্ঞানসম্মতভাবে প্রমাণিত চুলের প্রোটিন লস রোধ করে), আমলকি তেল, অলিভ অয়েল, আর্জান অয়েল বা আপনার পছন্দের তেল গরম করে মাথার তালু ও চুলের দৈর্ঘ্যে লাগিয়ে ভালো করে ম্যাসাজ করুন। কমপক্ষে ৩০ মিনিট থেকে সারারাত রেখে শ্যাম্পু করে ফেলুন। নারকেল তেলের উপকারিতা নিয়ে গবেষণা – NCBI
- হেয়ার মাস্ক/প্যাক: সপ্তাহে একবার গভীর পুষ্টির জন্য হেয়ার মাস্ক ব্যবহার করুন। বাজারজাত পণ্য বা ঘরোয়া মাস্ক (দই, মধু, কলা, ডিম ইত্যাদি) ব্যবহার করতে পারেন। ২০-৩০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন।
- প্রোটিন ট্রিটমেন্ট (প্রয়োজনে): খুব দুর্বল, রং করা বা কেমিক্যাল ট্রিটেড চুলের জন্য মাসে একবার প্রোটিন ট্রিটমেন্ট (কেরাটিন, কলোজেন সমৃদ্ধ) ব্যবহার করুন। তবে অতিরিক্ত প্রোটিন চুল শক্ত ও ভঙ্গুর করে দিতে পারে।
ঘরোয়া সমাধান: দাদী-নানীর ঐতিহ্যবাহী টিপস (হেডিং: H2 – চুলের যত্নে ঘরোয়া টোটকা: সহজলভ্য উপাদানে ঝলমলে চুল)
- নারকেল তেল + আমলকি: এক কাপ নারকেল তেলে ২-৩ টি শুকনো আমলকি ভিজিয়ে ১ সপ্তাহ রোদে রাখুন। এই তেল মালিশ করুন। আমলকি ভিটামিন সি সমৃদ্ধ, চুল পড়া রোধ করে এবং প্রাকৃতিক কন্ডিশনার।
- দই + মধুর প্যাক: ৩ টেবিল চামচ টকদই + ১ টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে চুলে লাগান। ৩০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। দই প্রোটিন ও ল্যাকটিক অ্যাসিড দেয়, মধু ময়েশ্চারাইজ করে।
- ডিমের প্যাক: ১টি ডিম ভালো করে ফেটে চুলে লাগান। ২০-৩০ মিনিট পর হালকা শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। ডিম প্রোটিন, বায়োটিন ও ফ্যাটি অ্যাসিডে ভরপুর, চুল শক্ত করে ও প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা আনে।
- পেঁয়াজের রস (চুল পড়া কমাতে): ১-২টি পেঁয়াজ ব্লেন্ড করে রস বের করুন। মাথার তালুতে লাগিয়ে ৩০ মিনিট রেখে শ্যাম্পু করুন। সালফার সমৃদ্ধ পেঁয়াজ রক্ত সঞ্চালন বাড়ায় ও ফলিকল শক্তিশালী করে (কয়েক মাস নিয়মিত ব্যবহারে ফল পাবেন)। গন্ধ এড়াতে শ্যাম্পুর পরে ভালো কন্ডিশনার ব্যবহার করুন।
- অ্যালোভেরা জেল: তাজা অ্যালোভেরা পাতা থেকে জেল বের করে সরাসরি মাথার তালু ও চুলে লাগান। ৩০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। অ্যালোভেরা ময়েশ্চারাইজ করে, স্ক্যাল্প সুস্থ রাখে ও pH ব্যালেন্স করে।
খাদ্যাভ্যাস: সুন্দর চুলের ভিত্তি ভেতর থেকে (হেডিং: H2 – চুলের খাদ্য: পুষ্টিতে ভরো চুল পাবেন)
আপনার চুল যা খায়, আপনি তাই খান! ভেতর থেকে পুষ্টি না পেলে বাইরের যত্নে খুব একটা লাভ হয় না।
- প্রোটিন: চুলের মূল উপাদান কেরাটিন প্রোটিন। ডিম, মাছ, মুরগি, ডাল, বাদাম, দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার পর্যাপ্ত খান।
- আয়রন: আয়রনের অ্যানিমিয়া চুল পড়ার বড় কারণ। সবুজ শাকসবজি (পালং, লাল শাক), লাল মাংস, কলিজা, ডাল, বীট।
- ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড: স্ক্যাল্পের আর্দ্রতা বাড়ায়, চুলের উজ্জ্বলতা ফেরায়। ফ্যাটি ফিশ (স্যালমন, ইলিশ, টুনা), আখরোট, ফ্লাক্সসিড, চিয়া সিড।
- বায়োটিন: চুল ও নখের স্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য। ডিমের কুসুম, বাদাম, বীজ, মিষ্টি আলু, পালং শাক।
- ভিটামিন এ: সিবাম উৎপাদনে সাহায্য করে, প্রাকৃতিক কন্ডিশনার। গাজর, মিষ্টি কুমড়া, আম, পালং শাক।
- ভিটামিন সি: কোলাজেন উৎপাদনে সাহায্য করে (চুলের ফলিকলকে শক্তিশালী করে) ও আয়রন শোষণে সাহায্য করে। আমলকি, লেবু, পেয়ারা, কমলা, ক্যাপসিকাম।
- ভিটামিন ই: অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, স্ক্যাল্পে রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়। বাদাম, বীজ, অ্যাভোকাডো, ভেজিটেবল অয়েল।
- জিঙ্ক: চুলের টিস্যুর বৃদ্ধি ও মেরামতে সাহায্য করে। ডাল, বীজ, বাদাম, দুগ্ধজাত খাবার, গোটা শস্য।
- পানি: পর্যাপ্ত পানি পান (দিনে ৮-১০ গ্লাস) সমগ্র শরীরের সাথে চুলকেও আর্দ্র রাখে।
স্টাইলিং ও রক্ষণাবেক্ষণ: ক্ষতির হাত থেকে বাঁচান (হেডিং: H2 – স্টাইলিংয়ের সময় সতর্কতা: চুলের ক্ষতি এড়ানোর টিপস)
- গরম সরঞ্জাম (স্টাইলিং আয়রন, ব্লো ড্রায়ার, কার্লিং আয়রন): এগুলো চুলের আর্দ্রতা শুষে নেয়, চুলকে শুষ্ক ও ভঙ্গুর করে তোলে। ব্যবহার সীমিত করুন। ব্যবহারের আগে অবশ্যই হিট প্রটেক্ট্যান্ট স্প্রে ব্যবহার করুন। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বেছে নিন।
- টাইট হেয়ারস্টাইল (পনি টেইল, টাইট ব্রেইড, বুন): ক্রমাগত টান পড়লে চুলের গোড়া দুর্বল হয়ে পড়ে, ট্র্যাকশন অ্যালোপেসিয়ার ঝুঁকি বাড়ে। ঢিলেঢালা হেয়ারস্টাইল বেছে নিন। স্লিপিং বোনেট বা সিল্ক স্কার্ফ ব্যবহারে ঘর্ষণ কমে।
- কেমিক্যাল ট্রিটমেন্ট (পার্ম, স্ট্রেইটেনিং, ব্লিচিং): এগুলো চুলের কেরাটিন বন্ধন ভেঙে দেয়, চুলকে স্থায়ীভাবে দুর্বল করে। পারলে এড়িয়ে চলুন। করালেও অভিজ্ঞ স্যালুনে করান এবং পরে এক্সট্রা কেয়ার নিন।
- ব্রাশিং/কম্বিং: ভেজা অবস্থায় নয়। ডগা থেকে শুরু করে ধীরে ধীরে উপরে উঠুন। নাইলনের ব্রাশের চেয়ে কাঠের দাঁতের কংবা বা ব্রিস্টল ব্রাশ ভালো। দিনে ২-৩ বারই যথেষ্ট।
- রোদ, ধুলোবালি ও দূষণ: রোদের অতিবেগুনি রশ্মি চুলের কেরাটিনকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। বাইরে বের হলে স্কার্ফ, হ্যাট বা ছাতা ব্যবহার করুন। সপ্তাহে একবার ক্ল্যারিফাইং শ্যাম্পু ব্যবহার করুন দূষণের প্রভাব দূর করতে।
- ট্রিমিং: প্রতি ৮-১২ সপ্তাহে ডগা কেটে ফেলুন (ট্রিমিং)। ফাটা ডগা উপরে উঠে চুল আরও ভেঙে যেতে পারে। নিয়মিত ট্রিমিং চুলকে স্বাস্থ্যকর ও লম্বা হতে সাহায্য করে।
বিশেষজ্ঞের পরামর্শ: কখন ডাক্তার দেখাবেন? (হেডিং: H3 – চিকিৎসকের পরামর্শ কখন নেবেন?)
