১৯০৫ সালে আইনস্টাইনের আপেক্ষিক তত্ত্বের মাধ্যমে মহাবিশ্বকে ব্যাখ্যা করার নতুন দিগন্তের সূচনা হয়। এর আগে বিজ্ঞানীরা কেবল চারটি উপায়ে কোন ঘটনাকে ব্যাখ্যা করতেন। এসব ক্ষেত্রে স্থানিক দূরত্বের বিষয়টি প্রাধান্য পেত। কিন্তু আইনস্টাইন উপলব্ধি করতে পারেন যে, একটি ঘটনাকে বিভিন্ন মানুষ নানা দৃষ্টিভঙ্গি থেকে ব্যাখ্যা করে।
আপনি বিষুব রেখায় একটি ঘড়ি এবং মেরু রেখায় অন্য একটি ঘড়ি রাখলে উভয় ক্ষেত্রে আপনি ভিন্ন ধরনের সময় দেখতে পাবেন। বিষুব রেখায় যে ঘড়ি স্থাপন করা হয়েছে তা দ্রুত গতিতে চলবে। অন্যদিকে মেরু রেখায় যে ঘড়ি রাখা হয়েছে তা ধীরে ধীরে চলবে।
আইনস্টাইন এটা বুঝতে পেরেছিলেন যে, মধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে ঘড়ি ধীরগতিতে চলতে পারে। আইনস্টাইন এ থিওরি দেওয়ার পর কোন ঘটনার উপর এর প্রভাব আরো ভালোভাবে বুঝতে পারেন বিজ্ঞানীরা।
muon নামের একটি কণাকে উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা যেতে পারে। এটির ক্ষেত্রে সময় যেভাবে কাজ করে আমাদের ক্ষেত্রে তা ভিন্নভাবে কাজ করে। অর্থাৎ সময় উভয় ক্ষেত্রে ভিন্ন আচরণ দেখিয়েছে।
সময় প্রসারণের এ বিষয় নিয়ে ১৯৩২ সালে কেনেডিও থনডাইক এক্সপেরিমেন্ট করেছিলেন। স্পেসের বিভিন্ন দিকে আলোর গতি নিয়ে তারা গবেষণা করেন। তারা প্রমাণ করেছিলেন যে, লরেন্স ফ্যাক্টর হচ্ছে সময় প্রসারণের ক্ষেত্রে সবথেকে কারেক্ট ফ্যাক্টর।
১৯৪০ সালে রিলেটিভিটি ও সময় প্রসারনের সম্পর্কে নিয়ে আরো বিস্তারিত গবেষণা হয়। ১৯৭০ সালে পৃথিবীর দুই প্রান্তে ’ফ্লাইং ক্লক’ এর মাধ্যমে সময় প্রসারণ নিয়ে বড় পরিসরে গবেষণা হয়।
পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ টান মেরু অঞ্চলে অধিক থাকে ও বিষুব অঞ্চলে কম থাকে বিধায় সময় চলার ক্ষেত্রে এটি প্রভাব ফেলে। পর্যবেক্ষক এর গতি এবং লোকেশন অনুযায়ী সময়ের প্রসারণ আমাদের কাছে ভিন্নভাবে ধরা দেয়।
যুক্তরাষ্ট্রের নাভাল অবজারভেটরিতে অ্যাটমিক ঘড়ি নিয়ে একটি গবেষণা হয়। রিলেটিভিটি নিয়ে গবেষণাটি অসাধারণ ছিল। একটি বিমান আকাশের এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় উড়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে এবং সময়ের প্রসারনের সাথে আপেক্ষিক সম্পর্কের তুলনা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছিল।
পৃথিবী যেদিকে ঘোরে প্লেনটি সেদিকে গতি বাড়িয়ে উড়ছিল। মাটিতে যে ঘড়ি স্থাপন করা হয়েছিল তার সাথে বিমানের ঘড়ির সময় পর্যবেক্ষণ করা হয়। আবার পৃথিবী যেদিকে ঘুরে তারা বিপরীত দিকে বিমানটি উড়তে থাকে এবং গতি কমিয়ে দেওয়া হয়। দেখা যায় প্রথম ক্ষেত্রে মাটিতে অবস্থান করা ঘড়িটি দ্রুত চলছে। দ্বিতীয় ক্ষেত্রে বিমানের ঘড়িটি দ্রুত চলেছে।
এসব গবেষণার মাধ্যমে এটি শতভাগ প্রমাণিত হয় যে, গতি এবং মহাকর্ষীয় উপাদান নিয়ে আইনস্টাইনের ভবিষ্যৎবাণী সত্য ছিল। মহাবিশ্ব আপেক্ষতার উপর ভিত্তি করেই চলে। আমাদের দৈনন্দিন জীবনের ক্ষেত্রে এ কথাটি সত্য।