যুবলীগ চেয়ারম্যানের পদ থেকে ওমর ফারুক চৌধুরীকে অব্যাহতি দেয়া হতে পারে- এমন গুঞ্জন আগে থেকেই ছিল। গতকাল রবিবার (২০ অক্টোবর) গণভবনে যুবলীগ প্রতিনিধিদলের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে ওমর ফারুক চৌধুরীর অনুপস্থিতিতে সেই গুঞ্জনের পালে জোরেশোরেই হাওয়া দিলো। শেষ পর্যন্ত গুঞ্জনই সত্যি হলো।
সাম্প্রতিক ক্যাসিনো-কাণ্ডে যুবলীগ নেতারা যখন এক এক করে গ্রেফতার হচ্ছিলেন তখন ‘রাঘববোয়াল হিসেবে’ কারও কারও মুখে যুবলীগ চেয়ারম্যানের নামটিও উচ্চারিত হচ্ছিল। গেল ১৮ সেপ্টেম্বর যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভুঁইয়াকে গ্রেফতারের কয়েক ঘণ্টা আগেই মিরপুরে এক অনুষ্ঠানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে বক্তব্য দেন ওমর ফারুক চৌধুরী। এর পর এক এক করে জি কে শামীম থেকে শুরু করে সবশেষ যুবলীগ নেতা ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটকেও গ্রেফতার করা হয়।
গেল একমাসেরও বেশি সময় ধরে চলা এই ‘শুদ্ধি অভিযানে’ শুরু থেকেই তোপের মুখে থাকা যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীকে গতকাল গণভবনে বৈঠকে নেয়া এক সিদ্ধান্তে সব ধরনের সাংগঠনিক কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আসছে ২৩ নভেম্বর আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের সপ্তম কাউন্সিল। সেই কাউন্সিলকে সামনে রেখে যুবলীগের মতো একটি শক্তিশালী ও বৃহৎ সংগঠনকে সঠিক পথে রাখতে চান আওয়ামী লীগ সভাপতি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল যুবলীগ প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকেই সংগঠনটির প্রেসিডিয়াম সদস্য চয়ন ইসলামকে আহ্বায়ক করার সিদ্ধান্ত নেন প্রধানমন্ত্রী। সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সদস্য সচিব করা হয় যুবলীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মো. হারুনুর রশীদকে।
স্বাভাবিকভাবেই দেশের মানুষের কাছে একটি ছোটখাটো প্রশ্ন দেখা দিয়েছে – ওমর ফারুক চৌধুরীকে অব্যাহতি দিয়ে যাকে সংগঠনের আহ্বায়ক করা হয়েছে কে সেই চয়ন ইসলাম?
শুরুতেই বলে নেয়া যাক- চয়ন ইসলাম সিরাজগঞ্জের সন্তান। জেলার শাহজাদপুর উপজেলার চর নবীপুরে গ্রামের বাড়ি। বাবা মাজহারুল ইসলাম ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এবং পরবর্তীতে তিনি বাংলা একাডেমির মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন।
চয়ন ইসলামের চাচা ড. আব্দুল খালেক আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনিও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ছিলেন।
চয়ন ইসলাম ১৯৭৭ সাল থেকে শাহজাদপুর থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে ছিলেন। তবে ২০১৪ সালের ১৭ অক্টোবর নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলে তিনি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেন। এর পর সেখান থেকে উঠে আসেন কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে। এক পর্যায়ে কেন্দ্রীয় যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য হন। গত দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।
দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে ১৯৯৮ সালের উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন চয়ন ইসলাম। এর পর ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নিবাচনে সিরাজগঞ্জ-৬ (শাহজাদপুর) আসন থেকে নৌকা প্রতীকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
বাংলাদেশ যুবলীগের সদ্য আহ্বায়কের দায়িত্ব নেয়া চয়ন ইসলামের বোন মেরিনা আক্তার কবিতাও রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। কবিতা বর্তমানে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য।
রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন চয়ন ইসলাম। তার স্ত্রী লিলি ইসলাম একজন গুণী রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী। লিলিও শান্তি নিকেতনের শিক্ষার্থী ছিলেন এবং রবীন্দ্রসঙ্গীতের ওপর ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।