জুমবাংলা ডেস্ক : ইসলামের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলো মিরাজের ঘটনা। জিবরাঈল আলাইহিস সালামের মাধ্যমে এক রাতেই প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মক্কা থেকে ফিলিস্তিনের বায়তুল মুকাদ্দাস, সাত আসমান, জান্নাত-জাহান্নাম ভ্রমণ করিয়েছিলেন। একে কোরেআনের ভাষায় ইসরা বা রাত্রিকালীন ভ্রমণ বলা হয়।
মক্কা থেকে ফিলিস্তিনের বায়তুল মুকাদ্দাস বা মসজিদুল আকসার দূরত্ব প্রায় দুই মাসের। এক রাতেই এই পরিমাণ দূরত্ব যাতায়াত করা, একই সঙ্গে সাত আসমান ভ্রমণের ঘটনা পৃথিবীর চোখে কাল্পনিক ও অবাস্তব মনে হয়, বিশ্বাস করাও বেশ কঠিন।
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মানুষের সামনে এই ভ্রমণের কথা বললেন, তখন স্বভাবতই তারা এটা অবিশ্বাস করলো। আবু জাহেল, আবু লাহাব, উতবা শায়বার মতো কুরায়শ নেতারা, রীতিমতো ঠাট্টা-বিদ্রুপ শুরু করে দিলো। অনেক মুসলিমও এ ঘটনা শুনে দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে গেলো।
মুশরিকেরা বললো- আমরা দ্রুতগতির বাহন ব্যবহার করেও এক মাসে মসজিদুল আকসায় পৌঁছাতে পারি না, আর তুমি একরাতে এসব ভ্রমণ করে ফেলেছো! তোমার কথা কে বিশ্বাস করবে, তোমার কাছে কি কোনো প্রমাণ আছে আমাদেরকে বিশ্বাস করানোর মতো!
নবীজি তখন বললেন, আমি বোরাকে ভ্রমণের সময় অমুক অমুক জায়গায় কুরায়শদের কাফেলা দেখেছি, তারা ফিরে এলে তোমরা তাদের জিগেস করতে পারো। কাফেলা ফিরে এলে তারা কুরায়শদের কাছে স্বীকার করলো যে, তারা সে সময় নবীজির বলা জায়গায় অবস্থান করছিলো, এবং তারা বোরাকের শব্দও শুনেছিলো।
কুরায়শ নেতারা এরপরও মেরাজের ঘটনা বিশ্বাস করছিলো না। তারা আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে গিয়ে বললো- শুনেছো! মুহাম্মদ এসব কি বলছে! সে নাকি একরাতে এতো কিছু ভ্রমণ করে ফেলেছে!
একথা শুনে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যদি নিজের থেকে একথা বলে থাকেন তাহলে আমি বিনা বাক্যব্যয়ে তার কথা বিশ্বাস করছি।
এরপরও কুরায়শরা মেরাজের ঘটনার ব্যাপারে আশস্ত হতে পারছিলো না। তখন তাদের কাছে এক ব্যক্তি ছিলো, যে মসজিদুল আকসার আকার-আকৃতি, দরজা-জানালা সবকিছু ঠিকঠাক চিনতো এবং এ সম্পর্কে তার ভালো জানাশোনা ছিল।
কুরায়শরা মেরাজের ঘটনার সত্যতা যাচাই করতে আরও একবার আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রশ্নের মুখোমুখি করলো এবং তারা আল্লাহর রাসূলের কাছে জানতে চাইলো-
‘বায়তুল মুকাদ্দাস কোন দিকে অবস্থিত, কোন দিকের দেয়াল কেমন, জানালা কয়টা, দরজা কয়টা?’
তারা এ জাতীয় বিভিন্ন প্রশ্ন করলো নবীজিকে। সাধারণত এসব প্রশ্নের উত্তর দেওয়া সম্ভব নয়।
কারণ, আল্লাহর রাসূলের রাত্রীকালীন এই ভ্রমণ ছিলো আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাতের ভ্রমণ। তিনি বায়তুল মুকাদ্দাস দেখতে বা এর দরজা জানালা গুনতে সেখানে যাননি।
তবে কুরায়শদের প্রশ্নের প্রেক্ষিতে আল্লাহ তায়ালা ফেরেশতার মাধ্যমে তার হাবীবের সামনে বায়তুল মুকাদ্দাসের চিত্র তুলে ধরলেন। তা দেখে দেখে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বায়তুল মুকাদ্দাসের পুরো বিবরণ তুলে ধরলেন। রাসূলের উত্তর দেওয়ার ভঙ্গিতে মনে হয়েছিলো, যে তিনি সরাসরি বায়তুল মুকাদ্দাস দেখে উত্তর দিচ্ছিলেন।
উত্তর শুনে সেই ব্যক্তি বললেন, আপনি সত্য বলেছেন, বায়তুল মুকাদ্দাসের সঠিক বিবরণ তুলে ধরেছেন আপনি।
আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুও এর আগে বায়তুল মুকাদ্দাস দেখেছিলেন, তখন তিনিও বলে উঠেলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি চরম সত্যবাদী। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আপনি আল্লাহর রাসূল।
(তাফরিরে মাআরিফুল কোরআন, ৫ম-খণ্ড, ৪৩৩, তাফসিরে ইবনে কাসির, ১৩-খণ্ড, ২৬৭)
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।