সারা দেশে এখন যেন আগুন ঝরছে আকাশ থেকে। গ্রীষ্মের মাঝামাঝি সময়েই প্রকৃতি তার তেজ ছড়িয়ে দিয়েছে সর্বোচ্চ মাত্রায়। আজ ৯ মে চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ ৪১.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে, যা এই মৌসুমের এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ। এ দিন ঢাকাতেও ৩৯.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে, যা রাজধানীর জন্যও মৌসুমের সর্বোচ্চ। এই পরিস্থিতি আরও অন্তত দুই দিন অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
সর্বোচ্চ তাপমাত্রা: মৌসুমের ভয়াবহ চিত্র
চলতি গ্রীষ্মে বাংলাদেশের অনেক অঞ্চলে একটানা তাপপ্রবাহ দেখা যাচ্ছে। যদিও তাপপ্রবাহ একটি পরিচিত প্রাকৃতিক ঘটনা, কিন্তু এবারের প্রবাহ তার তীব্রতা এবং ব্যাপকতার দিক থেকে ব্যতিক্রম। বিশেষজ্ঞদের মতে, ঢাকাসহ দেশের অধিকাংশ অঞ্চল এখন মাঝারি থেকে তীব্র তাপপ্রবাহের মধ্যে পড়েছে।
Table of Contents
তাপমাত্রা যখন ৩৮ থেকে ৩৯.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয়, তখন সেটিকে মাঝারি তাপপ্রবাহ বলা হয়। ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রি হলে তা তীব্র এবং ৪২-এর ওপরে হলে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ হিসেবে চিহ্নিত হয়। চুয়াডাঙ্গার তাপমাত্রা বর্তমানে তীব্র পর্যায়ে রয়েছে।
এই অবস্থায় সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষ। রিকশাচালক, নির্মাণ শ্রমিক, হকারদের জীবন হয়ে উঠেছে কষ্টকর। রিকশাচালক আসাদুল হক বলেন, “আজ সকালেই শরীর ভিজে গেছে ঘামে, সূর্যের তাপে প্যাডেল ঘোরানো দায় হয়ে গেছে।”
তাপপ্রবাহের প্রভাব এবং সম্ভাব্য প্রশমন
তীব্র তাপপ্রবাহের ফলে জনজীবনে এক ধরনের স্থবিরতা নেমে এসেছে। প্রচণ্ড ভ্যাপসা গরমে মানুষ ঘরের বাইরে বের হতে সাহস পাচ্ছে না। যাত্রীসাধারণের পাশাপাশি কর্মজীবী মানুষের যাতায়াতে ভয়াবহ সমস্যা তৈরি হয়েছে। এই পরিস্থিতি সম্পর্কে আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান বলেন, “আগামী দুই দিন তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে। তবে সোমবার থেকে তাপমাত্রা কিছুটা কমতে পারে।”
উল্লেখযোগ্য যে, দেশের বিভিন্ন স্থানে তাপপ্রবাহের কারণে রাস্তাঘাটের পিচও গলে যাচ্ছে। চুয়াডাঙ্গায় রাস্তার পিচ গলে যাওয়ার খবর এরই একটি প্রমাণ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এর মতে, দীর্ঘমেয়াদী তাপপ্রবাহ মানবদেহের জন্য মারাত্মক হিটস্ট্রোক বা হিট ক্র্যাম্পের কারণ হতে পারে। এই তথ্য WHO এর জলবায়ু ও স্বাস্থ্য বিষয়ক প্রতিবেদনেও উল্লেখ রয়েছে।
দেশে আজ থেকে স্বর্ণ বিক্রি হবে নতুন দামে – জেনে নিন প্রতি ভরির সর্বশেষ মূল্য
তীব্র তাপপ্রবাহে করণীয়
🔹 পর্যাপ্ত পানি পান করুন
- দেহে পানিশূন্যতা রোধে দিনে অন্তত ৮–১০ গ্লাস পানি পান করুন।
- চা, কফি ও কার্বনেটেড পানীয় এড়িয়ে চলুন।
🔹 সূর্য থেকে সুরক্ষা
- বাইরে বের হলে হালকা রঙের, ঢিলেঢালা কাপড় পরুন।
- ছাতা ও সানগ্লাস ব্যবহার করুন।
🔹 শিশু ও বয়স্কদের যত্ন
- এই দুই শ্রেণির মানুষ সহজেই হিটস্ট্রোকের শিকার হতে পারেন। তাদের জন্য বাড়তি সতর্কতা প্রয়োজন।
এই মুহূর্তে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা দেশের জনগণের দৈনন্দিন জীবনকে প্রচণ্ডভাবে প্রভাবিত করছে। আগামী দিনগুলোতে আবহাওয়া কিছুটা স্বস্তিদায়ক হলেও তাপপ্রবাহের এ ধারা কীভাবে প্রভাব ফেলবে, সেটি নজরদারির দাবি রাখে।
সর্বোচ্চ তাপমাত্রা: প্রাসঙ্গিক প্রশ্নোত্তর
বর্তমানে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা কোথায়?
চুয়াডাঙ্গায় বর্তমানে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ৪১.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
তাপমাত্রা কত হলে তা তীব্র তাপপ্রবাহ ধরা হয়?
৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে তীব্র এবং ৪২-এর ওপরে হলে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ ধরা হয়।
তীব্র তাপপ্রবাহ কতদিন থাকবে?
আবহাওয়া অধিদপ্তর অনুযায়ী, আগামী দুই দিন তীব্র তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে।
তাপপ্রবাহের সময় কী কী সাবধানতা নেওয়া উচিত?
প্রচুর পানি পান করা, সূর্যের তাপ থেকে বাঁচার চেষ্টা, হালকা পোশাক পরা ও শিশু-বয়স্কদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা উচিত।
তীব্র গরমে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে কারা?
খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষ, রিকশাচালক, নির্মাণ শ্রমিকসহ খোলা আকাশের নিচে কাজ করা মানুষরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির শিকার।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।