বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক : দেশে বর্তমানে মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১১ কোটি ৮৯ লাখ ৬০ হাজার। অক্টোবরে যা ছিল ১১ কোটি ৯৪ লাখ ১০ হাজার। এছাড়া সেপ্টেম্বরে ছিল ১১ কোটি ৯৭ লাখ ৭০ হাজার। গত তিন মাস ধরে এই সংখ্যা শুধু কমছেই। গত তিন মাসে মোবাইল ইন্টারনেটের ব্যবহারকারী কমেছে ৮ লাখ ৩০ হাজার। টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি প্রকাশিত সর্বশেষ (নভেম্বর) প্রতিবেদনে এই তথ্য জানা গেছে।
২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে ২০ হাজার, অক্টোবরে ৩ লাখ ৬০ হাজার এবং নভেম্বরে ৪ লাখ ৫০ হাজার’সহ সব মিলিয়ে ৮ লাখ ৩০ হাজার মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারী কমেছে।
বিটিআরসির প্রতিবেদনে দেখা গেছে, গত আগস্টে ছিল ১১ কোটি ৯৭ লাখ ৯০ হাজার গ্রাহক। এটাই ছিল এযাবৎকালের মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সর্বোচ্চ সংখ্যা। ২০২২ সালের আগস্টে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল ১১ কোটি ৪৫ লাখ ৩০ হাজার। একটানা গ্রাহক সংখ্যা বাড়লেও গত সেপ্টেম্বর মাস থেকে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা কমছেই।
মোবাইল ইন্টারনেটের গ্রাহক সংখ্যা সর্বোচ্চ চূড়ায় উঠে আবারও নামতে শুরু করেছে। গত তিন মাস ধরে মোবাইল ইন্টারনেটের গ্রাহক সংখ্যা কমছেই। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মোবাইল ফোন অপারেটরগুলোর সংগঠন এমটব মহাসচিব লে. কর্নেল (অব.) মোহাম্মদ জুলফিকার বলেছেন, গত কয়েক বছরের মাসভিত্তিক ডাটা ব্যবহার বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটে। যা দীর্ঘ সময়ের ব্যাপ্তিতে তেমনভাবে প্রভাব ফেলে না। এছাড়া বিগত বছরগুলোতেও শেষ প্রান্তিকে ইন্টারনেট গ্রাহকের সংখ্যা কিছুটা হ্রাস পেয়েছিল। নতুন বছরে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যায় ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা পরিলক্ষিত হবে।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত ১৫ অক্টোবর থেকে মোবাইল ইন্টারনেটের সবচেয়ে জনপ্রিয় প্যাকেজ তিন দিন মেয়াদের প্যাকেজ বন্ধ করে দেওয়া হয়। আরও বন্ধ করা হয় ১৫ দিনের প্যাকেজ। বর্তমানে চালু আছে ৭ ও ৩০ দিনের প্যাকেজ। আরেকটি আছে আনলিমিটেড। নতুন প্যাকেজ চালুর পরে মোবাইল ইন্টারনেট খাতে গ্রাহক কমতে থাকে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। যদিও নিয়ন্ত্রক সংস্থা বলছে, তিন দিন মেয়াদের প্যাকেজ বন্ধ করে দেওয়ার ফলেই যে এ খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে, তা নাও হতে পারে। এটা বুঝতে হলে ২-৩ মাস দেখতে হবে। তাহলেই বোঝা যাবে আসলে এই খাতে কি হয়েছে, সমস্যাটা কোথায়। যদিও পরে গ্রাহকের তুমুল আগ্রহের কারণে তিন দিন মেয়াদের প্যাকেজকে ৭ দিন করা হয়। এখন পর্যন্ত এই নিয়মই বলবৎ রয়েছে।
অপরদিকে নভেম্বরে দেশে ব্রডব্যান্ড গ্রাহক ছিল ১ কোটি ২৪ লাখ ৯০ হাজার। এর আগে আগস্টে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট গ্রাহক সংখ্যা ছিল ১ কোটি ২১ লাখ ৫০ হাজার। সেপ্টেম্বর মাসে ৩ লাখ ৪০ হাজার গ্রাহক বেড়ে তা দাঁড়ায় ১ কোটি ২৪ লাখ ৯০ হাজারে। এরপরে গত তিন মাসে (সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও নভেম্বর) ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের গ্রাহক সংখ্যা বাড়েনি, ১ কোটি ২৪ লাখ ৯০ হাজারেই দাঁড়িয়ে আছে।
ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের গ্রাহক না বাড়ার কারণ জানতে চাইলে দেশের ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন আইএসপিএবির সভাপতি এমদাদুল হক বলেন, বছর শেষে আমাদের কিছু গ্রাহক বাড়ে, এবার বাড়েনি। মূল কারণ হলো এই খাতে কিছু সমস্যা রয়ে গেছে।
বিস্তারিত জানতে চাইলে তিনি বলেন, রাজধানীর মহাখালীর খাজা টাওয়ারে আগুন লাগায় অনেক আইআইজি ও আইএসপি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি বকেয়া পড়া রেভিনিউ শেয়ারের জন্য অব্যাহত চাপ দেওয়াও একটা বড় কারণ। সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি তার বকেয়া আদায়ের জন্য হঠাৎ করে ২০টা আইআইজির ব্যান্ডউইথ বন্ধ করে দেওয়াও এই খাতকে চাপে ফেলে। সেই চাপ থেকে খাতটি আর বের হতে পারেনি। ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি রাউটারসহ অন্যান্য যন্ত্রাংশের দাম বৃদ্ধিও এই খাতে প্রবৃদ্ধি হতে দেয়নি।
আইএসপিএবি সভাপতি আরও বলেন, বছর শেষে আমরা নতুন গ্রাহক পেতে ১-২ হাজার টাকার যন্ত্রাংশ বিনামূল্যে দিয়েও সেবা চালু করি। এবার সেটাও সম্ভব হয়নি। ফলে গ্রাহক সংখ্যা আর বাড়েনি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।