জুমবাংলা ডেস্ক : বহু বছর ধরে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কশীট থেকে শুরু করে সার্টিফিকেট জাল করত একটি চক্র। একেকটি সার্টিফিকেট ৫০ হাজার থেকে শুরু করে চার লাখ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা হতো।
এই চক্রের চার সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ঢাকার মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। এদের একজন বন্ধ হওয়া একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালক ছিলেন।
ঢাকার রামপুরা এলাকার একটি বাড়ির ক্ষুদ্র একটি কক্ষে বসেই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের, শিক্ষা বোর্ডের নম্বরপত্র ও সনদপত্র দেয়া হতো। বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার অভিযান চালিয়ে এই চারজনকে গ্রেফতার করেছে ডিবির লালবাগ জোনাল টিম।
ডিবির উপ-পুলিশ কমিশনার মশিউর রহমান বলেন, ‘এই চক্রটি অনেকদিন ধরেই বাংলাদেশের বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সার্টিফিকেট, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বোর্ডের নম্বরপত্র ও সনদপত্র জাল করে বিপুল টাকার বিনিময়ে বিক্রি করছিল। এদের সাথে কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তারাও জড়িত ছিলেন। ‘
যেভাবে জাল করা হতো সনদ
পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বোর্ড বা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সংগ্রহ করা মূল কাগজ দিয়েই জাল সনদ তৈরি করা হতো। এই চক্রটি দুই ধরনের সনদ বিক্রি করত। যেসব সনদ যাচাই করতে হবে না, সেগুলো ৫০ থেকে ১ লাখ টাকার মধ্যে বিক্রি করা হতো। কিন্তু যেসব সনদ ভেরিফিকেশন করা হতে পারে, সেগুলো ৩ থেকে ৪ লাখ টাকায় বিক্রি করা হতো। এক্ষেত্রে কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তাদের সাথে যোগসাজশে অনলাইনে অন্তর্ভুক্ত করা হতো, যাতে অনলাইন ভেরিফিকেশনে সেটার সত্যতা পাওয়া যায়।
ডিবি কর্মকর্তা মশিউর রহমান বলছেন, ‘নিরাপত্তার বৈশিষ্ট্য সম্বলিত আসল কাগজে এই সার্টিফিকেটগুলো এমনভাবে করা হতো যে, আসলের সাথে কোনো পার্থক্য পাওয়া যায় না। দেশে বা বিদেশে কেউ যাচাই করার চেষ্টা করলে সাধারণত অনলাইনেই করে থাকে। এত নিখুঁতভাবে করা হতো আর অনলাইনে ভেরিফিকেশন করতে পারায় এটি যে জাল, তা আর ধরা যায় না।’
এভাবে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতে যেখানে কয়েক বছরে ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা লাগে, মাত্র ৩ থেকে ৪ লাখ টাকায় সেই সনদ জোগাড় করে নিতো এক শ্রেণির প্রতারক চক্র। গত কয়েক বছরে এভাবে কয়েক হাজার সনদ, প্রত্যয়ন পত্র, নম্বরপত্র জাল করে বিক্রি করা হয়েছে। যার মাধ্যমে তারা কোটি কাটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এসব সনদ নিয়ে অনেকে দেশের বাইরেও পড়তে চলে গেছেন বলে পুলিশ জানতে পেরেছে।
পুলিশের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই চক্রের সাথে জড়িত বোর্ড ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজনের নাম তারা জানতে পেরেছেন। এখন তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা করা হচ্ছে।
এর ফলে যারা এসব জাল সনদ নিয়ে বিদেশে চলে যাচ্ছেন বা দেশে চাকরি নিয়েছেন, সেখানকার কর্ম পরিবেশ নষ্ট করার পাশাপাশি দেশের ভাবমূর্তি সঙ্কট তৈরি হচ্ছে বলে কর্মকর্তারা বলছেন।
বাংলাদেশের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদফতর গত জানুয়ারিতে একটি তদন্তে ৬৭৮ জন শিক্ষকের জাল সনদ শনাক্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করেছে। এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়, বোর্ড, শিক্ষক নিবন্ধনসহ বিভিন্ন ধরনের জাল সনদ রয়েছে।
কর্তৃপক্ষ কী বলছে?
পুলিশের তদন্তে দেখা গেছে, দেশের কয়েকটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান জাল সনদ চক্রের সাথে জড়িত। তারা অর্থের বিনিময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনলাইন তালিকায় এসব সনদ অন্তর্ভুক্ত করত।
বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন বলছেন, এখনো তাদের কাছে এই বিষয়ে কোনো অভিযোগ আসেনি। তবে অভিযোগ বা পুলিশের তদন্তের বিস্তারিত পেলে তারা ব্যবস্থা নেবেন।
কমিশনের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের পরিচালক মো: ওমর ফারুক বলেন, ‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তো নিজেদের মতো করে সনদ দিয়ে থাকে। এখনো সেটা পুরোপুরি নজরদারি করা সম্ভব হয় না। তবে যে জালিয়াতির কথা বলছেন, সে বিষয়ে অভিযোগ আসলে অবশ্যই বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী আমরা ব্যবস্থা নেবো।’
তিনি বলেন, জুলাই নাগাদ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে অটোমেশনের আওতায় আনার যে প্রক্রিয়া চলছে, সেটা কার্যকর হলে এই ধরনের প্রবণতা কমে যাবে বলে তারা আশা করছেন। কারণ তখন শিক্ষার্থী ভর্তির সাথে মিলিয়ে সনদ বিতরণের তথ্য নজরদারির মধ্যে নিয়ে আসা যাবে।
বাংলাদেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একটি সমিতি অ্যাসোসিয়েশন অব প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ।
এই সংগঠনের একজন পরিচালক বেলাল আহমেদ বেলাল আহমেদ বলেন, ‘এসব ক্ষেত্রে মূল ব্যবস্থা নেয়ার দায়িত্ব আসলে ইউজিসির (ইউনিভার্সিটি মঞ্জুরি কমিশনের)। তবে এ ধরনের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আসলে অবশ্যই আমরা খতিয়ে দেখবো এবং সত্যতা পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
সূত্র : বিবিসি
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।