জুমবাংলা ডেস্ক : ৩৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৯০ হাজার টন ব্লাক গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এর মধ্যে কাতার থেকে ৩০ হাজার মেট্রিক টন, সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ৩০ হাজার মেট্রিক টন এবং কাফকো থেকে ৩০ হাজার মেট্রিক টন ইউরিয়া সার কেনা হবে।
বুধবার (২৮ আগস্ট) সচিবালয়ে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে এই সার কেনার অনুমোদন দেওয়া হয়। কমিটির আহ্বায়ক অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। এটি ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের ক্রয় কমিটির প্রথম বৈঠক।
বৈঠকে সার কেনা সংক্রান্ত যে তিনটি প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, তার অনুমোদন চাওয়া হয় শিল্প মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে। সার কেনার এই তিন চুক্তিই করা হয় ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করা শেখ হাসিনা সরকারের আমলে।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, রাষ্ট্রীয় চুক্তির আওতায় সংযুক্ত আরব আমিরাতের ফার্টিগ্লোব থেকে ৩০ হাজার মেট্রিক টন ব্লাক গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার কেনার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১২১ কোটি ৯৫ লাখ ৩০ হাজার টাকা। প্রতি মেট্রিক টনের মূল্য ৩৪৪.৫০ মার্কিন ডলার।
আরেক প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে কাতারের মুনতাজাত থেকে ৩০ হাজার মেট্রিক টন ব্লাক গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার ১২০ কোটি ৬ লাখ ৬১ হাজার ৮০০ টাকায় আমদানির অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটি। প্রতি মেট্রিক টন সারের মূল্য ধরা হয়েছে ৩৩৯.১৭ মার্কিন ডলার। এই সারও রাষ্ট্রীয় চুক্তির আওতায় আমদানি করা হবে।
সভায় দেশীয় প্রতিষ্ঠান কাফকো থেকেও ৩০ হাজার মেট্রিক টন সার কেনার প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এই সার কেনার জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১১৭ কোটি ৭৯ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। ব্যাগিং চার্জসহ প্রতি মেট্রিক টনের মূল্য ধরা হয়েছে ৩৩২.৭৫ মার্কিন ডলার।
শিল্প মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সংযুক্ত আরব আমিরাতের ফার্টিগ্লোব ডিসটিবিউশন লিমিটেড থেকে ফার্ম ২.৭০ লাখ মেট্রিক টন এবং আপৎকালীন ও জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য অপশনাল ১.২০ লাখ মেট্রিক টনসহ মোট ৩.৯০ লাখ মেট্রিক টন ইউরিয়া সার আমদানির পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়।
আরব আমিরাতের ফার্টিগ্লোব থেকে জিটুজি চুক্তির আওতায় ২০০৭ থেকে ইউরিয়া সার আমদানির কার্যক্রম শুরু হয়। তারই ধারাবাহিকতায় প্রতি বছর সংশোধনী চুক্তি স্বাক্ষর করে প্রতিষ্ঠানটি থেকে ইউরিয়া সার আমদানি করা হচ্ছে। ২০২৩ সালের ১৪ জুন অনুষ্ঠিত অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রীসভা কমিটির অনুমোদনে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সার আমদানির জন্য ফার্টিগ্লোবের সঙ্গে চুক্তি সই হয়েছে।
চুক্তির মেয়াদ ২০২৩ সালের ১ আগস্ট থেকে চলতি বছরের ৩১ জুলাই পর্যন্ত অর্থাৎ এক বছর। এই সময়ের মধ্যে ফার্টিগ্লোব থেকে ৩০ হাজার মেট্রিক টনের ৯টি লটে ফার্ম ২.৭০ লাখ মেট্রিক টন এবং জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য ২টি অপশনাল ০.৬০ লাখ মেট্রিক টন সার আমদানির পরিকল্পনা নেওয়া হয়। ফার্টিগ্লোবের নেগোশিয়েটিং ব্যাংক সোনালী ব্যাংক থেকে ইস্যু করা এলসি অ্যাড। কনফার্ম না করায় একটি লটের সারের মূল্য পরিশোধ সাপেক্ষে ফার্টিগ্লোব পরবর্তী লটের সার সরবরাহ করে আসছে।
এ কারণে ফার্টিগ্লোবের নিকট থেকে পরিকল্পনা মাফিক সার আমদানি বিলম্ব হয়েছে। চুক্তিবদ্ধ সময়সীমার মধ্যে অর্থাৎ চলতি বছরের ২৫ জুলাই প্রকাশিত বুলেটিন অনুযায়ী ১১তম লটের দর গ্রহণ করা হয়েছে। এই ১১তম লটের লেক্যান চুক্তির মেয়াদের পরে হলেও এলসি অ্যাড কনফারমেশন সাপেক্ষে ফার্টিগ্লোব পরিবর্তিত লেক্যানে সারবরাহ করতে সম্মত আছে। ফার্টিগ্লোবের সঙ্গে পারস্পরিক আলোচনা ও সমঝোতার ভিত্তিতে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ১১তম লটের ৩০ হাজার মেট্রিক টন ইউরিয়া সার আমদানির লেক্যান নির্ধারণ করা হয়েছে চলতি বছরের ২১-২৫ আগস্ট।
২০২৪-২৫ অর্থবছরে কাতারের মুনতাজাতের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ সারের পরিমাণ ফার্ম ২.৭০ লাখ মেট্রিক টন এবং আপৎকালীন ও জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য অপশনাল ২.৪০ লাখ মেট্রিক টনসহ মোট ৫.১০ লাখ মেট্রিকটন টন। মুনতাজাত থেকে জিটুজি চুক্তির আওতায় ২০০৭ থেকে ইউরিয়া সার আমদানির কার্যক্রম শুরু হয়। তারই ধারাবাহিকতায় প্রতি বছর সংশোধনী চুক্তি স্বাক্ষর করে প্রতিষ্ঠানটি থেকে ইউরিয়া সার আমদানি করা হচ্ছে।
গত ১১ জুন অনুষ্ঠিত অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রীসভা কমিটির অনুমোদন নিয়ে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সার আমদানির জন্য মুনতাজাতের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এই চুক্তির মেয়াদ চলতি বছরের ১ জুলাই থেকে ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। এই সময়ে মুনতাজাত থেকে ৩০ হাজার মেট্রিক টনের ৯টি লটে ফার্ম ২.৭০ লাখ মেট্রিক টন সার আমদানি করা হবে। মুনতাজাতের সঙ্গে পারস্পরিক আলোচনা ও সমঝোতার ভিত্তিতে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম লটের ৩০ হাজার মেট্রিক টন বাল্ক গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার আমদানির লেক্যান নির্ধারণ করা হয়েছে চলতি বছরের ১-৫ সেপ্টেম্বর।
কাফকো থেকে ৫.৪০ মেট্রিক টন ইউরিয়া সার কেনার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এর অংশ হিসেবে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দ্বিতীয় লটের ৩০ হাজার মেট্রিক টন ইউরিয়া সার আমদানির প্রাইস অফার প্রেরণের জন্য কাফকোকে অনুরোধ করে বিসিআইসি। কাফকো গত ২৫ জুলাই প্রকাশিত চারটি বুলেটিনের দর অনুযায়ী দ্বিতীয় লটের ৩০ হাজার মেট্রিক টন ইউরিয়া সারের প্রাইস অফার প্রেরণ করে। কাফকোর প্রাইস অফারের মেয়াদ ২৯ আগস্ট পর্যন্ত বলবৎ আছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।