আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ভারতের আসামে ভাষা ও ধর্মীয় কারণে যারা সংখ্যালঘু, তাদের জীবনের চেয়ে নাগরিকত্বের প্রমাণপত্রই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সে রাজ্যের ৩৩টি জেলার মধ্যে ৩০টি বন্যা কবলিত। বিজেপি শাসিত ওই রাজ্যে ত্রাণবণ্টন নিয়েও অভিযোগের শেষ নেই।
ফলাও করে ত্রাণ বিতরণের ঘোষণা দেয়া হলেও বাস্তবে সেটা বন্যাদুর্গতরা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে। বন্যার্তদের সামনে ভয়ঙ্কর ব্রহ্মপুত্র, বরাক বা অন্যান্য নদীর থেকেও ভয়ঙ্কর বেগে ধেয়ে আসছে জাতীয় নাগরিক তালিকা (এনআরসি) ‘জুজু’। সে কারণে বন্যাদুর্গতরা নিজেদের জীবন বাঁচানোর চেয়েও নাগরিকত্ব বাঁচাতে ব্যস্ত।
গতকাল মঙ্গলবার এনআরসি’র খসড়া তালিকাভুক্তদের নাম আবারো ঝাড়াই-বাছাই করতে সুপ্রিম কোর্টে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার আবেদন করেছে। বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকায় তারা অন্তত ২০ শতাংশ নামের নমুনা জরিপ করতে চায়। ৩১ জুলাই চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের আগে রাজ্য ও কেন্দ্র এ আবেদন করেছে।
প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ অবশ্য এ বিষয়ে এখনো কোনো নির্দেশনা দেননি। ৩১ জুলাই এনআরসি’র তালিকা প্রকাশের আগে নতুন করে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের এ আবেদন নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছে সারা আসাম ছাত্র সংস্থা (আসু)।
তাদের অভিযোগ, এনআরসি তালিকা প্রকাশ নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরির জন্যই রাজ্য ও কেন্দ্র টালবাহানা শুরু করেছে। ক্ষোভ প্রকাশ করেছে আসাম রাজ্য নাগরিক অধিকার সমন্বয় সমিতিও।
সংগঠনের পক্ষ থেকে সাধন পুরকায়স্থ বলেন, রাজ্যের মানুষ বন্যায় হাবুডুবু খাচ্ছে। সেদিকে খেয়াল না করে এনআরসি নিয়ে সংখ্যালঘুদের বিপদে ফেলতে ব্যস্ত সরকার। বন্যার কথা মাথায় রেখে রাজ্য বিধানসভার অধিবেশন স্থগিত রাখা হয়েছে। স্থগিত রাখা হয়েছে বিভিন্ন পরীক্ষাও। কিন্তু এনআরসি প্রক্রিয়ায় কোনো খামতি নেই। বন্যাদুর্গতদের সহায়তার থেকেও এনআরসি প্রক্রিয়া বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠছে।
আসামের মরিগাঁওয়ে ব্রহ্মপুত্র ভয়ঙ্কর চেহারা ধারণ করেছে। গ্রামের পর গ্রাম ভাসিয়ে রীতি মতো ত্রাসের সৃষ্টি করেছে। ওই জেলারই বাসিন্দা মুহাম্মদ আলম। ৬৭ বছর বয়সী এই মানুষটির এবারের বন্যায় ভেসে গেছে বাড়িঘর ও ফসল। কোনোরকমে কলার ভেলায় ভেসে প্রাণে বেঁচেছেন আলম ও তার পরিবার। তার পরেও তিনি তৃপ্ত।
নিজেই জানালেন, বন্যায় ব্যাপক খেত, জমি ভেসে গেলেও আমরা বেঁচে গেছি। কারণ আমরা আমাদের কাগজপত্র বাঁচাতে পেরেছি।
কাগজপত্র বলতে এনআরসি’র প্রয়োজনীয় নথিপত্র। আসাম রাজ্য দুর্যোগ মোকাবিলা বাহিনীর জওয়ানরাও স্বীকার করছেন, বানভাসি এলাকার মানুষ নিজেদের নাগরিকত্বের কাগজপত্র বাঁচানোটাকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন।
চলতি মওসুমে আসামের বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭ জন। চার মাসের গন্ডার শাবক থেকে শুরু করে ছোটবড় মিলিয়ে ৫০ টির মতো বন্য পশুও এবারের বন্যায় এখন পর্যন্ত মারা গেছে।
সরকারি সূত্রে খবর পাওয়া গেছে, গুয়াহাটিতে পানি বাড়ছে ঘণ্টায় তিন সেমি। রাজ্যের ৪৪ লাখ ৮৬ হাজার মানুষ বন্যাকবলিত। ছোট-বড় মিলিয়ে ১২ লাখ ৪৪ হাজার পশুও বন্যার কবলে। মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় পানিশক্তিমন্ত্রী গজেন্দ্র সিং শেখাওয়াত আকাশ পথে আসামের বন্যা পরিস্থিতি দেখেন।
কেন্দ্রীয় সরকার দু’শ ৫১ কোটি ৫৫ লাখ টাকা বন্যার ত্রাণে মঞ্জুর করেছে। তার পরেও ত্রাণ যাচ্ছে না দুর্গতদের কাছে। রেল ও সড়ক যোগাযোগ মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত। ফলে জিনিসের দাম সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে।
![](https://inews.zoombangla.com/wp-content/uploads/2024/03/34-5.jpg)
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।