স্পোর্টস ডেস্ক: সুইডিশ ব্যান্ড দলের একটি গান সম্প্রতি বেশ আলোচিত হয়েছে- ‘দ্য উইনার্স টেকস ইট অল’। এই গানটি যেন ফুটবলেও খাটছে। মঙ্গলবার লুসাইল স্টেডিয়াম আলোকিত করবেন দুই লিজেন্ড লিওনেল মেসি ও লুকা মদরিচ। নিজেদের ঝলমলে ক্যারিয়ারে অপূরণীয় থাকা একমাত্র ট্রফিটা যে ছোঁয়া হয়নি তাদের। বিশ্বকাপে ট্রফি উঁচিয়ে ধরতে পারলেই যেন সবকিছু পাওয়া হয়ে যাবে তাদের।
এই সেমিফাইনাল হতে যাচ্ছে তাদের বিশ্বকাপ স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখার শেষ সুযোগ। শেষ বাঁশি যখন বাজবে, তখন যে কোনও একজনের শীর্ষ মর্যাদার স্বপ্ন ধূলিস্মাৎ হয়ে যাবে।
মেসি বনাম মদরিচ, ঐতিহাসিক লড়াই
চলুন দেখে নেওয়া যাক এই দুই চ্যাম্পিয়ন তাদের ক্যারিয়ারে কী অর্জন করেছেন। দুজনেই তাদের দলের ১০ নম্বর জার্সি পরেছেন, নিজেদের সামর্থ্য ও প্রতিভা দিয়ে ফুটবল ভক্তদের মন্ত্রমুগ্ধ করতে পারেন।
বার্সেলোনা ও রিয়াল মাদ্রিদের লা লিগা ম্যাচের সুবাদে এরই মধ্যে অনেকবার দেখা হয়েছে মেসি ও মদরিচের। সম্প্রতি চ্যাম্পিয়নস লিগে পিএসজি ও রিয়ালের খেলাতেও দেখা হয়েছিল তাদের। তার আগে ২০১৮ বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বে ক্রোয়েশিয়ার কাছে হারেন মেসি, যে ম্যাচে গোল করেন মদরিচ। দুজনের প্রথম দেখাও বেশ স্মরণীয়। ২০০৬ সালে আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচে যেদিন মদরিচের জাতীয় দলে অভিষেক হয়, সেদিন মেসি আর্জেন্টিনার জার্সিতে করেন প্রথম গোল। মদরিচ প্রথম দেখায় জিতে যান।
দুই ‘নাম্বার টেনের’ নিয়তি
খেলার ধরন, কারিশমা ও নেতৃত্ব- মাঠে ও মাঠের বাইরে এই গুণাবলীতে মেসি ও মদরিচ দুজনেই বিস্ময়কর। বাল্যকালে ইউরোপে পাড়ি দিতে মেসিকে অনেক সংগ্রাম করতে হয়েছিল, বয়সের তুলনায় শারীরিক বিকাশ হয়েছে দেরিতে। কিন্তু নিজের কৌশল দিয়ে প্রতিপক্ষকে কীভাবে ঘায়েল করতে হয়, সেটা ছিল অনন্য। অন্যদিকে মদরিচ বেড়ে উঠেছেন বলকান যুদ্ধ দেখে, যার বিনিময়ে ক্রোয়েশিয়ানরা ১৯৯১ সালে স্বাধীনতা অর্জন করে। দুজনের ভিন্ন কিন্তু একই সংগ্রামের গল্প, যা তাদের ক্যারিয়ারকে করেছে আকর্ষণীয়।
নিয়তির বেড়াজালে তাদের মিল আরেকটি জায়গায়। দুই খেলোয়াড়ই বিশ্বকাপ ফাইনালে খেলে হেরেছেন এবং রানার্সআপ হওয়ার আসরে জিতেছেন সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার গোল্ডেন বল। ২০১৪ সালে জার্মানির কাছে ফাইনালে হারে মেসির আর্জেন্টিনা। আর চার বছর পর ফ্রান্সের কাছে ফাইনালে ৪-২ গোলে পরাজিত হয় ক্রোটরা।
ক্যারিয়ারের তুলনা
মেসি ও মদরিচ দুজনেই প্রায় সবকিছু জিতেছেন। মেসির অর্জন নজরকাড়া: বার্সেলোনার সঙ্গে ১০টি লা লিগা, সাতটি ঘরোয়া কাপ ও আটটি সুপার কাপ; একটি লিগ ওয়ান ও ফরাসি সুপার কাপ। চারটি চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা, তিনটি সুপার কাপ ও তিনটি ক্লাব বিশ্বকাপ। আর্জেন্টিনার সঙ্গে ফিফা অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপ, একটি অলিম্পিক স্বর্ণ, একটি কনমেবল কোপা আমেরিকা ও একটি ফাইনালিসিমার ট্রফি হাতে নিয়েছেন। ব্যক্তিগত সম্মাননা হিসেবে মেসি ঘরে তুলেছেন সাতটি ব্যালন ডি’অর এবং ২০১৪ বিশ্বকাপের গোল্ডেন বল। এমন একটা ক্যারিয়ারে শুধু একটাই অপ্রাপ্তি: বিশ্বকাপ ট্রফি।
ট্রফিখচিত ক্যারিয়ার মদরিচেরও। এই মিডফিল্ডার তিনটি ক্রোয়েশিয়ান লিগ শিরোপা জিতেছেন। ডায়নামো জাগরেবের জার্সিতে তিনি আরও জিতেছেন একটি সুপার কাপ ও দুটি লিগ কাপ। রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে কোনও কিছু জেতার বাকি নেই। তিনটি লা লিগা, চারটি সুপার কাপ, একটি লিগ কাপ, পাঁচটি চ্যাম্পিয়নস লিগ, চারটি সুপার কাপ ও চারটি ক্লাব বিশ্বকাপ জিতেছেন। আর জাতীয় দলের হয়ে একটুর জন্য জেতা হয়নি বিশ্বকাপ। চার বছর আগে ফাইনালে হেরে যান ফ্রান্সের কাছে। সান্ত্বনা হিসেবে জোটে গোল্ডেন বলের অ্যাওয়ার্ড। তিনি একটি ব্যালন ডি’অরও জিতেছেন।
প্রশংসার উচ্চ শিখরে
মেসিতে মুগ্ধ পেপ গার্দিওলা। একবার তিনি বলেছিলেন, ‘লিওনেল মেসি অবশ্যই সেরা এবং সে একইভাবে ফুটবলে আধিপত্য দেখিয়েছে, যেভাবে মাইকেল জর্ডান বাস্কেটবলে দেখিয়েছে।’
এই মৌসুমে মদরিচকে নিয়ে কার্লো আনচেলত্তি বলেন, ‘মদ্রিচ অমর। সে সবসময় তৈরি থাকে এবং ভালো খেলে। সে এমন একজন খেলোয়াড়, যে খেলা বদলে দিতে পারে।’
মঙ্গলবারের সেমিফাইনাল আরও একবার তাদের প্রতিভায় মুগ্ধ হওয়ার পালা।
কাতার বিশ্বকাপ: অবৈধ স্ট্রিমিংয়ের দায়ে ৫৫ মার্কিন ওয়েবসাইট নিষিদ্ধ
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।