ঢাকার কামালাপুর রেলওয়ে স্টেশনের পাশের মাঠে এক বিকেলে দৃশ্যটি অসাধারণ। পনেরো বছরের রুমা, স্কুল ড্রেসে সেজে, জীর্ণ ফুটবল জুতো পরে বন্ধুদের বল করছিল। হঠাৎই তার শট গিয়ে লাগলো দূরের দেয়ালে। “আগামী বিশ্বকাপে বাংলাদেশের জার্সি গায়ে এমন শট মারবো!”—রুমার উচ্চারিত স্বপ্ন আজ শুধু তার একার নয়। সারা দেশে মেয়েদের ফুটবলের উন্নয়ন যে নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে, তারই প্রতিচ্ছবি এই কিশোরীর দৃপ্ত উচ্চারণে।
বাংলাদেশে নারী ফুটবলের যাত্রা একসময় ছিলো অনাহুত, অবহেলিত। কিন্তু গত এক দশকে এই চিত্র পাল্টেছে অভাবনীয় গতিতে। ২০২৩ সালে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ নারী দল SAFF U-19 নারী চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জয়ের মাধ্যমে ইতিহাস সৃষ্টি করে। আর ২০২৪ সালের মার্চে নেপালে অনুষ্ঠিত SAFF নারী চ্যাম্পিয়নশিপে সেমিফাইনালে উঠে বাংলাদেশের সিনিয়র দল প্রমাণ করে দিয়েছে—তারা এখন এশিয়ার শক্তিধর দলগুলোর মর্যাদাপূর্ণ প্রতিদ্বন্দ্বী। শুধু আন্তর্জাতিক অঙ্গনেই নয়, দেশের গণ্ডিতে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)-এর আয়োজনে নিয়মিত হচ্ছে বাংলাদেশ মহিলা ফুটবল লিগ, যেখানে জেলায় জেলায় উঠে আসা প্রতিভাবান খেলোয়াড়রা পাচ্ছেন পেশাদারিত্বের স্বাদ। মাঠে মাঠে এখন মেয়েদের ফুটবল প্রশিক্ষণ ক্যাম্পের সংখ্যা বেড়েছে ৪০% (বাফুফে রিপোর্ট, ২০২৩), আর স্কুল-কলেজ পর্যায়ে গড়ে উঠেছে ২০০টিরও বেশি নারী ফুটবল একাডেমি। এই পরিবর্তনের পেছনে কাজ করছে সমাজের দৃষ্টিভঙ্গির ইতিবাচক রূপান্তর, সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগের সমন্বয়, এবং সর্বোপরি—সেইসব মেয়েদের অদম্য সাহস যারা সমস্ত বাধা ডিঙিয়ে বলকে জালে জড়ানোর স্বপ্ন দেখে।
মেয়েদের ফুটবলের বর্তমান ল্যান্ডস্কেপ: সাফল্যের নতুন উচ্চতা
বাংলাদেশে মেয়েদের ফুটবলের উত্থান কোন আকস্মিক ঘটনা নয়। এটি সুপরিকল্পিত বিনিয়োগ, অবিরাম সংগ্রাম এবং প্রাতিষ্ঠানিক সমর্থনের ফসল। গত পাঁচ বছরে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ এবং বাফুফে যৌথভাবে বাস্তবায়ন করছে “নারী ফুটবল উইংস” নামক একটি মেগা প্রকল্প। এর আওতায় শুধু ঢাকায় নয়, সাতক্ষীরা, কক্সবাজার, রাজশাহী, সিলেট, রংপুর ও চট্টগ্রামে গড়ে উঠেছে আন্তর্জাতিক মানের ডেডিকেটেড উইমেন্স ফুটবল ট্রেনিং সেন্টার। প্রতিটি কেন্দ্রে রয়েছে ফিফা স্ট্যান্ডার্ডের কৃত্রিম ঘাসের মাঠ, ফিটনেস জিমনেশিয়াম, ফিজিওথেরাপি ইউনিট এবং থাকার ব্যবস্থা। এখান থেকেই উঠে এসেছেন আন্তর্জাতিক তারকা সাবিনা খাতুন, সানজিদা আক্তার, কৃষ্ণা রানী সরকারের মতো খেলোয়াড়রা। তাদের সাফল্য শুধু ট্রফি নয়; দেশের লক্ষ লক্ষ কিশোরীর জন্য প্রেরণার উৎস।
