জুমবাংলা ডেস্ক: নির্মাণাধীন ভবনের ছাদে আটা রোদে দিয়েছিলেন গৃহবধূ জাহেদা খাতুন। সেখান থেকে মুঠভর্তি আটা তুলে নিয়ে মুখে ভরছিল অবুঝ এক প্রাণী। রাগ শেষে ব্যর্থ হাসিমিশ্রিত মুখে সেই দৃশ্য একটু দূরে দাঁড়িয়ে দেখছিলেন জাহেদা খাতুন।
শুধু আটা নয়, আশপাশের পুরো এলাকার খাদ্যদ্রব্য সামনে পেলে আপনমনে খেয়ে নেয় বানরের দল। প্রায় দুইশ বছর ধরে এভাবেই বানর-মানুষের সহাবস্থান বজায় রয়েছে। এই সময়ে মধ্যে কখনো কোনো বানর মানুষের আক্রমণের শিকার হয়ে মারা যায়নি বলছেন স্থানীয়রা।
দৃশ্যটি ঢাকার ধামরাই উপজেলার পৌর অঞ্চলে। এই অঞ্চলের কয়েকটি ওয়ার্ডে রয়েছে বানরের রাজত্ব। প্রায় দেড় শতাধিক বানরের বাস সেখানে। গাছ-গাছালি, ঘরের টিনের চাল বা পাকা ভবনের ছাঁদজুড়ে আনাগোনা তাদের।
সম্প্রতি এলাকা ঘুরে দেখা মেলে বানরের। গোয়ারীপাড়া এলাকায় কথা হয় খাতুনের সঙ্গে। শিশুকাল থেকেই বানর দেখে আসছেন তিনি। গাছের ফল, ঘরের খাবার, সব খেয়ে ফেলে। তবে প্রায় ৫০ বছরের জীবনে কখনোই তিনি বানর আর মানুষের ঝগড়া দেখেননি। বরং অনেক সময় মাছ বা সবজি কাটার সময় ছোট্ট শিশুর মতো পাশে বসে থাকে বানরের পাল। কোনো সমস্যা হয় না। এভাবেই তারা অভ্যস্থ হয়ে উঠেছেন বলে জানান।
জাহেদা বলেন, বানরগুলো আমাদের সঙ্গে মিলেমিশেই থাকে। মাঝে মাঝে খুব জ্বালায়। কিন্তু এলাকার মানুষ কেউ কিছু বলে না। খাবারের খোঁজেই মূলত অনেক সময় বানর ক্ষিপ্ত হয়। তবে খাবার পেলেই শান্ত।
সাবিয়া নামে আরেক গৃহবধূ বলেন, বানর যাতে ঘরে না ঢোকে সেজন্য জানালার গ্রিল ছোট করে কাটছিলাম। কিন্তু এখন বড় বানর শিশু বানরকে ওই ফাঁক দিয়ে ঘরে পাঠিয়ে দেয়। তারা ঘরের বিস্কুট, ফল, কলা, আপেল সব নিয়ে যায়। আর ছাদে তো কিছু দেওয়াই যায় না। চট করে টেনে নিয়ে যায়।
উপজেলার পাঁচ পীরের মাজার এলাকায় বসে আড্ডা দিচ্ছিলেন স্থানীয় কয়েকজন যুবক। জানালেন, বানর কখনো মানুষের ওপর হামলা করে না। তবে নিজেরা অনেক সময় মারামারি করে। এদের মধ্যে দলবদ্ধ হয়ে চলাচল করার স্বভাব রয়েছে। মূলত তিনজন দলনেতার নেতৃত্বে একেকটি এলাকায় থাকে বানরগুলো। প্রতিটি দলে ৫০-৬০টি করে বানর রয়েছে। একটি দল আরেক দলের এলাকায় প্রবেশ করলে ঝগড়াঝাটি শুরু হয়। তবে দলনেতাদের যদি কোনো মানুষ সরে যাবার ইশারা দেয় তারা নিজের এলাকায় চলে যায়।
দক্ষিণপাড়া এলাকার বাসিন্দা রোমান মিয়া বলেন, বানরগুলো একেকটা দলে বাস করে। কেউ কারো এলাকায় ঢুকলে ঝগড়া লেগে যায়। এজন্য সবাই যার যার এলাকায় থাকে।
লোকালয়ে বাস করলেও মানবসৃষ্ট কোনো রোগ যেমন বানরদের স্পর্শ করেনি, তেমনি বানরের কোনো রোগও মানুষের মধ্যে ছড়ায়নি বলে জানান স্থানীয় বন কর্মকর্তা।
ধামরাই উপজেলা বন কর্মকর্তা আব্দুল মোতালিব বলেন, গত কয়েক বছর আগে বেশ কিছু বানর ধরে শারীরিক পরীক্ষা করানো হয়েছিল। কোনো বানরের মধ্যে মানুষের কোনো রোগ পাওয়া যায়নি। বানরের দ্বারা আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিতে আসা রোগি কখনো পাইনি বলে জানান ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসক তিতাস মাহমুদ।
বানরের সংখ্যা বাড়ে-কমে
উপজেলায় ঠিক কতগুলো বানর রয়েছে। সে বিষয়ে সঠিক কোনো পরিসংখ্যান দিতে পারেনি সরকারি কোনো দপ্তর। তবে গত কয়েক বছর আগে রীতিমতো বিলুপ্তির দিকে যাচ্ছিল ধামরাই শহরের এই ঐতিহ্য। এছাড়া সরকারিভাবে জাতীয় চিড়িয়াখানা ও উদ্যানের জন্য কিছু বানর ধরে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল। ছিলো খাবারের প্রচন্ড অভাব। পৌরসভার মেয়রের পক্ষ থেকে খাবার বিতরণ করা হলেও তা ছিল অপ্রতুল।
কিন্তু গত বছর জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে দিনপ্রতি ১ হাজার টাকা করে বরাদ্দ করা হয় বানরের খাবারের জন্য। এরপর সাম্প্রতিক সময়ে বাচ্চা বানর বৃদ্ধি পেয়েছে। ধামরাই উপজেলা বন কর্মকর্তা আব্দুল মোতালিবের কথায় উঠে এলো এমন তথ্য। তিনি বলেন, কয়েক বছর আগে বানরের প্রজনন কম ছিল। তবে এখন তারা পর্যাপ্ত খাবার পাচ্ছে। আমরা নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ করছি। এখন প্রায় দেড় শতাধিক বানর আছে। আমরা ধামরাইয়ের এই ঐতিহ্য বাঁচাতে বদ্ধ পরিকর।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।