মহাকাশের আবর্জনা দেখা যায় না, কিন্তু আছে। মেঘের ওপরে কয়েক লাখ ধ্বংসাবশেষ পৃথিবীকে কেন্দ্র করে ঘুরছে। এগুলো খালি চোখে দেখা যায় না। ১৯৬৫ সালে এড হোয়াইট মহাকাশে হাঁটার সময় একটি গ্লাভস হারিয়ে ফেলেন। গোনা বা ট্র্যাক করা যায় না, মহাকাশে এমন বস্তুর সংখ্যা লাখ লাখ।
বলের চেয়ে বড় আকারের প্রায় ২০ হাজার ধ্বংসাবশেষ পৃথিবীর চারপাশে ঘুরছে। পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে সবচেয়ে বেশি দূরের বর্জ্যের দূরত্ব ৫০০ মাইল। পৃথিবীর চারপাশে বস্তুর বেগ ১৭ হাজার ৫০০ মাইল/ঘন্টা। সর্বোচ্চ গতিতে সবচেয়ে ক্ষুদ্র বর্জ্যও মারাত্মক বিপদ ঘটাতে পারে। কণার মতো ক্ষুদ্র বর্জ্যের আঘাতেও স্পেস শাটলের দরজাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
মার্বেল বা তার চেয়েও ছোট আকারের বর্জ্য পদার্থ আছে প্রায় ৫ লাখ। মহাকাশের ভাসমান বর্জ্য ট্র্যাক করতে যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবাহিনীর ব্যবহৃত দুরবিনসংখ্যা ৯টি। বিজ্ঞানীদের হিসাব অনুযায়ী ২০০৬ সালে এ ধরনের আবর্জনার সংখ্যা ছিল প্রায় ১০ হাজার। আর বর্তমানে এ আবর্জনার পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার। অর্থাৎ মাত্র পাঁচ বছরে মহাকাশে প্রায় ৬ হাজার নতুন আবর্জনার জন্ম হয়েছে।
অন্য একটি হিসাবে দেখা যায়, মহাকাশে প্রায় ২২ হাজার ময়লার টুকরো রয়েছে, যেগুলো পৃথিবী থেকেই দেখা যায়। মহাকাশে অল্প সময়ে এত দ্রম্নত আবর্জনা বৃদ্ধির ব্যাপারে বিজ্ঞানীরা ২০০৭ এবং ২০০৯ সালের দুটি দুর্ঘটনার কথা উলেস্নখ করেছেন। এর মধ্যে প্রথম দুর্ঘটনাটিকে বলা যায় সম্পূর্ণ ইচ্ছাকৃত। কারণ ২০০৭ সালে চীন তাদের তৈরি একটি অ্যান্টি-স্যাটেলাইট ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করে দেখার জন্য সেটিকে আরেকটি অচল স্যাটেলাইটের দিকে ছুড়ে মেরেছিল।
মহাকাশে ৪০টিরও বেশি আবর্জনার টুকরো রয়েছে যেগুলোর ওজন তিন টনেরও বেশি হবে। আর এ আবর্জনাগুলো সচল থাকা যেকোনো স্যাটেলাইটে সহজেই যেকোনো ধরনের সমস্যা তৈরি করতে পারে। মহাকাশের এসব আবর্জনা দূর করতে বিজ্ঞানীরা তাই এখন ওঠে-পড়ে লেগেছেন। পেন্টাগনের বিজ্ঞান বিষয়ক থিংক-ট্যাঙ্ক ‘ডিফেন্স অ্যাডভান্সড রিসার্চ প্রজেক্টস এজেন্সি’ সংক্ষেপে ‘ডারপা’ মহাকাশের এ আবর্জনা সরানোর জন্য একটি পরামর্শ দিয়েছে, যা বিজ্ঞানীরা ভেবে দেখছেন।
‘ডারপা’র মতে, আবর্জনা ধরার জন্য হারপুন, জাল বা ছাতার মতো যন্ত্র ব্যবহার করা যেতে পারে, যার উদ্দেশ্য হবে আবর্জনাগুলোকে আরও বেশি করে পৃথিবীর দিকে ঠেলে দেওয়া কিংবা আরও উঁচু কোনো নিরাপদ কক্ষপথে ঠেলে দেওয়া। বর্তমান আইন অনুযায়ী এক দেশ আরেক দেশের ফেলে দেওয়া স্যাটেলাইটের ধ্বংসাবশেষ পরিষ্কার করতে পারে না। এক্ষেত্রে এসব আবর্জনা পরিষ্কারের ব্যাপারে আন্তর্জাতিক আইন পরিবর্তনেরও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।