২০২৩ সালের পরিসংখ্যানগুলো নারী ফুটবলের অভূতপূর্ব অগ্রগতির সাক্ষ্য দেয়:
- জাতীয় পর্যায়ে নিবন্ধিত মহিলা খেলোয়াড়ের সংখ্যা: ১২,০০০+ (২০২০ সালে ছিল মাত্র ৩,৫০০) – বাফুফে অফিসিয়াল ওয়েবসাইট
- আন্তর্জাতিক ম্যাচে অংশগ্রহণ (২০২২-২০২৪): ৩৫+ (SAFF, AFC কোয়ালিফায়ার, ফ্রেন্ডলি)
- ফিফা র্যাঙ্কিং উন্নয়ন: ২০১৯ সালে ১৩০তম → ২০২৪ সালে ১১৪তম (ফিফা ওমেন্স র্যাঙ্কিং)
- স্কুল/কলেজ ভিত্তিক নারী ফুটবল টুর্নামেন্ট: ৬৫০+ বার্ষিক (শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য)
চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন: সামাজিক বাধা থেকে অবকাঠামোর সংকট
মহিলা ফুটবলের উন্নতির পথ মসৃণ নয়। গবেষণা ও উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান (BIDS)-এর ২০২৩ সালের এক জরিপে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য: দেশের গ্রামীণ এলাকার ৬৮% পরিবার এখনও কিশোরী মেয়েদের ফুটবল খেলাকে সামাজিকভাবে “অনুপযোগী” বলে মনে করে। এর পাশাপাশি রয়েছে সুস্পষ্ট অবকাঠামোগত ও আর্থিক সংকট:
- মহিলা ফুটবলের জন্য বরাদ্দকৃত বাজেট: পুরুষ ফুটবলের বাজেটের মাত্র ১৫-১৮% (জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ সূত্র)।
- ডেডিকেটেড উইমেন্স ফুটবল স্টেডিয়ামের অভাব: দেশে শুধুমাত্র ঢাকার বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে নিয়মিত নারী ম্যাচ হয়। জেলা পর্যায়ে পর্যাপ্ত সুরক্ষিত ও মানসম্মত মাঠের অভাব প্রকট।
- পেশাদার ক্যারিয়ারের অনিশ্চয়তা: লিগ ভিত্তিক ক্লাবগুলিতে স্থায়ী চুক্তির অভাব, মাসিক ভাতার পরিমাণ নগণ্য (গড়ে ৫,০০০-১৫,০০০ টাকা), যার ফলে অনেক প্রতিভাবান খেলোয়াড়কে অকালে বিদায় নিতে হয়।
সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনে নেওয়া পদক্ষেপ:
- মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যক্রমে ক্রীড়া শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, যেখানে নারী ফুটবলের ইতিহাস ও গুরুত্ব অন্তর্ভুক্ত।
- বিভিন্ন এনজিও ও সামাজিক উদ্যোগের মাধ্যমে গ্রামীণ এলাকায় “বেটি বাচাও, বেটি খেলাও” ক্যাম্পেইন চালু হয়েছে।
- টেলিভিশন ও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে নারী ফুটবল ম্যাচের সম্প্রচার বাড়ানো হয়েছে, যা দর্শক সংখ্যা ও গ্রহণযোগ্যতা বাড়িয়েছে।
অনুপ্রেরণার মুখ: যারা ইতিহাস বদলালেন
বাংলাদেশের মেয়েদের ফুটবলের এই উত্থানের পেছনে রয়েছে কিছু অকুতোভয় নারীর অবিশ্বাস্য সংগ্রাম ও সাফল্যের গল্প। তাদের প্রত্যেকের যাত্রা যেন লক্ষ তরুণীর জন্য পাথেয়:
