আন্তর্জাতিক ডেস্ক : করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব যুক্তরাষ্ট্রে এমন এক পরিস্থিতির দিকে মোড় নিয়েছে, যেখানে অনেকটাই নাকাল হয়ে পড়েছে দেশটির চিকিৎসা ব্যবস্থা। যে দেশে বিনা চিকিৎসায় মৃতের হার শূন্য শতাংশ, সেখানেও আজ মৃতের ঘটনা ঘটছে বিনা চিকিৎসায়।
যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলীয় অঙ্গরাজ্য নিউইয়র্ক সিটি, যেখানে বিনা চিকিৎসায় ৩ হাজার ৭৮৫ মানুষের মৃত্যু হয়েছে! এ তথ্য প্রকাশ করেছে রাজ্যটির স্বাস্থ্যবিভাগ।
নিউইয়র্কে করোনা প্রাদুর্ভাব শুরুর পর থেকে প্রতিদিনের আক্রান্ত-মৃত্যুর হিসাব করছিল স্বাস্থ্যবিভাগ। দিনে কতজন রোগী চিকিৎসা পাচ্ছেন, কতজন সেবার বাইরে রয়েছে; তারও হিসেব ছিল। গত কয়েক সপ্তাহের জরিপের ওপর ভিত্তি করে ৩ হাজার ৭৮৫ মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে তথ্য দেয় নিউইয়র্ক সিটির স্বাস্থ্যবিভাগ।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি স্টেটের জনগণই ভয়াল করোনার থাবায় ন্যুজ। গত একমাসে ভয়াবহ অবস্থা নিউইয়র্ক, মিশিগানসহ অন্যান্য কয়েকটি স্টেটে। তবে সবচেয়ে বেশি নিউইয়র্কে। এ অঙ্গরাজ্যটিতেই ২ লাখ ২২ হাজার ২৪৮ জন আক্রান্ত হয়েছে। মারা গেছে ১৪ হাজার ৬৩৬ জন। মিশিগানে মৃত্যু হয়েছে ২ হাজার ৯৩ জনের, আক্রান্ত ২৯ হাজার ২৬৩ জন।
গত মার্চের মাঝখান থেকে যুক্তরাষ্ট্রব্যাপী করোনার প্রাদুর্ভাবে প্রাণ গেছে ৩৪ হাজার ৭৪৮ জনের। আক্রান্তের সংখ্যা ৬ লাখ ৭৬ হাজার ৬৭৬, সুস্থ হয়েছেন মাত্র ৫৬ হাজার ১২৭ জন।
চলতি এপ্রিলের মধ্যভাগে এসে পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এলেও নাকাল যুক্তরাষ্ট্র। লকডাউন অব্যাহত রয়েছে পুরো দেশজুড়ে। আগামী ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত নিউইয়র্কে চলবে জরুরি অবস্থা।
স্বাস্থ্যবিভাগের প্রতিবেদন থেকে আরও জানা যায়, শহরে এতটাই ভয়াবহ আকার ধারণ করেছিল করোনাভাইরাস, কোনো হাসপাতালেই বেড খালি ছিল না। কারও মৃত্যু হলেও শুধু বিছানা মিলছিল আরেক রোগীর জন্য। আক্রান্ত মানুষের স্রোত নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন হোটেল বিখ্যাত সব অডিটোরিয়াম, স্টেডিয়াম, এমন কি জাহাজেও হাসপাতাল করা হয়েছে। পরিস্থতি মোকাবিলায় বিভিন্ন স্টেট থেকে ডাক্তার, নার্স এবং স্বাস্থ্যকর্মী আনতে হয়েছে। সর্বোপরি সেনাবাহিনীর চিকিৎসক দল মাঠে নামাতে হয়েছে।
এত মানুষ আক্রান্ত হয়েছে, অনেকেরই হাসপাতালে জায়গা হয়নি। অভাবও ছিল বিভিন্ন মেডিকেল সরাঞ্জামের। এ সময় সবচেয়ে বেশি এবং অমানবিক কষ্ট শিকার করতে হয়েছে ডাক্তার, নার্স, পুলিশ, এ্যাম্বুলেন্স কর্মী, ফায়ার সার্ভিসের লোকজনকে। ঘুমানোর সময় নেই, খাবার সময় নেই, অবসরের সময় নেই। তারা যেন নিজেদের জীবন মানুষের কল্যাণে উৎসর্গ করে দিয়েছেন। অন্যদিকে যারা হাসাপাতালে গিয়েছে, তারাও ঠিক মতো চিকিৎসা পায়নি। কারণ, পর্যাপ্ত ভেন্টেলেইটরের অভাব। অন্যান্য সরঞ্জামের অপ্রতুলতার কারণে এক রোগীর জিনিস আরেক রোগীকে দেওয়া হয়েছিল। অনেক রোগী দিনের পর দিন হাসপাতালের ফ্লোরে পড়ে ছিলেন।
নিউইয়র্কের স্বাস্থ্যবিভাগ আরও জানায়, যারা বিনা চিকিৎসায় মারা গেছেন, তাদের অনেকেই নিজের বাসায়, কেউবা নার্সিং হোমে, আবার কেউবা হাসপাতালের ইমার্জেন্সিতে ছিলেন। আক্রান্ত ও মৃতের তালিকায় দেশটিতে বসবাসকারী প্রবাসীরাও ছিলেন। ভারত, পাকিস্তানসহ বাংলাদেশের নাগরিকরাও ছিল এই তালিকায়। অনেকে ভয়ে হাসপাতালে যাননি, কেউবা আবার ব্যক্তিগত চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে বেঁচে থাকার ব্যর্থ চেষ্টা করেছিলেন বলেও জানায় নিউইয়র্কের স্বাস্থ্যবিভাগ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।



