আন্তর্জাতিক ডেস্ক : জাতিগত দ্বন্দ্ব আর আন্তর্জাতিক কূটচালে পড়ে একটি দেশ কীভাবে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছাতে পারে, তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ সিরিয়া। ৯ বছর ধরে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ চলছে সেখানে। রক্তের স্রোতোধারা না থেমে বাড়ছে দিন দিন।
কিছু সময়ের জন্য সিরিয়ার শিশু আয়লান কুর্দির নিষ্প্রাণ শরীর তুরস্কের সৈকতে পড়ে থাকতে দেখে বিশ্ববিবেক প্রচণ্ডভাবে নড়ে উঠেছিল। তবে এতেও পরিবর্তন হয়নি পরিস্থিতির।
এমন অবস্থার মধ্যেই বাবা-মেয়ের নতুন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফেসবুকে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ইন্ডিপেন্ডের ফেসবুকে পোস্ট করা ভিডিওতে দেখা যায়, চারদিকে বোমা হামলা চলছে। ছোট মেয়ে যেন বোমার শব্দে ভয় না পায় সেজন্য পুরো বিষয়টি খেলা হিসেবে উপস্থাপন করেন বাবা।
সন্তানকে বাবা বলেন, এখন একটি বোম পড়বে। মেয়েটি তখন বলে, ‘বোম’? তখন বাবা বলেন, বোমটি পড়লে আমরা হাসব। ঠিক তখনই একটি বোমা বিস্ফোরণ হয়। সে বিস্ফোরণের শব্দে আতঙ্কিত না হয়ে হাস্যোজ্জ্বল দেখা যায় বাবা-মেয়েকে।
এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ভিডিওটি এক ঘণ্টায় চার হাজার মানুষ দেখেছে। এ ছাড়া কমেন্ট করেছেন ৪৫১ জন।
ক্যাথরিন গিলো নামে এক নারী কমেন্টে লেখেন, খুবই হৃদয়বিদারক ঘটনা এটি। সারা বিশ্ব কীভাবে বিষয়গুলো মেনে নিচ্ছে। কেউ কিছু করছে না কেন? মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য আসাদ, পুতিনদের বিচার হওয়া উচিত।
স্টিভেন ডিমোক নামের এক ব্যক্তি লিখেছেন, ‘এমন মহান বাবাকে দেখে আমি আবেগআপ্লুত। দুজনের জন্য দোয়া রইল।’
লুইস ব্রিজার নামে আরেক নারী লেখেন, বিষয়টি খুব দুঃখজনক। কোনো শিশুকে এভাবে বেড়ে উঠতে পারে না। শিশুটির বাবা অসাধারণ।’
সিরিয়া সংকটের শুরু যেভাবে :
২০১১ সালে বিশ্বে আরব বসন্তের আগমন। তিউনিসিয়া টালমাটাল। এর ধারায় পরে যোগ দেয় মিসর, লিবিয়া। অনেকে মনে করেছিলেন, সিরিয়ায় হয়তো আরব বসন্তের প্রভাব পড়বে না। কেননা দেশটিতে গত ৪০ বছর ধরে নিজেদের শাসন পাকা করে ফেলেছেন বাসার আল-আসাদের বাথ পার্টি। এ ছাড়া বাশার ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র কায়েমে অনেক সুন্নি মুসলিমেরও সমর্থন ছিল। কিন্তু সিরিয়ায় গল্পটির শুরু একটু ভিন্নভাবে।
ছোট ঘটনা থেকে বিরোধ ছড়িয়ে পড়ে। ২০১১ সালের মার্চের মাঝামাঝি সময় সরকারবিরোধী গ্রাফিতির কারণে চারজনকে ধরে নিয়ে নির্যাতন করে সরকারি বাহিনী। দেশটির ডেরা শহরের এ ঘটনার প্রতিবাদ ও বিক্ষোভে সরকারি বাহিনী ব্যাপকভাবে গুলি ছোড়ে। কয়েকজন বিক্ষোভকারী মারা যান। সেই বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে পুরো দেশে।
বাশার আল-আসাদ ট্যাংক, আর্টিলারি এবং হেলিকপ্টার গানশিপ সহকারে দেশব্যাপী অপারেশন চালায়। মাত্র তিন মাসে ২০১১ সালের জুলাই নাগাদ প্রায় ১৬ হাজার বিক্ষোভকারী নিহত হন।
এরপরের ঘটনাপ্রবাহ এতই জটিল, সঠিক হিসাব রাখা মুশকিল। আক্রমণ, পাল্টা আক্রমণ, শহর দখল, দখল থেকে মুক্ত, আবার পুনর্দখলের মধ্য দিয়ে সাত বছর চলে গেল। এতে প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ নিহত হয়েছেন। তালিকায় আছেন নিরীহ জনগণ, সেনাসদস্য, বিদ্রোহী এবং সরকারি সমর্থকেরাও।
পশ্চিমারা আসাদকে হটিয়ে ‘জনগণের ক্ষমতায়ন’-এর জন্য মাঠে নামে। বিক্ষোভকারীরা প্রথমে অগোছালো থাকলেও ধীরে ধীরে বাইরের সমর্থনে সংগঠিত হয়। সিরিয়ার বিদ্রোহীদের নানান পক্ষ আর উপলক্ষ থাকলেও বিদ্রোহীরা একত্র হয়ে একটি সংগঠিত ফোর্স গঠন করেছে। এর নাম দিয়েছে ফ্রি সিরিয়ান আর্মি। এরপর থেকে লাশের সংখ্যা বাড়তে থাকে।
ভিডিওটি দেখতে ক্লিক করুন
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।