শুরু থেকেই দাবা বুদ্ধিমানের খেলা হিসেবে বেশি পরিচিত ছিলো। ৬৪ ঘরের এ খেলায় যথেষ্ট বুদ্ধি আর কৌশলের প্রয়োজন। তাই বুদ্ধির পরীক্ষা দিতে সে যুগেও বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল দাবা। সে যুগে ভারতের সাথে আরব ও পারস্যের (বর্তমানে ইরান) বাণিজ্যিক যোগাযোগ ছিল। বণিকদের হাত ধরে দাবা একসময় পারস্যে চলে যায়। সেখানে এর নতুন নাম হয় শতরঞ্জ। প্রায় একই সময় ভারত থেকে খেলাটা চীনযাত্রা করে। চীনারা এর নামকরণ করে জিয়ানকুই।
১২ শতকে পারস্যের বাদশা সালাউদ্দিনের শাসনামলে ইউরোপের ক্রুসেডাররা জেরুজালেম রক্ষার নামে দলে দলে ভিড় জমায় আরব ও পারস্যে। দীর্ঘদিন সেখানে থাকাকালে সেখানকার অনেক কিছুই আমদানী করতে থাকে ইউরোপে। এভাবে দাবাও ইউরোপে চলে যায়।
আবার স্পেনে মুসলিম মুর শাসনামলে দাবা ইউরোপসহ রাশিয়ার ছড়িয়ে পড়ে বলে ধারণা অনেকের। এখানেও সে নতুন নাম পায় ‘চেস’, যা পুরাতন ফরাসি ভাষা ‘echec’ (অর্থ চেক) থেকে উদ্ভুত। শুধু নামেই নয়, খেলাটার আরও অনেক কিছুই পরিবর্তিত হয়। এখানেই ক্যাথলিক ধর্মের প্রভাবে দাবায় বিশপ (ভারত ও বাংলাদেশে হাতি বা গজ নামেও পরিচিত) যুক্ত হয়। আরও পরে যোগ হয় রানি।
পরে ইউরোপীয়দের মাধ্যমে একসময় সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে, জনপ্রিয় হয়ে ওঠে দাবা। ১৯২৪ সালে দ্য ফেডারেশন ইন্টারন্যাশনাল ডেস চেস (এফআইডিই) গঠিত হয়। তারা দাবা খেলার আন্তর্জাতিক নিয়মকানুন নির্ধারণ ও নিয়ন্ত্রণ করে। এ সংস্থা আন্তর্জাতিক দাবা প্রতিযোগিতার আয়োজক। দক্ষতার ওপর ভিত্তি করে এফআইডিই খেলোয়ারদের ইন্টারন্যাশনাল মাস্টার ও গ্রান্ডমাস্টার হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। যেসব খেলোয়াড় প্রতিযোগিতায় সবার সেরা হয় তারাই গ্রান্ডমাস্টার।
অনেকেই হয়তো জানেন, বাংলাদেশ থেকে বেশ কজন এই খেলায় আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছেন। নিয়াজ মোর্শেদ বাংলাদেশের প্রথম গ্রান্ডমাস্টার। গত শতাব্দিতে দাবা খেলায় কম্পিউটারের ব্যবহার একে আরও জনপ্রিয় ও আলোচনার বিষয়বস্তুতে পরিণত করেছে। ১৯৯৬ সালে আন্তর্জাতিক গ্রান্ডমাস্টার গ্যারি কাসপারভ দাবা খেলেন ডিপ ব্লু নামের এক কম্পিউটারের সঙ্গে।
সে বারই প্রথমবারের মতো মানুষের প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড়ায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, তথা যন্ত্র। সেবার ডিপ ব্লুর সঙ্গে দাবা খেলায় কাসপারভ জিতে যান। ঠিক পরের বছর তিনি হেরে যান ডিপ ব্লুর কাছে। যন্ত্রের কাছে হেরে যাওয়ার এ ঘটনা বিশ্বজুড়ে আলোচনার জন্ম দিয়েছিল।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।