জুমবাংলা ডেস্ক : স্কুলে একসঙ্গে পড়ত রুবেল ও মরিয়ম। সেই থেকে প্রেম। এরপর নিজের ভবিষ্যৎ গড়া আর পরিবারে সচ্ছলতা আনতে সৌদি আরব পাড়ি জমান রুবেল। তবে দূরত্ব তাদের প্রেম দমাতে পারেনি। একপর্যায়ে নয় মাস আগে মোবাইলের ভিডিওকলেই বিয়েবন্ধনে আবদ্ধ হন। বিয়ের পর রুবেল দেশে ফেরার সুযোগ পাননি। ফোনেই নিয়মিত যোগাযোগ হতো। বিয়ের পর থেকে শ^শুরবাড়িতেই থাকতেন মরিয়ম। তবে হঠাৎ করে শুক্রবার সন্ধ্যায় মরিয়ম খবর পান সৌদি আরবে ফার্নিচারের কারখানায় আগুনে পুড়ে মারা গেছেন রুবেল। ফুলসজ্জার আগেই বিধবা হলেন মরিয়ম।
স্বামীর এমন মিৃত্যুর খবরে থামছেই না তার আহাজারি।
রুবেল হোসেনের বাড়ি রাজশাহীর বাগমারার বারইপাড়া গ্রামে। তিন ভাইয়ের মধ্যে রুবেল সবার ছোট। সাত বছর ধরে সৌদি আরবে থাকেন তিনি। বড় দুই ভাই তারও আগে থেকে প্রবাসী। বড় ভাই সৌদি আরব এবং মেজো ভাই দুবাইয়ে থাকেন। পাশের বারিহাটি গ্রামে বাড়ি মরিয়ম আক্তারের। তিনি এখন কলেজছাত্রী।
শনিবার সন্ধ্যায় সরেজমিন রুবেল হোসাইনের বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, ‘মরিয়ম মোবাইল ফোনে স্বামীর ছবি দেখে অঝোরে কাঁদছেন। বিলাপ করছেন, ‘আমার স্বামীকে একটাবার হলেও দেখতে চাই রে…। বিয়ের পর তাকে আমি কাছ থেকে দেখিনি রে…। যত কথা কছে দূরে থ্যাকাই কথা কছে রে..। কত আশা, কত স্বপ্ন আছিল। আপনাদের পায়ে ধরি রে…, আমার স্বামীকে একনা এনে দেন রে ভাই…।’
মরিয়ম বলেন, সে আমাকে অনেক ভালোবাসত। কাজের ফাঁকে যখনই সময় পেত আমার লগে ভিডিও কলে কথা বলত। আমি রাগারাগি করতাম, বারবার ওকে দেশে আসতে বলতাম। ও আমারে খালি সুন্দর ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখাত। বলতÑ একটু ধৈর্য ধরো। দূরে থেকে শুধুই সান্ত্বনা দিত।
মরিয়ম জানান, বৃহস্পতিবার রাত ১২টার দিকে তাদের শেষ কথা হয়। দেশে আসার জন্য শুক্রবার কাগজপত্র জমা দিয়ে কারখানায় যাবেন বলে স্ত্রীকে জানিয়েছিল রুবেল। শুক্রবার রাতে আবার কথা বলবে বলেছিল। রাতে কলও দিয়েছিলেন মরিয়ম। কিন্তু ফোন বাজলেও কেউ রিসিভ করেনি। শনিবার সকাল ৮টার দিকে রুবেলের প্রবাসী বড় ভাই ফোন করে জানান রুবেল আর নেই।
এদিকে ছেলে হারানোর বিষয়টি মানতেই পারছেন না রুবেলের বাবা জফির উদ্দিনও। তিনি বলেন, ৬ বছর আগে ছেলের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা কইরা ঋণ করে বিদেশে পাঠাইছি। কীভাবে মানব এই মৃত্যু?
প্রবাসে প্রাণ হারানো অন্য তিন শ্রমিক হলেন বাগমারার ঝিকড়া ইউনিয়নের বারইপাড়া গ্রামের মো. জমিরের ছেলে মোহাম্মদ সাজেদুল ইসলাম, যোগীপাড়া ইউনিয়নের বড় মাধাইমুরি কাতিলা গ্রামের আনিসুর রহমান সরদারের ছেলে ফিরুজ আলী সরদার ও বারইপাড়া গ্রামের শাহাদাত হোসাইনের ছেলে মো. আরিফ।
নিহত ফিরুজ আলী সরদারের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, স্বজনরা বিলাপ করছেন। ফিরুজের বাবা আনিসুর রহমান সরদারও কাঁদছেন। স্ত্রী হোসনে আরা এবং তার ৭ ও ৪ বছর বয়সী দুই ছেলেকে সান্ত¦না দেওয়ার চেষ্টা করছেন কেউ কেউ। আনিসুর রহমান বলেন, ‘আমার তো এখন আর চাওয়ার কিছু নেই। শুধু ছেলের লাশটাই দেখতে চাই।’
এ বিষয়ে বাগমারা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত চলতি দায়িত্ব) সুমন চৌধুরী বলেন, জেলা প্রশাসক বাগমারায় এসে পরিবারগুলোর সঙ্গে কথা বলেছেন। তাদের আর্থিকভাবে সহযোগিতা করা হয়েছে। এ ছাড়া মরদেহ আনার জন্য ফরম পূরণ করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে হয়। সে কাজটি আমরা দ্রুততার সঙ্গে করছি। এ ক্ষেত্রে যত সহযোগিতা দেওয়া সম্ভব আমরা দেব।
রাজশাহীর জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বলেন, সৌদিতে অবস্থিত বাংলাদেশি দূতাবাসের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ অব্যাহত আছে। যত দ্রুত সম্ভব মরদেহ দেশে আনার ব্যাপারে চেষ্টা চলছে।
জানা যায়, শুক্রবার সন্ধ্যায় সৌদি আরবের দাম্মামে ফার্নিচারের কারখানায় আগুনে আট বাংলাদেশি নিহত হন। এর মধ্যে চারজনের বাড়ি রাজশাহীর বাগমারায়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।