খালিদ হাসান, বগুড়া প্রতিনিধি: সুনাম আর ঐতিহ্যের স্বাক্ষী হিসেবে গড়ে ওঠা বগুড়ার শিবগঞ্জের মোকামতলা উচ্চ বিদ্যালয়ে একাডেমিক ভবনের অভাবে খোলা আকাশের নিচে ক্লাস করছে শিক্ষার্থীরা। এছাড়া পুরাতন ভবন গুলোতে ফাটল ধরায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ক্লাস করছে শত শত শিক্ষার্থী। যেকোন মুহূর্তে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে এমন আশঙ্কাকায় ইতোমধ্যই পরিত্যাক্ত ঘোষণা করা হয়েছে কয়েকটি ক্লাস রুম।
শিবগঞ্জের প্রত্যন্ত অঞ্চলে গড়ে ওঠা অসংখ্য প্রতিষ্ঠান নতুন ভবন পেলেও ১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠিত শিবগঞ্জের প্রাণকেন্দ্র খ্যাত মোকামতলা বন্দরে অবস্থিত এই বিদ্যালয়টি আজ অবধি পায়নি কোন একাডেমিক ভবন। তাই পুরাতন ভবন গুলো নিয়ে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের উদ্বেগ আর উৎকন্ঠার শেষ নেই।
মঙ্গলবার (২৩ জুলাই) সরজমিনে প্রতিষ্ঠানটি পরিদর্শন করে দেখা যায়, বহু বছর আগে নির্মিত তিনটি ভবনের সব গুলো রুমেই ধরেছে ফাঁটল। ছাদ থেকে সিমেন্ট-বালু ঝড়ে পড়ছে শিক্ষার্থীদের বেঞ্চে। একটু ঝড় বা বৃষ্টি হলেই ছাদ থেকে পানি পড়ে শ্রেণীকক্ষে। অতি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় বন্ধ থাকতে দেখা গেছে ৪টি ক্লাস রুম। এছাড়া যে কয়টি রুম আছে তার সবকটিতেই ফাটল ধরায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ক্লাস করছে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা।
এ সময় নবম শ্রেণীর মোজাহিদ নামের এক ছাত্র জানায়, আমরা খুব কষ্টে ক্লাস করছি এখানে। উপর (ছাদ) থেকে সিমেন্ট আর বালু পরে প্রতিনয়ত আমাদের শরীরে পড়ছে।
একই ক্লাসের মেহেদী হাসান নামের আরও এক শিক্ষার্থী জানান, বৃষ্টি আসলে ছাদ থেকে পানি পড়ে বই-খাতা ভিঁজে যায়। আমরা তখন ক্লাস করতে পারি না। একই রকম অবস্থার বর্ননা দিয়েছেন এই প্রতিষ্ঠানের ষষ্ঠ শ্রেনীর বাধন, সপ্তম শ্রেণীর সামী হাসান, অষ্টম শ্রেণীর নাবিলসহ প্রায় সকল ক্লাসের শিক্ষার্থীরা।
প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক মমিনুল ইসলাম, ফজলে ইলাহী মিলন ও আবু হাসান রিমন জুমবাংলাকে জানান, মোকামতলা একটি গুরুত্বপূর্ণ বন্দর। এই বন্দরে গড়ে ওঠা মোকামতলা উচ্চ বিদ্যালয় একটি ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান। প্রতি বছর এই প্রতিষ্ঠানের অসংখ্য শিক্ষার্থী গোল্ডেন জিপিএ-৫ সহ কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হয়। তবে বর্তমানে অবকাঠামোগত উন্নয়ন না থাকায় অনেকটা জৌলুস হারাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। ক্লাস রুমের অবস্থা দেখে অভিভাবক, শিক্ষার্থী ও শিক্ষক সবাই আতঙ্কে থাকেন।
এ সম্পর্কে প্রতিষ্ঠানটির সহকারী প্রধান শিক্ষিকা শাহনাজ বেগম জুমবাংলাকে বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে প্রায় ৮০০ শিক্ষার্থী পড়াশুনা করছে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানের সবগুলো ক্লাসেই ফাঁটল ধরেছে। অতি ঝুঁকিপূর্ণ কয়েকটি রুম বন্ধ করে দেয়ায় শিক্ষার্থীদের ক্লাস রুমের সংকট দেখা দিয়েছে। তাই বারান্দা ও কখনো কখনো খোলা মাঠে ক্লাস নিতে হচ্ছে আমাদের।
প্রতিষ্ঠানটির বেহাল অবস্থার কথা স্বীকার করে প্রধান শিক্ষক আশরাফুল ইসলাম জুমবাংলাকে বলেন, ২০১১ সাল থেকে প্রতিষ্ঠানটি মাধ্যমিক ও ২০১৮ সাল থেকে জেএসসি পরীক্ষা কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। কিন্তু রুম সংকটের কারণে পার্শ্ববর্তী বালিকা বিদ্যালয়কে ভেন্যু সেন্টার হিসেবে ব্যবহার করতে হচ্ছে। শিবগঞ্জ তথা বগুড়া জেলার গুরুত্বপূর্ণ একটি বন্দরে অবস্থিত এই বিদ্যালয়টির জন্য একটি একাডেমিক ভবন নির্মাণ খুব জরুরি হয়ে পড়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।