আন্তর্জাতিক ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রে একের পর এক বন্দুক হামলায় আগ্নেয়াস্ত্র নিষেধাজ্ঞার পক্ষে জনমত গড়ে উঠছে৷ কিন্তু বন্দুকের সমর্থনে যারা, তাদের মতে সমস্যা মূলত মানসিক৷ তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানসিক সমস্যা দিয়ে সহিংসতার ব্যাখ্যা দেয়া যায় না৷ খবর ডয়চে ভেলে’র।
‘ডেনমার্কে বন্দুক নিষিদ্ধ, তারপরও কোপেনহাগেনে বন্দুক হামলা’, ফ্লোরিডার রিপাবলিক দলের কংগ্রেস প্রার্থী ল্যাভার্ন স্পাইসার গত রোববার এই টু্ইটটি করেন, যেটি পরে ভাইরাল হয়৷ আগ্নেয়াস্ত্র নিষিদ্ধ করে বন্দুক হামলাঠেকানো যাবে না, যুক্তরাষ্ট্রে এমন মতের পক্ষে থাকা রাজনীতিবিদদের মধ্যে একজন ল্যাভার্ন স্পাইসার৷ বন্দুকের অধিকারের পক্ষে থাকারা প্রতিটি হামলার পরই এমন যুক্তি তুলে ধরেন৷ তাদের মতে এই হামলাগুলোর জন্য দায়ী মানসিক সমস্যা, আগ্নেয়াস্ত্র নয়৷
এই ব্যাখ্যাটি নানা সময়ে সরলভাবে তুলে ধরে মার্কিনগণমাধ্যমও৷ তবে কোনো গবেষণাতেইসব হামলাকারীর একই ধরনের মানসিক পরিস্থিতি থাকার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না৷ এমনকি শুধু মানসিক স্বাস্থ্যের কারণে এই ধরনের সহিংসতা ঘটছে এমন তথ্যও পাওয়া যায় না৷
মনোবিজ্ঞানের অধ্যাপক লিসা পেসকারা-কোভাখ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘মানসিক রোগ অবশ্যই একটা গুরুত্বপূর্ণ কারণ৷ কিন্তু সেটা একমাত্র নয়৷ আমাদের শুধু এর উপর মনোনিবেশ করা উচিত নয়৷”
সোমবার শিকাগোতে স্বাধীনতা দিবসের শোভাযাত্রায় হামলার পর এই অধ্যাপক সন্দেহভাজন অভিযুক্তের অতীত খতিয়ে দেখেন৷ তার মতে, আগে যারা আরো এমন সহিংসতার ঘটনা ঘটিয়েছে, তাদের সঙ্গে এই তরুণের অনেক মিল আছে৷ পেসকারা-কোভাখ বলেন, তিনি বিষণ্ণতায় ভুগছিলেন৷ ২০১৯ সালে একবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেন৷ এর কয়েক মাস পর নিজের পরিবারের সদস্যদের হত্যারও হুমকি দেন৷ কিন্তু এই তরুণ কেন নির্বিচারে মানুষের উপর গুলি চালিয়েছে তা তার বিষন্নতা দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায় না৷ তিনি বলেন, ‘‘তার বেশ কয়েকটি উদ্বেগজন আচরণ ছিল৷ কিন্তু সেগুলোর কোনোটি আনুষ্ঠানিক অভিযোগে রূপ নেয়নি৷”
পেসকারা-কোভাখ মনে করেন, ঐ ব্যক্তির মানসিক স্বাস্থ্য যেমনই থাক না কেন, শেষ পর্যন্ত বন্দুকের সহজলভ্যতাই এই ধরনের হামলাকে সম্ভব করে তোলে৷
বন্দুক বনাম মানসিক সমস্যা এই বিতর্ককে সামনে আনাও অযৌক্তিক বলে মনে করেন তিনি৷ তার মতে, এমন ব্যাখ্যা তৈরি করার মাধ্যমে অপরাধীকেও এক রকমের ভুক্তভোগী হিসেবে হাজির করা হয়, যার কারণে অনেক মানুষ আসলে ভুক্তভোগী হয়েছেন৷
সংখ্যা যা বলে
২০১৮ সাল প্রকাশিত এক জরিপ অনুযায়ী, ২০০০ সালে থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত হামলাকারীর মাত্র ২৫ শতাংশের মানসিক রোগ নিরুপণ হয়েছিল৷ আরো কিছু গবেষণাতেও দেখা যায়, হামলাকারীদের গুরুতর মানসিক সমস্যা থাকার হার খুবই কম৷ তবে ২০২০ সালে প্রকাশিত আরেক গবেষণা বলছে ১৯৬৬ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত হমলার ঘটনায় জড়িতদের দুই-তৃতীয়াংশেরই মানসিক সমস্যা ছিল এমন ইঙ্গিত পাওয়া যায়৷
কিন্তু অনেক গবেষকের মতে, এমনকি গুরুতর মানসিক সমস্যাও এই ধরনের নির্বিচার হত্যার প্রয়োজনীয় কারণ নয়৷ ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার অধ্যাপক জেনিফার স্কিম ও তার সহকর্মী দীর্ঘদিন গুরুতর মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত রোগীদের নিয়ে গবেষণা করেছেন৷ তাদের মতে, ‘‘গুরুতর মানসিক সমস্যা এবং সহিংসতার মধ্যে একটি সম্পর্ক আছে৷ কিন্তু মানুষের ধারণা আর গণমাধ্যম সেটিকে যেভাবে তুলে ধরছে সেই তুলনায় এটি দুর্বল এবং কদাচিৎ প্রযোজ্য৷”
তাহলে হামলার কারণ কী?
পেসকারা-কোভাখ বলেন, ‘‘ইস্যুটি গুরুতর মানসিক সমস্যা নয়৷ এই (হামলাকারী) ব্যক্তিরা নিরাশ, হতাশাগ্রস্ত এবং আত্মহত্যাপ্রবণ ছিল৷” তিনি জানান, অনেক তরুণ বন্দুকবাজের ক্ষেত্রে ‘আত্মপরিচয়ের সংকট’, ‘শরীরের ইমেজ সম্পর্কে নিরাপত্তাহীনতা’ ছিল৷ সেই সঙ্গে তারা চরমপন্থি দৃষ্টিভঙ্গি এবং নাৎসি ও অতি পৌরুষ ভাবমূর্তির প্রতি আকৃষ্ট ছিল৷
খ্যাতি এবং দৃষ্টি আকর্ষণও তাদের একটি সচরাচর উদ্দেশ্য৷ পেসকারা-কোভাখ বলেন, ‘‘অনেক সময় অপরাধ সংঘটনকারী মনে করেন তাদের জীবন ছোট৷ কিন্তু তারা বড় কিছুর অংশীদার হতে চান৷ তারা ইতিহাসের অংশীদার হতে চান৷”
এমন হামলা ঠেকানোর উপায় কী? তার মতে, ঝুঁকির কারণগুলো কমাতে হবে৷ মানসিক স্বাস্থ্যসেবা আরো সহজলভ্য করতে হবে৷ কিন্ত তাই বলে মানুসিক রোগ এবং মনস্ত্বাত্ত্বিক পরীক্ষার সঙ্গে সহিংসতার ঝুঁকি এবং হুমকি মূল্যায়নকে গুলিয়ে ফেলা উচিত নয় বলে মনে করেন এই মনরোগ গবেষক৷
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।