মুফতি আবদুল্লাহ তামিম : হেরা গুহায় জিবরাইল (আ.) এর আগমন করলেন। ঠিক তখন নবী করিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বয়স ৪০ বছর পূর্ণ হলো। এটাই হচ্ছে মানুষের পূর্ণত্ব প্রাপ্তির বয়স। বলা হয়, এ বয়স হচ্ছে পয়গাম্বরগণের নবুওয়াতপ্রাপ্তির উপযুক্ত বয়স।
তখন নবী জীবনে নবুওয়াতের কিছু স্পষ্ট লক্ষণ প্রকাশ হতে লাগল। সে লক্ষণগুলো প্রাথমিক পর্যায়ে স্বপ্নের মাধ্যমে প্রকাশ পাচ্ছিল। তিনি যখনই কোনো স্বপ্ন দেখতেন তা প্রতীয়মান হতো সুবহে সাদেকের মতো। এ অবস্থার মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হলো ছয়টি মাস; যা ছিল নবুওয়াতের সময়সীমার ৪৬ তম অংশ। নবুওয়াতের সময়সীমা ছিল ২৩ বছর।
এরপর তিনি যখন হেরাগুহায় নিরবচ্ছিন্ন ধ্যানে নিমগ্ন থাকতেন, এভাবে দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর অতিবাহিত হতে হতে তৃতীয় বর্ষ অতিবাহিত হতে থাকল, তখন আল্লাহ তাআলা পৃথিবীর মানুষের উপর স্বীয় রহমত বর্ষণের ইচ্ছা করলেন।
তারপর আল্লাহ রাব্বুল আলামিন জিবরাইল আ.-এর মাধ্যমে কোরআনুল কারিমের কয়েকটি আয়াতে কারিমা নাযিল করে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নবুওয়াতের মহান মর্যাদা প্রদানে ভূষিত করেন। (হাফেয ইবনু হাজার বলেন, বায়হাকি এ ঘটনা উদ্ধৃত করেছেন যে, স্বপ্নের সময় ছয় মাস ছিল।
অতএব স্বপ্নের মাধ্যমে নবুওয়াতের শুরু ৪০ বছর পূর্ণ হবার পরে রবিউল আওয়াল মাসেই হয়েছিল। যা তার জন্ম ছিল। কিন্তু জাগ্রত অবস্থায় তার নিকট রমজান মাসে ওহি আসা আরম্ভ হয়েছিল। (ফাতহুল বারি, ১ম খণ্ড, পৃ. : ২৭)
নবুওয়াত লাভের মহান মর্যাদায় ভূষিত হওয়ার মাস ও দিনের তারিখ সম্পর্কে ইতিহাসবিদগণের মধ্যে যথেষ্ট মতভেদ রয়েছে। অধিকসংখ্যক চরিতকারগণ এ ব্যাপারে অভিন্ন মত পোষণ করে থাকেন যে, মাসটি ছিল রবিউল আওয়াল।
কিন্তু অন্য এক দল বলেন, মাসটি ছিল রমজানুল মোবারক। কেউ কেউ আবার এ কথাও বলে থাকেন মাসটি ছিল রজব। দ্বিতীয় দলের মতটি অধিকতর গ্রহণযোগ্য বলে আমাদের মনে হয়, অর্থাৎ যারা বলেন, এটা রমজান মাসে অবতীর্ণ হয়েছিল তাদের মত; কারণ, আল্লাহ পাক কোরআনুল কারিমে আল্লাহ বলেন,
{شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِي أُنْزِلَ فِيهِ الْقُرْآنُ} إِنَّا أَنْزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةِ الْقَدْرِ
আসুন, এখন আমরা উম্মুল মুমিনিন হজরত আয়েশা রা.-এর বর্ণনা থেকে বিস্তারিত বিবরণ জেনে নিই। এটা নৈসর্গিক নুর বা আসমানি দীপ্তির মতো এমন এক আলোকরশ্মি ছিল যা প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে অবিশ্বাস্য ও ভ্রষ্টতার অন্ধকার বিদূরিত হতে থাকে। জীবনের গতিধারা পরিবর্তিত হতে থাকে। ইতিহাসের পট পরিবর্তিত হয়ে নতুন নতুন অধ্যায়ের সৃষ্টি হতে থাকে।
হজরত আয়েশা রা. বলেছেন, রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট ওহি অবতীর্ণ হয়েছিল ঘুমের অবস্থায় স্বপ্নযোগে। তিনি যখন যে স্বপ্নই দেখতেন তা প্রভাতরশ্মির মতো প্রকাশিত হতো।
তারপর ক্রমান্বয়ে তিনি নির্জনতাপ্রিয় হতে থাকলেন। নিরবচ্ছিন্ন নির্জনতায় ধ্যানমগ্ন থাকার সুবিধার্থে তিনি হেরাগুহায় অবস্থান করতেন। কোনো কোনো সময় গৃহে প্রত্যাবর্তন না করে রাতের পর রাত তিনি ইবাদত-বন্দেগি এবং গভীর ধ্যানে নিমগ্ন থাকতেন। এজন্য খাদ্য এবং পানীয় সঙ্গে নিয়ে যেতেন।
সেসব ফুরিয়ে গেলে পুনরায় তিনি গৃহে প্রত্যাবর্তন করতেন। পূর্বের মতো খাদ্য এবং পানীয় সঙ্গে নিয়ে পুনরায় তিনি হেরাগুহায় গিয়ে ধ্যানমগ্ন হতেন। ওহি নাজিলের মাধ্যমে তার নিকট সত্য প্রকাশিত না হওয়া পর্যন্ত এভাবেই তিনি হেরাগুহার নির্জনতায় অবস্থান করতে থাকেন।
এমনইভাবে একদিন তিনি যখন ধ্যানমগ্ন অবস্থায় ছিলেন তখন মহান আল্লাহর দূত জিবরাইল (আ.) তার নিকট আগমন করে বললেন, তুমি পড়।
তিনি বললেন, পড়ার অভ্যাস আমার নেই। তারপর তিনি তাকে অত্যন্ত শক্তভাবে ধরে আলিঙ্গন করলেন এবং ছেড়ে দিয়ে বললেন, তুমি পড়। তিনি আবারও বললেন, আমার পড়ার অভ্যাস নেই। তারপর তৃতীয় দফায় আমাকে আলিঙ্গনাবদ্ধ করার পর ছেড়ে দিয়ে বললেন পড়
اقْرَأْ بِاسْمِ رَبِّكَ الَّذِي خَلَقَ خَلَقَ الْإِنسَانَ مِنْ عَلَقٍ اقْرَأْ وَرَبُّكَ الْأَكْرَمُ সেই প্রভুর নামে পড় যিনি সৃষ্টি করেছেন মানুষকে রক্তপিণ্ড থেকে। পড় সেই প্রভুর নামে যিনি তোমাদের জন্য অধিকতর দয়ার্দ্র। {عَلَّمَ الْإِنْسَانَ مَا لَمْ يَعْلَمْ} পর্যন্ত আয়াত অবতীর্ণ হয়।)
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।