জুমবাংলা ডেস্ক : যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নাক কান গলা বিভাগে ডাক্তার দেখানোর এক বছর পর রোগীর অপারেশনের দিন দেয়া হচ্ছে। অর্থাৎ সরকারি এই হাসপাতালে অপারেশনের জন্য রোগীকে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হবে। কিন্তু অধিকাংশ রোগী এতো সময় অপেক্ষায় থাকেন না। তারা টাকার বিনিময়ে বেসরকারি হাসপাতাল থেকে অপারেশন করিয়ে নেন। রোগীর সমস্যাকে পূঁজি করে খোদ চিকিৎসকরা রোগীকে ব্যক্তিগত হাসপাতালে ভাগিয়ে নেয়ার ধান্দা করে। চিকিৎসক কর্মকর্তারা বলেছেন, সরকারি হাসপাতালে রোগীর চাপ থাকার কারণে অপারেশনের জন্য রোগীকে সময় গুণতে হয়। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০২০ সালের ১৭ আগস্ট পলিপ অপারেশনের জন্য হাসপাতালে ডাক্তার দেখাতে আসেন ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার গৌরিনাথপুর গ্রামের মৃত জামাত আলী মন্ডলের ছেলে ফারুক হোসেন (৩০)। ডাক্তার দেখানোর বছর পার হলেও তার অপারেশন করা হয়নি।
ফারুক হোসেন জানান, অপারেশনের জন্য প্রথমবার তাকে ৭ ডিসেম্বর ভর্তির দিন দেয়া হয়। কিন্তু অপারেশন করা হয়নি অজ্ঞাত কারণে। ভর্তির দ্বিতীয় তারিখ দেয়া হয় চলতি বছরের ৯ আগস্ট। এদিন তিনি ভর্তি হলেও অপারেশন না করিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হয়। সর্বশেষ গত ১৭ অক্টোবর ফের হাসপাতালের বহির্বিভাগে আসেন। এ সময় ডাক্তার রাশেদ আলী মোড়ল তাকে ফের ভর্তির দিন দিয়েছেন। আরও জানান, আগামী ৬ নভেম্বর হাসপাতালের ভর্তির হওয়ার পর বোঝা যাবে এবার তার অপারেশন করা হবে কিনা। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, অর্থ থাকলে সরকারি হাসপাতালে অপারেশনের জন্য তাকে বছরের পর বছর ঘুরতে হতো না। বেসরকারি হাসপাতালে অপারেশন করাতেন তিনি।
১৭ অক্টোবর নাক ও গলার সমস্যা নিয়ে ডাক্তার দেখাতে হাসপাতালে বহির্বিভাগে আসেন যশোর সদর উপজেলার পুলেরহাট এলাকার শাকিল নামে এক রোগী। দায়িত্বরত ডাক্তার এবিএম দেলোয়ার হোসেন রোগীকে অপারেশন করার নির্দেশনা দেন। অপারেশনের জন্য তার ভর্তির তারিখ নির্ধারণ করা হয় ২০২২ সালের ৩১ জানুয়ারি। রোগীর স্বজন জানান, রোগীর এখন সমস্যা হচ্ছে অথচ তার অপারেশনের জন্য তারিখ দেয়া হচ্ছে কয়েক মাস পর। সরকারি হাসপাতালে মানুষের এটা কোন ধরণের দুর্ভোগ। কোন ক্লিনিক থেকে অপারেশন করাবেন বলে ক্ষোভ প্রকাশ করে তারা সরকারি হাসপাতাল থেকে চলে যান।
যশোর সদর উপজেলার চুড়ামনকাটি গ্রামের আব্দুল আজিজ জানান, তার ছেলে টনসিলের সমস্যায় ভুগছেন। ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে ডাক্তার দেখানোর জন্য হাসপাতালে আনা হয়। সেই থেকে দুই বার অপারেশনের জন্য দেয়া ভর্তির তারিখ পাল্টানো হয়েছে। এখন তাকে আগামী মাসে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।এতে তিনি হতাশ হয়েছেন। এদিকে, হাসপাতালের রেজিস্ট্রার খাতার তথ্যমতে, ২০২১ সালের ৪ ডিসেম্বর থেকে ২০২২ সালের ১১ এপ্রিল পর্যন্ত অপারেশনের জন্য ভর্তি সিরিয়াল দেয়া হয়েছে ৮৪ জন রোগীর।
নাজমুল ইসলাম নামে একজন জানান, সমস্যার জন্য ডাক্তার দেখাতে এসেছিলাম। তাকে অপারেশনের কথা বলেছেন। অপারেশনের জন্য ৬ মাস অপেক্ষা করতে হবে। যা খুবই দুংখজনক। এই যদি হয় সরকারি হাসপাতালের অবস্থা তাহলে সাধারণ মানুষ যাবে কোথায়। সূত্র জানায়, সরকারি এই হাসপাতালে এমন অবস্থার কারণে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে অপারেশন হয় মুহূর্তের মধ্যে। সরকারি হাসপাতালে যে চিকিৎসক অপারেশনের জন্য মাসের পর মাস অপেক্ষায় রাখেন, বেসরকারি একই চিকিৎসক রোগী গেলেই তাকে একদিনে অপারেশন করে দিচ্ছেন।
রোগী ও স্বজনরা জানিয়েছেন, বেসরকারি হাসপাতালে অপারেশন করলেই টাকা। আর সরকারি হাসপাতালে টাকা নেই। তাই রোগীদের নানা অজুহাতে ঘোরানো হয়। এটা চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত বাণিজ্য জমজমাট করার একটা কৌশল। নাক কান গলার বিভাগীয় প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ডা. আবু কায়সার জানান, সরকারি হাসপাতালে রোগীর প্রচণ্ড চাপ থাকে। প্রতি মাসে অন্তত ৫০ জন রোগীকে অপারেশনের তারিখ দেয়া হয়। আর সিরিয়াল অনুযায়ী প্রতি সপ্তাহে ২ দিন অপারেশনের সুযোগ পাওয়া যায়। তাই ১ মাসে ৮ থেকে ৯ টার বেশি রোগীর অপারেশন করা সম্ভব হয়না। ফলে লম্বা লাইন পড়ে যায়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।