- সাবিনা খাতুন (অধিনায়ক, বাংলাদেশ জাতীয় দল): “লক্ষ্মীপুরের গ্রামের মেয়ে” থেকে “দেশের ফুটবল রানি”। ১২ বছর বয়সে জুতা কেনার টাকা না থাকায় পুরনো কাপড় দিয়ে নিজে ফুটবল বানিয়ে খেলতেন। এখন SAFF নারী চ্যাম্পিয়নশিপের সর্বোচ্চ গোলদাতা (২৭+ গোল)। তার মতে, “মাঠে প্রতিটি গোল শুধু স্কোর বোর্ডে নয়; ভেঙে দেয় সমাজের শত বাঁধা।” [সাক্ষাৎকার: দৈনিক প্রথম আলো]
- কৃষ্ণা রানী সরকার (স্টার স্ট্রাইকার, অনূর্ধ্ব-১৯ দল): ঝিনাইদহের প্রত্যন্ত গ্রামের কৃষক পরিবারের মেয়ে। ২০২৩ SAFF U-19 চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে জয়সূচক গোল করে দেশকে শিরোপা এনে দেন। AFC কর্তৃক “এশিয়ার রাইজিং স্টার” হিসেবে স্বীকৃত।
- মারিয়া মান্ডা (গোলরক্ষক, বসুন্ধরা কিংস মহিলা দল): চট্টগ্রাম পার্বত্য এলাকার আদিবাসী সম্প্রদায় থেকে উঠে আসা প্রথম জাতীয় দলের গোলরক্ষক। তার সাফল্য পাহাড়ি মেয়েদের জন্য ফুটবলে অংশগ্রহণের পথ প্রশস্ত করেছে।
“আমরা শুধু ফুটবল খেলি না, আমরা লড়াই করি—সেই সমাজের বিরুদ্ধে যে বলে মেয়েরা শক্ত খেলায় পারদর্শী হতে পারে না। প্রতিটি সেভ, প্রতিটি গোল, প্রতিটি জয় আমাদের এই বার্তা পৌঁছে দেয়: অসম্ভব শব্দটা আমাদের অভিধানে নেই।” — মারিয়া মান্ডা
প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ: ভিত্তি রচনায় সরকার ও ফেডারেশন
বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (BFF) এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়-এর যৌথ উদ্যোগে মেয়েদের ফুটবলের উন্নয়ন এখন সুসংহত কাঠামো পেয়েছে:
- জাতীয় মহিলা ফুটবল লিগের সম্প্রসারণ: ২০২৩-২৪ মৌসুমে লিগে অংশ নিয়েছে ১২টি টিম (২০২০ সালে ছিল ৬টি)। ক্লাবগুলিতে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে অনূর্ধ্ব-১৬ ও অনূর্ধ্ব-১৪ টিম গঠন, যা ভবিষ্যতের জন্য পুল তৈরি করছে।
- ফিফা ফরওয়ার্ড প্রোগ্রামের তহবিল: ফিফার আর্থিক সাহায্যে জেলায় জেলায় চলছে গ্রাসরুট্স স্কাউটিং নেটওয়ার্ক, যার মাধ্যমে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মেধাবীদের শনাক্ত করে ঢাকার একাডেমিতে নিয়ে আসা হচ্ছে।
- কোচিং স্টাফ ডেভেলপমেন্ট: স্পেন, জাপান ও অস্ট্রেলিয়ায় বাফুফে পাঠাচ্ছে মহিলা কোচ ও রেফারিদের উচ্চতর প্রশিক্ষণের জন্য। ইতিমধ্যে ৩৫ জন নারী কোচ পেয়েছেন AFC ‘B’ লাইসেন্স।
- সরকারের ক্রীড়া শিক্ষা বৃত্তি: ক্রীড়াবিদদের জন্য উচ্চশিক্ষায় বৃত্তি, বিশেষ করে ফুটবলার মেয়েদের জন্য কোটা বাড়ানো হয়েছে।
গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প: “ফুটবল ফর গার্লস” (FFG)
- বাস্তবায়নকারী: বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন ও ইউনিসেফ।
- লক্ষ্য: ১০০টি উপজেলায় ১০,০০০ স্কুলগামী মেয়েকে ফুটবলের মৌলিক প্রশিক্ষণ দেওয়া।
