জুমবাংলা ডেস্ক : অভাবের সংসার, চারিদিকে হাহাকার। সংসারের টানাপোড়েনে লেখাপড়া না জানা সত্ত্বেও হন্যে হয়ে দিগ্বিদিক খুঁজতে থাকেন একটি কাজ। অসুস্থ স্বামী কোনওদিন কাজ করতে পারলে সংসারে খাবার জোটে, না করলে উপোস থাকতে হয়।
এরইমাঝে শুনেছেন, গার্মেন্টসে চাকুরি করে সংসার চালাচ্ছে নারীরা। সেই চাকুরির খোঁজে সোনারগাঁয়ের কলতাপড়া থেকে ছুটে আসেন বন্দরের মদনপুরে। সেখানে সবাই অপরিচিত। দিশেহারা হয়ে পড়েন ওই গৃহবধূ। এক পর্যায়ে পরিচয় হয় এক অজ্ঞাত এক যুবকের সাথে। চাকুরি দেয়ার আশ্বাস দেয় সে।
ওই যুবক তাকে বলে যে, সে মদনপুরে ইপিলিয়ন গার্মেন্টসে চাকুরি করে। সেখানে তাকে চাকুরি নিয়ে দিবে। এক পর্যায়ে চাকুরি দেয়ার কথা বলে তাকে নিয়ে যায় মদনপুরের ফুলহরস্থ জনৈক হাজী আলাউদ্দিন মিয়ার টিনসেড ঘরের পূর্ব পাশের এক খালি ঘরে।
সেদিন ছিলো মঙ্গলবার (৯ ফেব্রুয়ারি)। ওইদিন সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বিকেল পর্যন্ত আটকে রেখে গৃহবধূকে জোরপূর্বক একাধিকবার ধর্ষণ করে অজ্ঞাত ওই যুবক। সেখান থেকে ছাড়া পেয়ে কী করবেন- ভেবে পাচ্ছিলেন না তিনি। ছুটে গেলেন বন্দর থানায়। সবকিছু শুনে পুলিশ তাকে আশ্বস্ত করলো।
অভিযুক্তের নাম জানতে না পারায় অজ্ঞাতনামা আসামি করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা রুজু করেন ওই গৃহবধূ। তাৎক্ষণিকভাবে বন্দর থানার অফিসার ইনচার্জ দিপক চন্দ্র সাহার নেতৃত্বে পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) তারিকুল ইসলাম, পুলিশ পরিদর্শক আজিজুর রহমান ও এসআই সিরাজ-উদ-দৌলাসহ পুলিশ মামলার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
এরপর প্রাপ্ত তথ্যের সূত্র ধরেই শুরু হয় তদন্ত। চলতে থাকে প্রযুক্তির সাথে পুলিশের বুদ্ধিদীপ্ত তদন্ত কৌশল। ধর্ষক শনাক্তকরণ ও তার অবস্থান জানার নিরন্তর চেষ্টা চলছে দিনরাত। শেষ পর্যন্ত মদনপুরস্থ ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের আশপাশে সমস্ত সিসি ক্যামেরা ফুটেজ সংগ্রহ করে অভিযুক্তকে শনাক্তকরণে ডাকা হয় নির্যাতিতা ওই গৃহবধূকে।
তার মাধ্যমে অভিযুক্তকে শনাক্ত করা গেলেও জানা যায়নি তার নাম ঠিকানা। আবারও পাল্টে যায় তদন্তের কৌশল। সিসি ফুটেজের ছবি নিয়ে মাঠে নেমে পড়ে পুলিশ। এবার ওই আসামির পোশাক দেখে তাকে শনাক্ত করেন এক হোটেল ব্যবসায়ী। হোটেলে বিনামূল্যে খাবার খাওয়ার সময় ওই অজ্ঞাত ব্যক্তির নাম্বারটি সংগ্রহ করেন হোটেল মালিক।
পরে ওই মোবাইল নাম্বারের সূত্র ধরে তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে আসামির অবস্থান জেনে রুপগঞ্জ, সোনারগাঁ ও বন্দর থানায় ব্যাপক অভিযান চালায় পুলিশ। অভিযানের এক পর্যায়ে শনিবার (১৩ ফেব্রুয়ারী) দুপুরে রূপগঞ্জ থানা এলাকায় একটি টার্গেটকে নির্দিষ্ট করে অভিযান চালায় বন্দর পুলিশের একটি চৌকস দল।
সেখান থেকে গ্রেফতার করা হয় অভিযুক্তকে। তার নাম মো. বাদশা ওরফে সোহাগ ওরফে ছোট (৩৫)। সে ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলার বাঞ্চারামপুর থানার মো. আব্দুল মতিন ওরফে মতির ছেলে। গ্রেফতারের পর সে ঘটনার বিষয়ে স্বীকারোক্তি দিয়েছে এবং ভিকটিম কর্তৃক শনাক্ত হয়েছে।
এ ব্যাপারে বন্দর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) দিপক চন্দ্র সাহা জানান, আমরা অত্যন্ত সুচারুভাবে তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে ব্যাপক অভিযান চালিয়ে অভিযুক্তকে শনাক্ত করে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছি। পুলিশ সুপারের নির্দেশে তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) সিরাজ-উদ-দৌলার সহযোগিতায় কাজ করেন বন্দর থানার অন্যান্য কর্মকর্তা ও জেলা আইসিটি শাখা।
ঘটনার স্থান মদনপুর মোড় এলাকাটি অত্যন্ত জনবহুল এলাকা। আসামি শনাক্ত করতে অনেক চেষ্টা করে একটি ছোট্ট ইঙ্গিত পাওয়া যায়। এরপর তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় পুলিশের বুদ্ধিদীপ্ত তদন্ত কৌশলে অজ্ঞাত আসামি শনাক্ত করে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় তদন্তকারী দল।
এদিকে, একটি জনবহুল এলাকায় এহেন ঘটনায় যেমন হতবাক হয়েছিল, তেমনই দ্রুত আসামি শনাক্ত ও গ্রেফতার হওয়ায় পুলিশকে সাধুবাদ জানিয়েছেন এলাকার সাধারণ মানুষ।
এছাড়াও অভিযানের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন পুলিশ সুপার জনাব মোহাম্মদ জায়েদুল আলম, পিপিএম (বার)।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।