আন্তর্জাতিক ডেস্ক : গত দুই দশকে যুক্তরাষ্ট্রের তথাকথিত ‘সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের’ বলি হয়েছেন কয়েক কোটি মানুষ। দেশটির একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ যুদ্ধের কারণে গত ২০ বছরে বিভিন্ন দেশে সাড়ে ৩ কোটির ওপরে মানুষ বাস্তুহারা হয়েছেন।
‘কস্ট অফ ওয়ার প্রজেক্ট’ এর ওপর মঙ্গলবার ৩০ পৃষ্ঠার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্রের রোড আইল্যান্ডের ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়। তাতে দাবি করা হয়েছে, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফলে অন্তত ৩ কোটি ৭০ লাখ মানুষ ঘরহীন হয়েছেন। আর বাস্তুহারাদের মধ্যে বেশির ভাগ আফগানিস্তান, ইরাক, পাকিস্তান, ইয়েমেন, সোমালিয়া, ফিলিপাইন, লিবিয়া ও সিরিয়ার।
তাতে আরও বলা হয়েছে, গত দুই দশকে শুধু এই আট দেশে যে সংখ্যক মানুষ বাস্তুহারা হয়েছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বাস্তুহারাদের সমান।
ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের কারণে বাস্তুহারাদের প্রকৃত সংখ্যা এখানে উঠে আসেনি। সত্যিকারের হিসেবটা ৮ কোটি ৮০ লাখ ও ৫ কোটি ৯০ লাখের মধ্যে পৌঁছাতে পারে।
এই প্রতিবেদনের প্রধান গবেষক ওয়াশিংটনের আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ডেভিড ভাইন নিউ ইয়র্ক টাইমসকে বলেন, “এই দেশগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পৃক্ততা ভয়াবহ বিপর্যয় বয়ে এনেছে, ভয়াবহরকম ধ্বংসাত্মক হয়েছে।”
গবেষকেরা বলেছেন, দেশগুলোর জনসাধারণকে অভিবাসী হওয়ার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রই একমাত্র কারণ ছিল না। তবে যেসব দ্বন্দ্ব-সংঘাতের কারণে তারা অভিবাসী হয়েছে তাতে দেশটি হয়তো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে অথবা ইন্ধন জুগিয়েছে।
১/১১ এর পর সন্ত্রাসবাদ নির্মূলের নামে যুক্তরাষ্ট্রের কার্যক্রমটা বেশি বেড়েছে বলে প্রতিবেদনটিতে দাবি করা হয়েছে। ওই ঘটনার পর প্রতিবেশী, সম্প্রদায় তথা ওসব দেশের পুরো সমাজ ব্যবস্থার সঙ্গে এক ধরনের বিচ্ছিন্নতা তৈরি করে।
“উদাহরণ স্বরূপ ইরাকের কথা বলা যায়, ২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে আক্রমণের জেরে দেশটিতে সাম্প্রদায়িক লড়াই এবং বাস্তুচ্যুতি হয়। অথচ, দেশটিতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ছিল। শিয়া, সুন্নি ও অন্যান্য ধর্মীয় ও জাতিগত গোষ্ঠীগুলো পাশাপাশি বাস করত, একসঙ্গে কাজ করত এবং অন্তর্বিবাহ হতো।”
“যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পর, সেখানে তিন ধরনের বড় জাতিগত-সাম্প্রদায়িক অঞ্চল তৈরি হলো। শিয়া, সুন্নি ও কুর্দিদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান আত্ম পরিচয় জন্ম নিল। যুক্তরাষ্ট্রের শক্তির ফলে বাগদাদের মতো শহরগুলোতে জাতিগত বিভেদ তৈরি হলো।”
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।