- হঠাৎ অতিরিক্ত চুল পড়া: দিনে ১০০টির বেশি চুল পড়া স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি। হাতের আঙুলে চুলের গুচ্ছ উঠে আসা।
- মাথার তালুতে দৃশ্যমান টাক পড়া: নির্দিষ্ট জায়গায় চুল পাতলা হয়ে যাওয়া বা টাকের চাকা দেখা দেওয়া।
- মাথার তালুতে চুলকানি, লালভাব, ফুসকুড়ি বা ব্যথা: স্ক্যাল্প ইনফেকশন (ফাঙ্গাল, ব্যাকটেরিয়াল), সোরিয়াসিস, একজিমা বা অ্যালার্জির লক্ষণ হতে পারে।
- চুল খুব দ্রুত ভঙ্গুর হয়ে যাওয়া: পুষ্টির ঘাটতি বা অন্তর্নিহিত কোনো স্বাস্থ্য সমস্যার ইঙ্গিত হতে পারে।
- কোনো ঘরোয়া বা বাজারের পণ্যে অ্যালার্জি বা খারাপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিলে।
ঢাকার বিখ্যাত ত্বক ও চুল বিশেষজ্ঞ ডা. ফারহানা ইসলামের মতে, “বাংলাদেশের নারীরা প্রায়ই চুলের যত্নে ভুল পণ্য বা কঠোর পদ্ধতি ব্যবহার করেন। চুলের ধরন বুঝে মৃদু যত্ন, পুষ্টিকর খাবার এবং স্ট্রেস ম্যানেজমেন্টই সুস্থ চুলের মূল চাবিকাঠি। হঠাৎ চুল পড়া বা তালুতে সমস্যা দেখা দিলে দেরি না করে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত, কারণ এটি থাইরয়েড, PCOS বা অন্যান্য হরমোনাল ইস্যুর লক্ষণও হতে পারে।”
জেনে রাখুন (FAQs)
১. চুল পড়া কমাতে দ্রুত কার্যকরী উপায় কী?
চুল পড়ার কারণ অনেক (পুষ্টির ঘাটতি, স্ট্রেস, হরমোন, ওষুধ, অসুস্থতা, ভুল যত্ন)। প্রথমে কারণ খুঁজুন। পুষ্টিকর খাবার (প্রোটিন, আয়রন, জিঙ্ক, বায়োটিন), রাতে ভালো ঘুম, স্ট্রেস কমানো, ভুল যত্ন পদ্ধতি বাদ দেওয়া (গরম পানি, টাইট হেয়ারস্টাইল, রাসায়নিক), নিয়মিত তেল মালিশ (নারকেল/পেঁয়াজ রস) ও স্ক্যাল্প ম্যাসাজ দ্রুত ফল দিতে পারে। সমস্যা স্থায়ী হলে ডাক্তার দেখান। চুল পড়ার সাধারণ কারণ – AAD
২. চুল দ্রুত লম্বা করার ঘরোয়া উপায় কী?
চুলের বৃদ্ধির হার মূলত জিনগত (গড়ে মাসে ১.২৫ সেমি)। তবে সুস্থ ফলিকল ও ভাঙন রোধ করলে চুল দ্রুত লম্বা দেখাবে। নিয়মিত ট্রিমিং (ফাটা ডগা কাটা), নরমভাবে চুল আঁচড়ানো, ভেজা চুল না রগড়ানো, গরম সরঞ্জাম এড়ানো, ঘুমের সময় সিল্ক বোনেট/ব্রেইড, প্রোটিন ও ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার, পর্যাপ্ত পানি পান এবং স্ক্যাল্পে রক্ত সঞ্চালন বাড়ানোর জন্য তেল মালিশ ও ম্যাসাজ গুরুত্বপূর্ণ।
৩. শ্যাম্পু কতদিন পর পর করা উচিত?
