২০০৭ সালের কথা। লা লিগার গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে গ্রানাডার মুখোমুখি হয়েছিল বার্সেলোনা। সে সময় মেসি নান্দকিতায় ভরা এক গোল করেছিলেন যা এখনো সবার চোখে লেগে আছে । মেসি নিজেদের এরিয়া থেকে বল নিয়ে ছুটলেন। গ্রানাডার পাঁচজন প্লেয়ার এবং গোলকিপারকে বোকা বানালেন ও অবিশ্বাস্য এক গোল করেছিলেন। ওই সময় গ্যালারিতে উপস্থিত থাকা দর্শকরা এ গোল কখনো ভুলতে পারবে না।
এরকম গোল মেসির আরো অনেক রয়েছে। উয়েফা চ্যাম্পিয়নশিপ লীগে রিয়াল মাদ্রিদের বিরুদ্ধে, আতলাটিকো মাদ্রিদের বিরুদ্ধে, গেটাফের বিরুদ্ধে এবং বিভিন্ন ক্লাব সহ আর্জেন্টিনার হয়েও মেসির এরকম দৃষ্টিনন্দন গোল রয়েছে।
আর্জেন্টিনার সাবেক জনপ্রিয় ফুটবলার Jorge Valdano এক ইন্টারভিউতে বলেন, “মেসির মাধ্যমেই আমরা ফুটবলের সৌন্দর্য্য উপভোগ করছি। তিনি সবার সাথে অনেক বেশি সংযুক্ত থাকছেন এবং বরাবরের মতই তার সহজাত চরিত্র আমরা দেখতে পাচ্ছি। যে মেসিকে ভালোবাসে না, সে ফুটবলকে ভালোবাসে না।”
লিওনেল মেসি একাধিকবার আর্জেন্টিনা দলকে খাদের কিনারা থেকে উদ্ধার করেছেন। ২০১৮ বিশ্বকাপের বাছাই-পর্ব ম্যাচে ইকুয়েডের সাথে আর্জেন্টিনাকে জিততেই হতো। ওই সময় অনেক বিশ্লেষক বলেছিলেন আর্জেন্টিনা গ্রুপ পর্ব থেকেই বাদ পড়ে যাবে ও রাশিয়া বিশ্বকাপ খেলতে পারবে না।
কিন্তু সবার ধারণাকে ভুল প্রমাণ করেছিলেন লিওনেল মেসি। মেসি ওই ম্যাচে হ্যাটট্রিক করলেন এবং আর্জেন্টিনা ৩-১ গোলে বিজয়ী হয়ে রাশিয়া বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ পেয়ে গেল। পাশাপাশি মাঠের পারফর্মন্যান্স এর মাধ্যমে সমালোচনার জবাব দিলেন তিনি।
২০১৮ বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্ব থেকে আর্জেন্টিনা প্রায় বাদ পড়ে যাচ্ছিল । গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে নাইজেরিয়ার সাথে জিততেই হতো। ম্যাচ চলাকালীন সময়ে এভার বানেগার বাড়ানো বলটি তিনি খুব সুন্দর করে রিসিভ করলেন এবং দৃষ্টিনন্দন একটি গোল করলেন।
তার ঐ গোলেই আর্জেন্টিনা এক শূন্য গোলে লিড নেয় এবং বিশ্বকাপের আশা বাঁচিয়ে রাখে। এরপর ফ্রান্সের বিরুদ্ধে আর্জেন্টিনা যে তিন গোল করলেন তার দু’টিতেই তিনি অ্যাসিস্ট করেছিলেন।
২০১৪ বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার ফাইনাল খেলার পেছনে লিলেন মেসির অনেক অবদান ছিল। গ্রুপ পর্বের দ্বিতীয় ম্যাচে ইরানের ডিফেন্স যখন আর্জেন্টিনার কেউ ভাঙতে পারল না তখন আবার এগিয়ে আসেন মেসি। তিনি ডি-বক্সের বাহির থেকে একটি শট নিলেন এবং তা গোল হল। লিওনেল মেসির ওই গোলেই আর্জেন্টিনা এক গোলের লিড নিল এবং পরবর্তী রাউন্ডে ওঠা নিশ্চিত হল।
কাতার বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচে সৌদি আরবের কাছে হেরে আর্জেন্টিনা বিপদে পড়েছিল। মেক্সিকোর বিরুদ্ধে আর্জেন্টিনা শুরুতে বেশ বাজে খেলছিল। ওই ম্যাচে লিওনেল মেসি যে অবিশ্বাস্য গোল করেছিলেন তার সুবাদে আর্জেন্টিনা আরও একবার খাদের কিনারা থেকে বেঁচে ফিরেছিলো।
লিওনেল মেসি অস্ট্রেলিয়া সাথেও গোল পেয়েছেন। প্রতিপক্ষের পায়ের ফাঁক দিয়ে তিনি যে দৃষ্টিনন্দন পাস দেন তা চোখে লেগে থাকার মত। আর্জেন্টিনার অন্যান্য প্লেয়াররা যে তাকে কতটা ভালোবাসে তা তাদের কথায় স্পষ্ট।
যেমন রদ্রিগো ডি পল বলেছেন, তিনি বিশ্বকাপে মেসির জন্য যুদ্ধ করতে এসেছেন। নেদারল্যান্ডের বিরুদ্ধে জয়ের পর গোলকিপার এমিলিও মারতিনেজ এক ইন্টারভিউতে বলেছেন যে, মেসির জন্য তিনি মরতেও রাজি । তবু তিনি মেসির হাতে শিরোপা দেখতে চান।
সর্বশেষ ম্যাচ এ এক ইন্টারভিউতে লিসান্দ্রো মার্তিনেজ কান্নাভেজা কন্ঠে বলেছেন যে, লিওনেল মেসিকে একটা শিরোপা দেওয়া ব্যতীত তার আর কোন উদ্দেশ্য নেই। তিনি তার হাতে শিরোপা দেখার জন্যই কাতারে এসেছেন।
পাউলো দিবালা বলেছেন, আমি মাঠে খেলতে না পারলেও অসুবিধা নেই। আমি বেঞ্চে বসি লিওনেল মেসির খেলা উপভোগ করতে চাই ও তার হাতে শিরোপা দেখতে চাই। এন্জেল কোরিয়া জানান যে, কোচ স্কালোনি আমাকে মাঠে খেলার সুযোগ না দিলেও কোন আপত্তি নেই। আমি শুধু পানির বোতল টানতেও রাজি তবুও যেন আমাকে স্কোয়াডে রাখা হয়।
বর্তমান প্রজন্ম সত্যিই ভাগ্যবান। কেননা তারা লিওনেল মেসির মতো একজন ফুটবলার দেখতে পেয়েছেন। ক্লাব ও আর্জেন্টিনার হয়ে তার যে পারফরম্যান্স লক্ষ্য করা যায় এবং শত সমালোচনা ও প্রতিকূলতা সত্ত্বেও মেসির নিবেদিত প্রাণ এটাই প্রমাণ করে যে, কারও মেসির প্রতি ভালোবাসা না থাকলে তার ফুটবলের প্রতিও ভালোবাসা নেই।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।