সমীর কুমার দে, ডয়চে ভেলে: ভাদ্রের একেবারে বিদায়লগ্নে শুক্রবার সারাদিনে মাত্র ১৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে ঢাকায়৷ এতেই কাঁদাপানির সঙ্গে যানজট মিলে চরম দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ মানুষ৷
ঢাকায় কেন এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, এ প্রশ্নে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক মহাপরিচালক ম. ইনামুল হক ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘মেট্রোরেলের কারণে খোড়াখুড়ি হচ্ছে৷ এতে তো দুর্ভোগ বাড়ছে, কিন্তু ড্রেনগুলো যাদের পরিস্কার রাখার কথা তারা কি সেটা করছেন? আমার জবাব না৷ কারণ এখানে দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণহীন৷ যাদের কাজ করার কথা, তারা সেটা না করেই বিল তুলে নিচ্ছেন৷ এগুলো দেখভালেরও যেন কেউ নেই৷”
তবে ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিন এ খান এমন ঢালাও মন্তব্যের সঙ্গে একমত নন৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘রাজধানী কেন্দ্রিক মাত্র ৪০০ কিলোমিটার খালের দেখাশোনা করে ওয়াসা৷ আর তিন হাজার কিলোমিটার খালের দেখাশোনার দায়িত্ব সিটি কর্পোরেশনের৷ ওয়াসা নিজের কাজটি ঠিকভাবেই করছে৷”
বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে শুক্রবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত সারা দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৮১ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলায়৷ আর শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ঢাকায় বৃষ্টির পরিমাণ ছিল ১৮ মিলিমিটার৷ অল্প বৃষ্টিতেই দুর্ভোগ পিছু ছাড়েনি৷ যদিও ছুটির দিন হওয়ায় রাস্তায় বের হওয়া মানুষের সংখ্যা ছিল তুলনামূলক কম৷ তারপরেও অনেক জায়গায় জলজট আর যানজট মিলে একাকার হয়ে গেছে৷
আবহাওয়াবিদ আরিফ হোসেন বলেন, মৌসুমি বায়ুর কারণে এখন দেশজুড়ে বৃষ্টি হচ্ছে৷ শনিবার থেকে বৃষ্টি কমার সম্ভাবনা রয়েছে৷ আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ি, মৌসুমি বায়ু ভারতের রাজস্থান, উত্তর প্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, হরিয়ানা, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চল পেরিয়ে বিস্তৃত হয়েছে৷ এই বায়ুর একটি অংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত৷
নগর পরিকল্পনাবিদ স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘চাইলেই এই দুর্ভোগ কমানো সম্ভব কিন্তু সেই কাজটি করবে কে? মেট্রোরেল হচ্ছে, ভালো কথা৷ কিন্তু তাদের সঙ্গে চুক্তি আছে, সেখানে স্পষ্ট বলা আছে, মেট্রোরেলের পাশের রাস্তাটি সব সময় সংস্কার করে ভালো রাখতে হবে৷ প্রয়োজনে পাশ দিয়ে বিকল্প ড্রেন নির্মাণ করতে হবে৷ রাস্তা সংকুচিত হওয়ার কারণে যে দুর্ভোগ হওয়ার কথা সেটা মানুষ মেনে নেবে৷ কিন্তু ওই সংকুচিত রাস্তা কেন ভাঙাচোড়া থাকবে? সেটা তো এমন থাকার কথা না৷ আমি বহুবার দুই মেয়রের কাছে দৌঁড়েছি, শেষ পর্যন্ত উত্তরের মেয়রকে দিয়ে একটি কমিটি করাতে সমর্থ হয়েছি৷ কিন্তু মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ সেই কমিটির কথাও শোনে না৷ তাহলে তাদের বিল কেন দেওয়া হচ্ছে? এমনকি শীতকালে রাস্তায় পানি দেওয়ার জন্য আমাদের উচ্চ আদালতে যেতে হয়েছে৷”
এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণের পথ কি, সেই প্রশ্নে মোবাশ্বের বলেন, ‘‘অবশ্যই পথ আছে৷ আমাদের সরকার তো তাদের টাকা দিচ্ছে৷ কিন্তু আমরা সেবা পাচ্ছি না৷ আমি বলব, বিল আটকে দিন, মানুষের দুর্ভোগ কমে যাবে৷ যে কাজগুলো তাদের করার কথা, সেগুলো তারা করবেন৷ না হলে আমাদের এর মধ্যেই চলতে হবে৷ আমাদের পাশের দেশ ভারতে যান, সেখানে পাতাল রেল, মেট্রোরেল একসঙ্গে হচ্ছে, কিন্তু সেখানকার মানুষ কি আমাদের মতো দুর্ভোগ পোহাচ্ছে? একেবারেই না৷ তাহলে আমরা পারব না কেন?”
ম. ইনামুল হক বলেন, ‘‘মেট্রোরেল হবে, একটা না, প্রয়োজনে তিনটা হবে কিন্তু মানুষ এত দুর্ভোগে পড়বে কেন? সেটা সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে৷ আমরা সেটা পারছি না৷ এর প্রধান কারণ দুর্নীতি৷ এটা এতই নিয়ন্ত্রণহীণ হয়ে পড়েছে যে, আমরা সবাই অসহায় হয়ে গেছি৷” সূত্র: ডয়চে ভেলে
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।