- সাফল্য: ইতিমধ্যে ৪,৫০০ মেয়ে প্রশিক্ষিত, ১২টি জেলায় মিনি লিগ চালু। প্রকল্পের বিস্তারিত
ভবিষ্যতের পথচলা: বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশের অবস্থান
২০২৩ সালের SAFF U-19 জয় এবং ২০২৪ SAFF সিনিয়র চ্যাম্পিয়নশিপে সেমিফাইনালে উঠে বাংলাদেশ প্রমাণ করেছে এশিয়ায় তাদের ক্রমবর্ধমান শক্তি। এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশন (AFC) তাদের অফিসিয়াল রিপোর্টে বাংলাদেশকে “সাউথ এশিয়ার উইমেন্স ফুটবল পাওয়ারহাউস” হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। সামনের লক্ষ্যগুলো আরও উচ্চাভিলাষী:
- AFC উইমেন্স এশিয়ান কাপে (২০২৬) যোগ্যতা অর্জন করা প্রথমবারের মতো।
- ফিফা উইমেন্স ওয়ার্ল্ড কাপ কোয়ালিফায়ার টুর্নামেন্টে জয়ী হওয়ার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা।
- দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম পূর্ণাঙ্গ উইমেন্স ফুটবল একাডেমি প্রতিষ্ঠা (গাজীপুরে নির্মাণাধীন)।
- মহিলা ফুটবলারদের জন্য ক্রীড়া-শিক্ষা সমন্বিত হোস্টেল চালু করা প্রতিটি বিভাগীয় শহরে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশের মেয়েদের ফুটবলের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল, তবে এর জন্য প্রয়োজন:
- প্রাইভেট সেক্টরের বিনিয়োগ: কর্পোরেট স্পনসরশিপ বাড়ানো, বিশেষ করে লিগ ও ক্লাব পর্যায়ে।
- মিডিয়া কভারেজ বৃদ্ধি: নিয়মিত টেলিভিশন ও স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মে লিগ ও জাতীয় ম্যাচ সম্প্রচার।
- পেশাদার ক্যারিয়ার নিশ্চিতকরণ: ফুটবলারদের জন্য সরকারি চাকরিতে কোটা, ব্যাংক-বিমায় বিশেষ নিয়োগ।
- কিশোরী লীগের সম্প্রসারণ: স্কুল ও মাদ্রাসা ভিত্তিক ফুটবল টুর্নামেন্ট সারাদেশে ছড়িয়ে দেওয়া।
“আমাদের মেয়েরা শুধু ফুটবল খেলছে না, তারা গড়ে তুলছে একটি সাহসী প্রজন্ম। এগিয়ে যাওয়ার পথে প্রতিটি বাধাই তাদেরকে করে তুলছে আরও শক্তিশালী। মেয়েদের ফুটবলের এই উন্নয়ন শুধু ক্রীড়াঙ্গনের সাফল্য নয়; এটি বাংলাদেশের সামাজিক বিবর্তনেরও এক উজ্জ্বল দলিল।” — কাজী সালাউদ্দিন, প্রেসিডেন্ট, বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (BFF)
জেনে রাখুন (FAQs)
১. বাংলাদেশে মেয়েদের ফুটবল একাডেমিতে ভর্তির যোগ্যতা কী?
সাধারণত ৮ থেকে ১৪ বছর বয়সী যে কোনো মেয়ে আবেদন করতে পারে। শারীরিক সক্ষমতা, দৌড়ের গতি এবং ফুটবলের প্রতি আগ্রহ মূল নির্ণায়ক। বাফুফে ও জেলা অ্যাসোসিয়েশন বছরে দুবার ট্রায়ালের আয়োজন করে। খেলোয়াড় নির্বাচিত হলে প্রশিক্ষণ বিনামূল্যে বা নামমাত্র ফিতে দেওয়া হয়।
২. মেয়েরা ফুটবল খেলে ভবিষ্যতে ক্যারিয়ার গড়তে পারবে কি?
