২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে সুইডেনের নির্বাচনের প্রায় তিন সপ্তাহ আগের ঘটনা। সুইডেনের সংসদে বসে রাজনীতিবীদেরা জলবায়ু নিয়ে কথা বলেছেন। শুধু সুইডেনে নয়, বিশ্বের বিভিন্ন সংসদ ভবনে হাজার হাজার রাজনীতিবিদ জলবায়ু নিয়ে আলোচনা করেছেন। সেগুলোর কোনোটিই কোনো ফল দেয়নি।
বিষয়টি খেয়াল করে সুইডিশ কিশোরী গ্রেটা থুনবার্গ। সে সময় ওর বয়স ছিল মাত্র ১৫ বছর। গ্রেটা ভাবে, জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে তার নিজের কিছু একটা করতে হবে, যার মাধ্যমে পরিবর্তন আসবে। বিশেষ করে শিশুদের কথা সবাইকে জানাতে হবে। রাজনীতিবিদদের এই কথাটা মনে করিয়ে দিতে হবে যে জলবায়ু পরিবর্তন এখন একটি জরুরি ব্যাপার। অন্য সবকিছু অপেক্ষা করতে পারে, কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তন থেমে থাকছে না বা থাকবে না।
গ্রেটার বয়সী সব সুইডিশ শিশুদের মতো করে গ্রেটার সেদিন স্কুলে যাওয়ার কথা। কারণ সুইডেনে ছুটি আগস্টে শেষ হয়ে আবার ক্লাস শুরু হয়ে যায়। তা না করে গ্রেটা সাইকেলে চেপে শহরের কেন্দ্রে সংসদ ভবনের সামনে হাজির হয়। স্কুল কামাই করে বসে থাকে। সেই দিন—২০ আগস্ট ২০১৮, সোমবার গ্রেটা স্কুল ধর্মঘট শুরু করে।
সুইডেনের দক্ষিণের একটি ছোট শহর লিংকোপিংয়ে। একদল লোক গ্রেটাকে সমর্থন করতে চায়। তাই তারা শহরের কেন্দ্রে একটি ফোয়ারার পাশে জড়ো হয়। গ্রেটা যেমন প্রতিবাদের সময় হাতে একটি প্ল্যাকার্ড নিয়ে এসেছিল, একইভাবে তারাও প্ল্যাকার্ড নিয়ে আসে। একটি প্ল্যাকার্ডে ছিল সাইকেলের একটি ছবি। ছবিটি এসেছে রোম থেকে। সাইকেলের প্যাডেলের জায়গায় লেখা ছিল: ধন্যবাদ গ্রেটা! আমরাও তোমার পাশে আছি!
আন্তর্জাতিক মনোযোগ আকর্ষণ করে গ্রেটার ধর্মঘট। নির্বাচনের পর আবার সে স্কুলে ফিরে এল। কিন্তু ধর্মঘটের জন্য শুক্রবারের ক্লাস বাদ দিয়ে দিল। এই দিনগুলোকেই বলা হয় ‘ভবিষ্যতের জন্য শুক্রবার’ (ফ্রাইডেস ফর ফিউচার)। গ্রেটার ধর্মঘট বিশ্বজুড়ে হাজার হাজার শিক্ষার্থীকে ভবিষ্যতের জন্য তাদের নিজস্ব শুক্রবারে ধর্মঘটে অংশ নিতে অনুপ্রাণিত করে। বেলজিয়াম, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফিনল্যান্ড, ডেনমার্ক, ফ্রান্স এবং নেদারল্যান্ডসের মতো দেশে ধর্মঘট অনুষ্ঠিত হয়। এরপর সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে এ আন্দোলন।
২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে নিউইয়র্কে জাতিসংঘের একটি জলবায়ু অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিল গ্রেটা। যে অনুষ্ঠানে সে একটি দূষণমুক্ত ইয়টে ভ্রমণ করে যোগ দেয়। এই অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দেওয়ার সময় একটি আবেগপূর্ণ মন্তব্য ভাইরাল হয়। গ্রেটা বলে, ‘আপনার ফাঁকা বুলি দিয়ে আপনি আমার স্বপ্ন ও শৈশব চুরি করেছেন। আমরা একটি মহাবিলুপ্তির শুরুতে আছি। আপনি যেসব কথা বলতে পারেন, তা হলো টাকা আর সারাজীবনের অর্থনৈতিক বৃদ্ধির রূপকথার গল্প।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।