এটি সম্পূর্ণ নির্ভর করে আপনার চুলের ধরন ও জীবনযাপনের উপর।
- তৈলাক্ত চুল: গ্রীষ্মে বা ঘামলে প্রতিদিন বা দিন পর দিন (মৃদু শ্যাম্পু ব্যবহার করে)।
- শুষ্ক/কোঁকড়ানো চুল: সপ্তাহে ১-২ বার (এক্সট্রা ময়েশ্চারাইজিং শ্যাম্পু/কন্ডিশনার দিয়ে)।
- সংমিশ্রিত চুল: সপ্তাহে ২-৩ বার।
- সাধারণ নিয়ম: চুল আঠালো বা নোংরা লাগলেই শ্যাম্পু করুন। অতিরিক্ত শ্যাম্পু প্রাকৃতিক তেল সরিয়ে শুষ্কতা বাড়ায়।
৪. কন্ডিশনার ছাড়া কি চলে?
কন্ডিশনার শ্যাম্পুর পরে চুলের pH ব্যালেন্স ফিরিয়ে আনে, কিউটিকল বন্ধ করে দেয়, ঘর্ষণ কমায়, চুলকে মসৃণ, নরম ও আঁচড়াতে সহজ করে এবং ভাঙন রোধ করে। বিশেষ করে শুষ্ক, কোঁকড়ানো বা রং করা চুলের জন্য কন্ডিশনার অপরিহার্য। তৈলাক্ত চুলের শিকড়ে লাগাবেন না, শুধু ডগায় ব্যবহার করুন।
৫. কোন তেল চুলের জন্য সবচেয়ে ভালো?
সবচেয়ে গবেষণা সমর্থিত তেল হল নারকেল তেল (চুলের প্রোটিনে প্রবেশ করে, আর্দ্রতা ধরে রাখে, ভাঙন রোধ করে)। এছাড়াও:
- আর্জান অয়েল: হালকা, ময়েশ্চারাইজিং, উজ্জ্বলতা আনে।
- জোজোবা অয়েল: সিবামের মতো, স্ক্যাল্পের জন্য ভালো।
- অলিভ অয়েল: গভীর ময়েশ্চারাইজিং, ভারী হতে পারে।
- আমলকি তেল: চুল পড়া রোধ, উজ্জ্বলতা বাড়ায়।
- পেঁয়াজের তেল/রস: চুল পড়া কমাতে সাহায্য করে।
৬. ভিটামিন ট্যাবলেট খেলে চুলের উপকার হয় কি?
শুধুমাত্র নির্দিষ্ট পুষ্টির ঘাটতি থাকলে (যেমন: আয়রন, ভিটামিন ডি, বায়োটিন, জিঙ্ক) সাপ্লিমেন্ট খেলে উপকার হতে পারে। তবে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া সাপ্লিমেন্ট না খাওয়াই ভালো। অতিরিক্ত কিছু ভিটামিন (যেমন ভিটামিন এ) চুল পড়া বাড়াতে পারে। পুষ্টির সবচেয়ে ভালো উৎস হল সুষম ও প্রাকৃতিক খাবার।
সুন্দর চুল শুধু ভাগ্য বা জিনের বিষয় নয়; এটি আপনার যত্ন, ভালোবাসা আর ধৈর্যের ফসল। এই সহজ টিপস গুলো – আপনার চুলের ধরন বুঝে যত্ন নেওয়া, নিয়মিত তেল-প্যাকের অভ্যাস, সঠিক খাদ্যাভ্যাস, এবং স্টাইলিংয়ের সময় সচেতনতা – প্রতিদিনের রুটিনে অন্তর্ভুক্ত করুন। মনে রাখবেন, ধারাবাহিকতাই সাফল্যের চাবিকাঠি। হঠাৎ পরিবর্তন আশা করবেন না। ধৈর্য ধরুন, আপনার চুলকে সময় দিন। দেখবেন, ধীরে ধীরে আপনার চুল ফিরে পাবে তার হারানো জীবনীশক্তি, ঘনত্ব আর প্রাণচাঞ্চল্য। আপনার ঝলমলে, সুস্থ চুলই হবে আপনার সবচেয়ে দামি অলংকার। আজই শুরু করুন এই সহজ টিপস গুলো মেনে আপনার চুলের যত্নের নতুন অধ্যায়, নিজের প্রতি এই ভালোবাসার চিহ্ন রাখুন!
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।