পঞ্চমবারের মতো আকাশে উড়ল বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী রকেট স্টারশিপ। এর মধ্যেই এই নভোযান একটা রেকর্ড করে ফেলেছে। এই প্রথম কোনো রকেট নিরাপদে লঞ্চপ্যাডে অবতরণ করেছে। উঁহু, অবতরণ বলা ভুল হলো। লঞ্চপ্যাডের দুটো রোবটিক বাহু শূন্যে থাকতেই লুফে নিয়েছে রকেটটিকে নিরাপদে। গত ১৩ অক্টোবর, রোববার স্টারশিপের এই ঝুলন্ত-অবতরণকে বলা হচ্ছে ঐতিহাসিক ঘটনা।
কেন এটি ঐতিহাসিক? কারণ, এর আগে কখনো কোনো রকেট এভাবে ঝুলন্ত-অবতরণ করেনি। আগে বুস্টার রকেটগুলো মূল নভোযানকে মহাকাশে ছুড়ে দিয়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেত। বিচ্ছিন্ন এই বুস্টারগুলো সাধারণত মহাসাগরে এসে পড়ত। পরে সে অংশ ফিরিয়ে আনা হতো জাহাজের সাহায্যে। যদিও তা বেশির ভাগ সময় ব্যবহার করা যেত না।
কিন্তু এবার আর সাগরে নয়, সরাসরি লঞ্চপ্যাডের রোবটিক বাহুর মুঠোয় বসে গেছে রকেটটি। এরপর ধীরে ধীরে বসে পড়েছে লঞ্চপ্যাডের নির্দিষ্ট স্থানে। মানে, উৎক্ষেপণের সময় প্যাডে রকেট যেভাবে থাকে, ঠিক সেভাবে আবার জায়গা মতো বসেছে। এটাকে নানা কারণে বলা হচ্ছে বিশাল অর্জন।
স্পেসএক্সের এই রকেটকে বলা হচ্ছে ইতিহাসের সবচেয়ে শক্তিশালী রকেট। প্রায় ৪০০ ফুট লম্বা রকেটটি দুটি অংশ। সুপার হেভি বুস্টার ও স্টারশিপ। সুপার হেভি বুস্টারের ওপর বসানো হয়েছে স্টারশিপ। স্টারশিপকে মহাকাশে পাঠিয়ে সুপার হেভি বুস্টার ফিরে এসেছে পৃথিবীতে।
অনেকদিন ধরেই লঞ্চ সিস্টেম পুনরায় ব্যবহারের পরিকল্পনা করছে স্পেসএক্স। বলা উচিৎ, পরিকল্পনা করছেন স্পেসএক্সের প্রতিষ্ঠাতা ইলন মাস্ক। এবার সেই লক্ষ্যে মাস্ক ও তাঁর প্রতিষ্ঠান পুরোপুরি সফল। কারণ, শূন্যে থাকতেই এভাবে খপ করে লুফে নেওয়ার ফলে রকেটটির কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। সুন্দরভাবে পরে এটি বসে পড়েছে নির্ধারিত জায়গায়। ফলে খরচও বেঁচে গেছে অনেক। ভবিষ্যতে রকেট উৎক্ষেপণে খরচ অনেকটাই কমানো যাবে এই পদ্ধতিতে।
রকেট উৎক্ষেপণের ২ মিনিট ৪৫ সেকেন্ড পরে রকেট থেকে বুস্টার বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। আর উৎক্ষেপণের প্রায় ৭ মিনিট পরে বুস্টারটি যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসের বোকা চিকা অঞ্চলের লঞ্চপ্যাডে ফিরে আসে। ফিরে আসার সময় বুস্টারের গতি কমানো হয়, যাতে বিস্ফোরণ না ঘটে। এরপর ধীরে ধীরে ৪৮০ ফুট লম্বা ল্যান্ডিং টাওয়ারের কাছে আসে বুস্টারটি। তখন ল্যান্ডিং টাওয়ারটি যান্ত্রিক হাতের সাহায্যে বুস্টারটি ধরে ফেলে। যেন কোনো ফিল্ডার ক্যাচ ধরল! স্পেসএক্সের প্রকৌশলীরা মনে করছেন, এ দিনটি ইতিহাসের পাতায় লিখে রাখার মতো।
প্রতিষ্ঠানটির কোয়ালিটি সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ব্যবস্থাপক কেট টাইস বলেছেন, ‘এটা নিছক পাগলামি। প্রথমবারের চেষ্টায় আমরা সফলভাবে সুপার বুস্টারটি ফিরিয়ে আনতে পেরেছি। মানবজাতির জন্য এটা ঐতিহাসিক এক দিন।’ এর গুরুত্ব পাঠক হয়তো ইতিমধ্যেই বুঝতে ফেলেছেন। একটি হলো, এর মাধ্যমে বুস্টার নতুন করে বানানোর খরচ বেঁচে যাচ্ছে। আবার বুস্টার সাগরে নামলে সেখান থেকে লঞ্চপ্যাডে বয়ে আনার যে খরচ, বেঁচে যাচ্ছে তাও। তা ছাড়া স্টারশিপ মূলত তৈরি করা হয়েছে চাঁদ ও মঙ্গল গ্রহে বসতি স্থাপনে সহায়তার জন্য।
আর চাঁদে বা মঙ্গলে সাগর বা এরকম কোথাও বুস্টার ফেলা বা সমতল লঞ্চপ্যাড বানানোর সমস্যা থেকে চিরস্থায়ীভাবে মুক্তি মিলল এ সমাধানের কল্যাণে। হ্যাঁ, এর মানেটা হলো, কোনো গ্রহ বা উপগ্রহে একবার এরকম লঞ্চপ্যাড ও রোবটিক বাহু বসিয়ে দিলেই হলো। এরপর সেসব জায়গায় গিয়ে অবতরণের ব্যাপারে দুশ্চিন্তা অনেকখানিই কমে যাবে মানুষের।
এই রকেটটি দ্রুত পুনরায় ব্যবহার করা যায়। অত্যন্ত শক্তিশালীও বটে। ২০২৬ সালের সেপ্টেম্বরে আর্টেমিস ৩ মিশনে ফের চাঁদে নামবে মানুষ। সেই মিশনে ব্যবহৃত হবে এই স্টারশিপ রকেট। এ ছাড়া শিগগিরই মঙ্গলযাত্রা করার ইচ্ছাও রয়েছে ইলন মাস্কের। বলা চলে, এসব লক্ষ্য সামনে রেখেই এসব পরীক্ষানিরীক্ষা চালাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।
এটা ছিল স্টারশিপের পঞ্চম পরীক্ষা। এর আগে ২০২৩ সালের এপ্রিল ও নভেম্বরে এবং চলতি বছর মার্চ ও জুনে মোট ৪ বার পরীক্ষা চালানো হয়েছিল। তবে বুস্টার শূন্যে লুফে নেওয়ার প্রচেষ্টা এবারই প্রথম। স্পেসএক্সের এই সফলতা তাই আশা জাগাচ্ছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।