অবশ্যই! পেশাদার ফুটবলার হিসেবে জাতীয় দল বা ক্লাবে চুক্তি, কোচিং, রেফারি, স্পোর্টস ম্যানেজমেন্ট, ফিজিওথেরাপিস্ট—এমনকি ক্রীড়া সাংবাদিকতায়ও ক্যারিয়ার গড়া সম্ভব। বর্তমানে অনেক ফুটবলার পুলিশ, BAF, বিজিবি ও ব্যাংকে চাকরি পাচ্ছেন ক্রীড়া কোটা সুবিধায়।
৩. গ্রামে মেয়েদের ফুটবল খেলার সুযোগ কীভাবে পেতে পারে?
বাফুফে’র জেলা কমিটি এবং ইউনিয়ন ক্রীড়া সংস্থার সাথে যোগাযোগ করতে হবে। এছাড়া বর্তমানে “ক্রীড়া বিকাশ কেন্দ্র” নামে সরকারি প্রকল্পের মাধ্যমে প্রায় প্রতিটি উপজেলায় মেয়েদের জন্য ফুটবল প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে। স্থানীয় স্কুল বা কলেজের ক্রীড়া শিক্ষকের কাছেও তথ্য মিলবে।
৪. নারী ফুটবলারদের জন্য আর্থিক সুযোগ-সুবিধা কী আছে?
জাতীয় দলে জায়গা পেলে মাসিক ভাতা, ম্যাচ ফি, বোনাস ও চিকিৎসা সুবিধা মেলে। এছাড়া বাফুফে ও জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের তরফে বিশেষ বৃত্তি, আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে পারফরম্যান্স বোনাস দেওয়া হয়। সাম্প্রতিক সময়ে কিছু ব্যাংক ও কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান ফেলোশিপও দিচ্ছে।
৫. বাংলাদেশের মেয়েদের ফুটবল দল বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে কোন অবস্থানে আছে?
ফিফা প্রকাশিত সর্বশেষ র্যাঙ্কিং (জুন ২০২৪) অনুযায়ী বাংলাদেশের অবস্থান ১১৪তম। দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত (৬৪তম) ও নেপালের (১০৫তম) পরেই বাংলাদেশের স্থান। গত পাঁচ বছরে বাংলাদেশ ১৬ ধাপ উন্নতি করেছে।
৬. কিশোরীরা কীভাবে ফুটবল প্রশিক্ষণ শুরু করতে পারে?
নিকটস্থ স্কুল/কলেজে ক্রীড়া শিক্ষকের সাথে কথা বলুন। বাফুফে’র ওয়েবসাইটে আঞ্চলিক একাডেমির তালিকা পাবেন। সামাজিক সংগঠন যেমন “বাংলাদেশ উইমেন্স স্পোর্ট ফাউন্ডেশন”ও ফ্রি ক্যাম্প আয়োজন করে। শুরু করতে শুধু একটি ফুটবল আর ইচ্ছাশক্তিই যথেষ্ট!
বাংলাদেশে মেয়েদের ফুটবলের উন্নয়ন আজ শুধু খেলার মাঠের গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ নেই; এটি সমাজের রক্ষণশীলতার দেয়াল ভেঙে সম্ভাবনার নতুন দ্বার খুলে দিয়েছে। প্রতিটি জয়, প্রতিটি গোল, প্রতিটি কিশোরীর দৃপ্ত পদক্ষেপ আমাদের মনে করিয়ে দেয়—সীমাহীন আকাশের নিচে স্বপ্ন দেখার অধিকার সবার সমান। সরকার, ফেডারেশন, কোচ, অভিভাবক এবং সর্বোপরি খেলোয়াড়দের সম্মিলিত এই সংগ্রাম শুধু ট্রফি নয়; গড়ে তুলছে একটি সাহসী, আত্মবিশ্বাসী প্রজন্ম। আপনি যদি হন একজন মা-বাবা, শিক্ষক, স্থানীয় নেতা বা তরুণ—এগিয়ে আসুন এই বিপ্লবে অংশ নিতে। স্থানীয় মাঠে একটি ফুটবল দিন কোনো মেয়ের হাতে, অনুপ্রেরণা দিন, সুযোগ তৈরি করুন। কারণ, আজ যার পায়ে বল, সে-ই আগামী দিনের বাংলাদেশের গর্ব। ✨
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।